দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমে জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। বরফ যেন গলছেই না। উল্টে এখন জমাট বেঁধে কঠিন পাথরে পরিণত হয়েছে। কূটনৈতিক অঙ্গনে কান পাতলে শোনা যাবে একটাই কথা – কোনও কালেও কি এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এইরকম চরম উত্তেজনায় পরিণত হয়েছিল? কূটনৈতিক অঙ্গনে এটাও বলা হছে, এর জন্য দায়ী তারাই, যারা প্রতিবেশী দেশ হওয়ার পরেও দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজকর্ম করে এসেছে। সরকারের তরফে এই কাজ করা হয়েছে। সরকার এক সময়ে হয়ে উঠেছিল এই সব কুকীর্তির পৃষ্টপোষক। প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেছে, সরকার তাদের লাগাতার উৎসাহ দিয়ে গিয়েছে। উস্কানি দিয়েছে, মদত দিয়েছে। বিক্ষোভের সেই ধূমকে স্ফীত করতে সাহায্য করেছে। সযত্নে তাকে লালন করেছে, পালন করেছে। প্রতিবেশী দেশের কথা বলা ডাকাবুকো নেতারা সরকারের কাছে হয়ে উঠেছে নতুন যুগের ‘মুক্তিযোদ্ধা’। সরকার গত দেড় বছর ধরে এই সব যোদ্ধাদের বীরগাঁথাকে লিপিবদ্ধ করেছে। তাদের বীরত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে, সম্মান দিয়েছে। আর তারা ততবেশি আগ্রাসী হয়েছে। না হলে দেড় বছরে যার উত্থান উল্কা গতিতে, যে সব সময় প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে গলা-বুক, ছাতি ফুলিয়ে একের পর এক বক্তব্য রেখেছে, তাঁর মৃত্যুতে একটি সরকার প্রধানের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে ! সরকারের তরফ থেকে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয় ! এমনকী, তাঁর শেষকৃত্যে অংশ নিতে দেখা যায় সরকার প্রধান এবং তাঁর বেশ কয়েজন উপদেষ্টাকে।
আর যে দেশের বিরুদ্ধে এই সব কীর্তি, সেই ভারত কিন্তু এতোদিন চুপচাপ সহ্য করে গিয়েছে। কূটনৈতিক চ্যানেল মারফত তাদের বহুবার বোঝানোর চেষ্টা করছে। বার্তা দিয়েছে সংযত হওয়ার, সংযমী হওয়ার। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে তাদের যে দায়িত্ব পালনের কথা, সেই দায়িত্বের কথা তাঁদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রাজধর্ম পালনের। কিন্তু রাজধর্ম ত্যাগ করে তারা পরশুরামের ভূমিকায় উত্তীর্ন হয়েছে। হাইকমিশনারকে ডেকে বেইজ্জত পর্যন্ত করতে ছাড়েনি। সহ্য করার পালা এবার শেষ। সময় হয়েছে তাদের হাতে কলমে চরম শিক্ষা দেওয়া। দিল্লি এবার সেই তাদের সেই শিক্ষা দিতে চলেছে।
ভারত আগেই বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করেছে। দেখাদেখি বাংলাদেশও ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিল অনির্দিষ্টকালের জন্য। বন্ধ করে দিল সব ধরনের পরিষেবা। কূটনৈতিক মহলের মতে, এটা আসলে টিট ফর ট্যাট। ভারত যেহেতু বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, তাই বাংলাদেশও ভারতীয়দের জন্য ভিসা ইস্যু না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একে একে বন্ধ হচ্ছে দূতাবাসগুলোর দরজা। আগরতলা ও শিলিগুড়ির ভিসা সেন্টার মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হল। থমথমে পরিবেশ। বলা হচ্ছে এই টানাপোড়েনের সূত্রপাত দীপু চন্দ্র দাসের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। আগরতলায় কয়েদিন ধরে কিছু মানুষ, স্থানীয় কিছু সংগঠন বিক্ষোভ দেখিয়েছে বলে খবর। আর সেই খবর পদ্মা পেরিয়ে ওপারে চলে গিয়েছে। দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কনস্যুলার সেবা এবং ভিসা ইস্যু বন্ধ করে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কূটনৈতিক পর্যায়ে বলা হচ্ছে, এই সিদ্ধান্ত চরম অবনতির সংকেত। ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতে তাদের হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ হওয়ায় কোনওভাবেই আর নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। কলকাতায় বাংলাদেশে ভিসা অফিস চালু থাকলেও সেটি যে কোনও সময়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই অবস্থায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মিজোরামের কাছে একটি সেনাঘাঁটি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সেনাঘাঁটিতে থাকবে ১৭ মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর। শুধু তাই নয়, শিলচর এবং মিজোরাম ফ্রন্টিয়ারের অধীনে থাকা তিনটি ব্যাটিলিয়ন এখন বাঙ্কার এবং ভূগর্ভস্ত অস্ত্রাগার তৈরিতে চূ়ড়ান্ত ব্যস্ত। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কম্যান্ডার জেনারেল রামচন্দ্র তিওয়াড়ি সম্প্রতি বিএসএফ এবং অসম রাইফেলের কর্তাদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। বৈঠক হয়েছে মিজোরাম সীমান্তের সেনাঘাঁটিতে। সীমান্তে নজরদারির দায়িত্বে বরাবর ছিল বিএসএফ। এখন তাদের পাশাপাশি সেনারাও নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে।












Discussion about this post