দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দুবার। বড়োসড় সামরিক মহড়া ভারতের। তাও আবার একই জায়গায়। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরাও মনে করতে পারছেন না, শেষ কবে এমনটা হয়েছিল। ভারতের প্রথম শ্রেণির ইংরেজি দৈনিক দি টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ত্রিশক্তি রেজিমেন্ট বা ৩৩তম কর্পস একটি বড় ধরনের অগ্নিশক্তি মহড়া পরিচালনা করেছে। যা সিকিমে চীনের সাথে সীমান্ত এবং পূর্ব সেক্টরে কৌশলগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডোরের গা ঘেঁষে হয়েছে। ফায়ারপাওয়ার একসারসাইজ নামে এই অনুশীলন বা যুদ্ধ মহড়া আগের থেকে আরও ব্যাপকভাবে হয়েছে বলেই জানাচ্ছে টাইমস অফ ইন্ডিয়া।
আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ভারতীয় সেনাবাহিনী গত ২২ থেকে ২৭ জানুয়ারী উত্তরবঙ্গে ‘এক্সারসাইজ ডেভিল স্ট্রাইক’ নামে একটি বৃহৎ আকারের বিমান বাহিনী প্রশিক্ষণ মহড়া পরিচালনা করেছিল। তাতে অংশগ্রহণ করেছিল পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের ১০০০ জনেরও বেশি প্যারাট্রুপার। এছাড়া বিমানবাহিনীর বিশেষ প্রশিক্ষিত গড়ুর বাহিনীর কমান্ডোরা সেই মহড়ায় অংশ নিয়েছিল। শিলিগুড়ির আকাশে দেখা গিয়েছিল অত্যাধুনিক রাফায়েল বিমান, -১৩০ হারকিউলিস, এএন-৩২ সহ নানা ধরণের সামরিক হেলিকপটার।এই মহড়ায় সেনাবাহিনী এবং ভারতীয় বিমান বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের উপর আলোকপাত করা হয়েছিল। যেখানে দেখা হয়েছিল চ্যালেঞ্জিং ইলেকট্রনিক যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের সমন্বিত পদ্ধতি কতটা সচল রয়েছে।
সেই অপারেশন ডেভিল স্ট্রাইকের ১৪ দিনের মাথায় আরও বড় আকারের একটা মহড়া পরিচালিত হল শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেনস নেক এলাকায়। তবে এবার যুক্ত হল সিকিম। চিনের নাকের ডগায় এলএসি বরাবর কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ভারতীয় সেনার ত্রিশক্তি কর্পস ‘লাইভ ফায়ারিং ডেমনস্টেশন’ করল। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া শিলিগুড়ি করিডোরেও হল সেই যুদ্ধ মহড়া। জানা যাচ্ছে, ভারতীয় সেনার আগ্নেয়াস্ত্রের পসরা নিয়ে এই মহড়ার আয়োজন হয়েছিল। পিনাকা মাল্টি-ব্যারেল রকেট লঞ্চ সিস্টেম সহ একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয়েছে এই যুদ্ধ মহড়ায়।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, ভারত সরকারের কাছে গোয়েন্দা রিপোর্ট আছে। বাংলাদেশে অতি সক্রিয় হয়েছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। সেই সঙ্গে পাক সেনাকর্তারা ঘনঘন বাংলাদেশ আসছেন। আইএসআই প্রধান ও পাকিস্তানের কয়েকজন উচ্চ পর্যায়ের সেনাকর্তা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল রংপুর এলাকায় গিয়েছিলেন। এখানে বাংলাদেশ সেনাক্যাম্প গুলি পরিদর্শন করেন তারা। এমনকি এও জানা যাচ্ছে পাকিস্তানেরর সেনা করতে না বাংলাদেশী আর্মিকে ট্রেনিং দিচ্ছে। সব দিক থেকেই যা ভারতের পক্ষে বিপদজনক। এই আবহে ভারতের পরপর দুটি বৃহৎ সেনা মহড়া বিশেষ তাৎপর্য বহন করে বলি মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে সীমান্তের ওপারে চিন ক্রমাগত নিজের স্ট্র্যাটেজিক্যাল অবস্থান আরও শক্তিশালী করার চেষ্টায় রয়েছে। তাই সিকিমের উচ্চ পাহাড়ি এলাকায় সেনা মহড়ার মাধ্যমে চীনকেও বিশেষ বার্তা দেওয়া হল।
Discussion about this post