বাংলাদেশে সেই সময় প্রধানমন্ত্রী পদে শেখ হাসিনা। অসমে আলফাদের বাড়বাড়ন্ত বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় সরকার চালায় সার্জিক্যাল স্ট্রাইক। আলফার মাথারা সীমান্ত পেরিয়ে চলে যান বাংলাদেশে। আর তাদের ইঁদুরের গর্ত থেকে বের করে আনেন হাসিনা সরকারের পুলিশ। জেলের ভাত খাইয়ে তারা তাদের দিল্লির হাতে তুলে দেয়। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছিলেন, সে কারণে অনেক দশক পর অসমের মানুষ নিশ্চিন্তে রাতে ঘুমতে পারছে।
কিন্তু বাংলাদেশ গত দেড় মাসে একের পর এক ভারত বিদ্বেষী কথাবার্তা শোনা গিয়েছে। ফলে শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকার দিন শেষ হয়েছে। একটা বিষয় লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ওই সব ভারত-বিরোধী কথাবার্তা এসেছিল বিচ্ছিন্নভাবে। কিন্তু এবার সেই বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি একজোট হয়েছে। ওসমান হাদির হত্যার প্রচেষ্টার পর দিল্লি বুঝতে পারছে, বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী রাজনৈতিক ঐক্য আরও একদফায় জোরদার হয়ে উঠেছে। নির্বাচনের আগে এমন একটা রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই ঐক্য ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যে লড়াই, সেই লড়াইকে তারা তুঙ্গে নিয়ে যাবে। তাঁর সর্বশেষ প্রমাণ হাসনাত আবদুল্লা।
কী বলেছেন জাতীয় পার্টির হাসনাতবাবু। তাঁর বক্তব্যের লক্ষ্য কিন্তু ভারত। গলার শিড়া ফুলিয়ে তিনি বলেছেন, ‘দেশের পরিবেশকে যারা অস্থিতিশীল করতে চাইছে, হাদি ভাইকে যারা হত্যা করেছে, নির্বাচন যারা বানচাল করতে চাইছে, সীমান্তে যারা আমাদের ভাইদেরকে বোনদেরকে মেরে ঝুলিয়ে রাখে, তাদের আশ্রয়ে এবং প্রশ্রয়দাতা, পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে ভারত। ভারতকে স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই – আপনারা যেহেতু তাদেরকে আশ্রয়, প্রশ্রয় দিচ্ছেন, কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই ভারতের যারা সেপারেটিস্ট আছে বাংলাদেশে আমরা তাদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে যে সেভেন সিস্টার্স রয়েছে, সেই সেভেন সিস্টার্সকে ভারত থেকে আলাদা করে দেব।’
এনসিপির এই নেতা আরও দাবি করেন, ‘হাসিনার পৃষ্ঠপোষক ভারত অস্ত্র, অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি পক্ষকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ভারতকে আর “পার্শ্ববর্তী দেশ” বলার সুযোগ নেই, অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।’ যদিও দলের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ‘হাসনাত আবদুল্লাহ ভারতের সেভেন সিস্টার্স নিয়ে শর্তযুক্ত যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা তাঁর নিজস্ব মতামত। দলের নয়। ’
হাসনাত একা নয়, তাঁর থেকে এক কাঠি উপড়ে উঠে সার্জিস আলমকে বলতে শোনা যায় বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাস থাকার কোনও প্রয়োজন নেই। তাঁর এই হুমকির প্রেক্ষিতে ঢাকায় ভারতের ভিসা আবেদন কেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত। নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত বলে খবর। বাংলাদেশের রাজধানীতে, যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত ভিসা সেন্টার বর্তমান পরিস্থিতিতে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। আপাতত সাময়িক ভাবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
ভারতের বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, বাংলাদেশের হাই কমিশনার মহম্মদ রিয়াজ হামিদুল্লাকে ভারত বিরোধী চরমপন্থী গতিবিধির কথা জানানো হয়েছে, যারা ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ভারতের বিদেশমন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে বলে, ‘বাংলাদেশ থেকে যে মিথ্যে ভাষ্য তৈরির চেষ্টা করছে চরমপন্থীরা, তা পুরোপুরি প্রত্যাখ্য়ান করছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বিষয় যে, সেখানকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনও তদন্তের নির্দেশও দেয়নি, সেই সক্রান্ত কোনও তথ্যপ্রমাণও দেওয়া হয়নি ভারতকে। বাংলাদেশের নাগরিকদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিবিড় ও বন্ধুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাশে ছিল ভারত, বাংলাদেশের উন্নয়নের সমর্থক থেকেছে ভারত। বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতাবস্থার পক্ষে আমরা। সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে, অবাধ, সুষ্ঠ,সার্বিক এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে আমরা। আশা করি, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করবে’।












Discussion about this post