আরাকান আর্মির আতঙ্কে বাংলাদেশ। ৪০ হাজার বিদ্রোহী আরাকানের নজর বাংলাদেশ সীমান্তে। মংডুর পর আরও বেশ কিছু অঞ্চল দখল করতে চলেছে মায়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী। তবে কি পুরো দমে বাংলাদেশ মুখী আরাকান? আর অন্যদিকে বাংলাদেশ কি বৈঠকমুখী?
সূত্রের খবর, আরাকান আর্মিকে বাংলাদেশের তরফে একটি বৈঠকের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আরাকান যখন বাংলাদেশে তাঁদের প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে তখন তার জেরেই চাপ বাড়ছে বাংলাদেশের অন্তরবর্তী সরকারের। আর এই আবহে বৈঠক করার দিকেই ঝুঁকছে বাংলাদেশ। তারা জানাচ্ছে যুদ্ধ নয় শান্তির জন্যই এই বৈঠকের প্রস্তাব।
বাংলাদেশের টেকনাফ লাগোয়া মংডু শহর আগেই বিদ্রোহীদের দখলে গিয়েছিল। এবার সেই রাজ্যেরই আরও একটি শহর দখল করল আরাকান আর্মি। আর সেই শহরেই ছিল মায়ানমারের জুন্টা সরকারের সামরিক দল।
মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের আন শহরও পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে আরাকান আর্মি। আরাকান বিদ্রোহীরা এক বিবৃতি প্রকাশ করে এমনই দাবি করেছে। এর আগে বাংলাদেশের টেকনাফ লাগোয়া মংডু শহরটি দখল করেছিল আরাকান আর্মি। এবার মধ্য রাখাইনের এই আন শহরটি দখল করল আরাকানরা। এই আন শহরেই মায়ানমারের জুন্টার আঞ্চলিক সামরিক সদর দফতর ছিল।
প্রসঙ্গত, মায়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি কিছুদিন আগেই মায়ানমারে মংডু এলাকা দখল করেছে। এর ফলে বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং আগে আসা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা জোড়ালো হয়েছে।
সম্প্রতি মায়ানমারে আরও একটি এলাকা চলে গেছে আরাকান আর্মির দখলে। ফলে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা দখল হওয়ায় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সমস্যা বাড়তে পারে।
মংডু দখলের পরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের রোহিঙ্গা সংক্রান্ত বিশেষ দূত খলিলুর রহমান জানিয়েছিলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রক আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছে ঢাকা। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে উদ্যোগী হচ্ছে, যাতে অন্তত সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। তবে গভীরভাবে বিবেচনা না করে এই বিষয়ে নির্ণায়ক কোনও পদক্ষেপ হবে না বলে জানান তিনি। বিদ্রোহীরা সীমান্ত দখলের পরে বাংলাদেশ সরকার টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ফেরি চলাচল বন্ধ রেখেছে। ফলে সার্বিক অসুবিধায় পড়েছেন টেকনাফের স্থানীয়রা।
সীমান্তের নিকটবর্তী মায়ানমার মিলিটারির ওয়েস্টার্ন কমান্ড দখল করলো আরকান আর্মি। এই ওয়েস্টার্ন কমান্ডের সদর দফতর বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া রাখাইন প্রদেশে অবস্থিত। তাই এই পরিস্থিতিতে চাপে পড়ছে বাংলাদেশ তা বলাই যায়।
একটি বিবৃতিতে আরাকান আর্মির মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই রাখাইন প্রদেশে পুরো ওয়েস্টার্ন মিলিটারির সদর দফতর দখল করে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ডেপুটি রিজিওনাল কমান্ডার জেনারেল থাউং তুন সহ একাধিক সেনা অফিসারকে আরকান আর্মি গ্রেফতার করেছে বলেও জানা গিয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে জেনারেল কেয়ো কেয়োকে। সেইসঙ্গে মিলিটারি কাউন্সিলের যে জওয়ানরা পালিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকী জেনারেল কেয়ো কেয়োকেও বন্দি করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এছাড়াও পুরো ওয়েস্টার্ন রিজিয়ন মিলিটারি হেডকোয়ার্টার হাতে থাকায় মায়ানমার সেনার বিরুদ্ধে লড়াই আগামীদিনে আরও সহজ হবে। তবে এই তথ্য সামনে আসতেই এবার নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশ সরকার। ইতিমধ্যেই সীমান্ত এলাকায় সতর্কতাও বাড়ানো হয়েছে। নাফ নদীর পূর্বদিকে মায়ানমার অবস্থিত। টেকনাফ প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, সীমান্তে বাংলাদেশ উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং বিজিবির নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এখনও স্থলপথে ও জলপথে নজরদারি চলছে ।
এদিকে মায়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের ২৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা এর আগে মংডু শহর দখলের সঙ্গে সঙ্গেই পুরোটাই দখল করে নিয়েছিল আরাকান আর্মি। বর্তমানে রাখাইন প্রদেশের সিত্তের শহরটি জুনটার দখলে রয়েছে। তবে প্রদেশের অধিকাংশের ওপরই আপাতত জুন্টার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। এদিকে রাখাইন প্রদেশে এখনও প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা আছে তারা জুন্টা সরকারকেই সমর্থন করছে।
Discussion about this post