বঙ্গোপসাগরে বিগত কয়েকমাসে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে ভারত। নতুন বছরের শুরুতেই বঙ্গোপসাগরে ফের নোটাম জারি করল ভারত। তবে এবার আরও বড় এলাকা জুড়ে নোটাম জারি করায় যথেষ্ট চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলিতে। প্রসঙ্গত, কোনও ধরণের সামরিক অনুশীলন অথবা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জন্যই এই নোটিশ জারি করা হয়। নোটাম শব্দটির পুরো অর্থ হল ‘নোটিশ টু এয়ারমেন’। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট ওই অঞ্চলে বিমান ও সামুদ্রিক জাহাজ যাতায়াতের সতর্কতা জারি করা হল। যাতে ওই পরীক্ষা বা সামরিক অনুশীলনের সময় কোনও অনাকাঙ্খিত ক্ষতি না হয়। ২৪ ডিসেম্বর ইন্ডিয়ান ডিফেন্স রিসার্চ উইং তাঁদের ওয়েবসাইটে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারত ২০২৫ সালের শুরুতেই বঙ্গোপসাগরে কৌশলগত এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করতে চলেছে।
এর জন্য জানুয়ারির ৫ তারিখ থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত নোটাম জারি করা হয়েছে। সবচেয়ে চমকে দেওয়ার মতো বিষয় হল এবার নোটাম জারি করা হয়েছে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার সামুদ্রিক এলাকায়। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অনুমান, এই রেঞ্জে নোটাম জারির অর্থ হল, ভারত এবার অগ্নি-৫ সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করতে চলেছে। এমনিতেই ভারতের অগ্নি সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলি পাকিস্তান, চিন ও অন্যান্য দেশগুলির কাছে আতঙ্কের কারণ। এবার অগ্নি-৫ সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা হলে, আরও চাপে পড়বে চিন ও পাকিস্তান। তবে ভারত সরকার বঙ্গোপসাগরে নোটাম জারি করতেই রাতেন ঘুম উড়েছে বাংলাদেশের। ওই দেশের সংবাদমাধ্যমে ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে অগ্নি-৫ হল আন্তঃ মহাদেশীয় ব্যালেস্টিক মিশাইল। যা তৈরি করেছে ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও। অগ্নি-৫ হল ইন্টিগ্রেটেড গাইডেড মিশাইল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের অধীনে বিকশিত সারফেস-টু-সারফেস আন্তঃ মহাদেশীয় ব্যালেস্টিক মিশাইল। যার সর্বোচ্চ রেঞ্জ হতে পারে ৫০০০ কিলোমিটার। উল্লেখ্য, অগ্নি-৪ সিরিজের পাল্লা সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার। ফলে ওই রেঞ্জেই আপাতত অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে চাইছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। ২০২৪ সালে বঙ্গোপসাগরে বেশ কয়েকবার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে ভারত। নোটাম জারি করার সময়কাল ও রেঞ্জ বিশ্লেষন করলে বোঝা যাবে কেন বাংলাদেশের মাথাব্যাথা বেড়ে চলেছে ভারতের এই পরীক্ষা নিরীক্ষায়। চলতি বছরের ১ থেকে ৩ মে নোটাম জারি হয়েছিল বঙ্গোপসাগরের ৯৮৫ কিলোমিটার এলাকায়। এরপর ১৩ থেকে ১৫ জুন বঙ্গোপসাগরে নোটাম জারি হয় ৪৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। সেপ্টেম্বরের ৬ ও ৭ তারিখও নোটাম জারি হয়েছিল বঙ্গোপসাগরের ২৬৮০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। আবার নভেম্বরের ১৫ থেকে ১৭ তারিখ নোটাম জারি ছিল বঙ্গোপসাগরের ১৭০০ কিলোমিটার এলাকায়। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, ধীরে ধীরে বড় এলাকায় অগ্নি-৫ ব্যালিস্টিক মিশাইল পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত।
এখন প্রশ্ন হল, ভারতের এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা শুধুমাত্রই সামরিক কারণে নাকি এর পিছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত দিন দিন সামরিক ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হয়ে উঠছে। এখন ভারতই একের পর এক দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। যা কার্যত রাতের ঘুম উড়িয়ে দিচ্ছে চিন ও পাকিস্তানের। বিশেষ করে অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জে চলে আসছে হোয়াংঝু, সাংহাই, তানজিন, বেজিংয়ের মতো চিনের একাধিক বড় শহর। অপরদিকে গোটা পাকিস্তান ভারতের একাধিক ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জে রয়েছে। তাই ভারতের একাধিক মিশাইল পরীক্ষার দিকে নজর রাখছে চিন ও পাকিস্তান। কিন্তু বাংলাদেশের মাথাব্যাথার কারণ কোথায়? যেখানে বাংলাদেশে কোনও ক্ষেপণাস্ত্রই নেই বলার মতো। নেই মিশাইল হামলা ঠেকানোর মতো কোনও প্রযুক্তিই নেই।
তাহলে তাঁদের সমস্যা কোথায়? প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বাংলাদেশের সঙ্গে মাখামাথি সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান ভারতকে বিব্রত করার চিন্তাভাবনা করছে। কারণ, ভারত যদি বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে, তাহলে পাকিস্তান সরাসরি আপত্তি জানাতে পারে না। বরং বাংলাদেশ এই আপত্তি তুলতে পারে। আর বাংলাদেশের একাংশ দাবি তুলছে, মুহাম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকার যেন সরকারিভাবে ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জন্য নোটাম জারির আপত্তি জানায়। যুক্তি হিসেবে বঙ্গোপসাগর এলাকায় তাঁদের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলেই মনে করছে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। যদিও এই যুক্তি অত্যন্ত ঠুনকো, আসল কারণ হচ্ছে, ভারতের একের পর এক দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় প্রবল ভয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
Discussion about this post