রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশিতে মগ্ন ছিল।
সাধারণত জরুরি পরিস্থিতে সাড়া না দেওয়া শাসকদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বোঝাতে এই প্রবাদ ব্যবহার হয়। ৫৪ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ১৬ বছর বয়সে পঞ্চম সম্রাট হিসেবে অভিষিক্ত হন নিরো। ১০ বছর পর জুলাই মাসে অ্যান্টিমে (ইতালির সমুদ্রতীরবর্তী শহর আনজিও) ছুটি কাটাতে যান। ঠিক তখনই ভয়াবহ আগুন রোমে, টানা ছয় দিন জ্বলে–পুড়ে রোমের ৭০ শতাংশ ধ্বংস হয়। গৃহহারা হয় অর্ধেক মানুষ। দাবি করা হয়, রোমান সম্রাটদের মধ্যে সব চেয়ে ‘নিষ্ঠুর’ ও ‘পাগলাটে’ শাসক ছিলেন নিরো। রোম যখন জ্বলে-পুড়ে ছারখার হচ্ছিল সেই সময় নিরো একমনে বাঁশি বাজিয়ে চলেছিলেন।
ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশেও পাওয়া গিয়েছে এক নিরোকে। দেশ জ্বলছে। অথচ তাঁর কোনও তাপ-উত্তাপ নেই। দেশের মাটি হয়ে উঠেছে বিদ্বেষের মাটি। তাঁর কোনও হেলদোল নেই। ভারতের উদ্দেশ্যে সে দেশের বেশ কয়েকজন নেতা একের পর এক হুমকি দিয়ে চলেছেন। তিনি নিরাকার ব্রহ্মার মতো বসে রয়েছেন। ভারতের সেভেন সিস্টার্স কেড়ে নেওয়ার হুমকি এসেছে। তিনি কানে তুলো গুঁজে বসে রয়েছেন। আসলে তিনি নিজেই তো ভারত-বিদ্বেষী এক নেতা, যিনি নিজেই চিনের মাটিতে দাঁড়িয়ে দিল্লির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন। তা বলে তো সাউথব্লক হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। তাই, খুব শান্ত মাথায় সাউথব্লক মোক্ষম চাল চেলেছে। আর দিল্লির সেই চালে পদ্মাপারে যে সব নেতা কিছুদিন আগে মাইক হাতে নানা ধরনের হুমকি দিয়েছেন, টিভির টক শো-তে জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়েছেন, সেই সব নেতাদের এখন মেরুদণ্ড দিয়ে ঠাণ্ডা রক্তের স্রোত বইতে শুরু করেছে। গলায় ফাঁস লেগে গিয়েছে।
এই অবস্থা শুধু তাঁদের বা সরকারের নয়, উত্তরপাড়ার উর্দিধারীদের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে। ঢাকার মনে হয়েছিল, দিল্লি হয় তো সৌভ্রাতৃত্ব এবং শান্তির দোহাই দিয়ে চুপচাপ সহ্য করে যাবে। ভারত তো বড়ো ভাই। তাই সব সহ্য করে যাবে। তাঁদের সেই ধারণায় জোর ধাক্কা মেরেছে সাউথব্লক। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে শিলচর এবং মিজোরামে ১৭ মাউন্টেন কর্পস মোতায়েন করা হয়েছে। এই ব্যাটিলিয়নের ক্ষমতা কতটা, সেটা গোটা দুনিয়া জানে। এমনকী বাংলাদেশও জানে। এই বাহিনীর বৈশিষ্ট্য হল, এরা শত্রুর আসার অপেক্ষায় থাকে না। শত্রুর ডেরায় ঢুকে, রাজনাথ সিংয়ের ভাষায় – ঘুসকে মারেঙ্গে, বুলেট দিয়ে তাঁদের এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয়।
একটা বিষয় লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, পদ্মাপারে অদ্ভূত একটা ট্রেন্ড দেখা গিয়েছে। যে যত বেশি ভারত-বিরোধী কথা বলবেন, তিনিই বড়ো নেতা হবেন। সে কারণে, হাতে মাইক নিয়ে, টিভির টক শোতে তারা একের পর এক ভারত-বিরোধী বক্তব্য দিয়ে এসেছেন। সেভেন সিস্টার্স কেড়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন অফিস ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছেন। ঢাকার মনে হয়েছিল এবং বিশ্বাসও করেছিল, খুব বেশি হল সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্করের দফতর একটা নোট জারি করে প্রতিবাদ জানাবে। নিন্দা করবে।
সাউথব্লক এবার পাশার চাল উল্টে দিয়েছে। বার্তা দিয়েছে, ভারতের চুপচাপ বসে থাকার অর্থ এমন একটা পদক্ষেপ করা, যে পদক্ষেপে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সেই সব নেতারা এক কোপে জবাই করা যাবে। কেউ যদি প্রতিবেশী দেশের সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নচিহ্নের মধ্যে ফেলে দেয়, তখন সেই দেশ তখন প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কোনওভাবেই বন্ধুসুলভ আচরণ করতে পারে না। কূটনৈতিকস্তরেও এর জবাব হতে পারে না। জবাব হতে পরে সামরিক পদক্ষেপের মধ্যে দিয়েছে। ১৭ মাউন্টেন কর্পস মানে পূর্ণ বিনাস। এদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এমনভাবে যাতে তারা পাহাড় এবং অত্যন্ত দুর্গম অঞ্চলে অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে শত্রুর ডেরায় ঢুকে চোখের পলকে তাঁদের তছনছ করে দেয়। এর বাহিনীর বৈশিষ্ট হল কুইক রেসপন্সের দক্ষতা। সীমান্তে এদের পাঠানোর অর্থ, ভারত আর ওই অঞ্চলকে শান্তির অঞ্চল হিসেবে দেখতে নারাজ।












Discussion about this post