রেডিমেড পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ বিশ্বের এক নম্বরেই রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতা, হিংসা এবং রাজনৈতিক পালাবদলের পর অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে সে দেশের অর্থনীতিতে। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পেও। যার ফলে সরাসরি লাভবান হচ্ছে ভারতের পোশাক শিল্প। এমনটাই দাবি করছেন ভারতের ব্যাবসায়ীক সংগঠনগুলি এবং রফতানিকারক সংস্থাগুলি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য ভারতের পোশাক শিল্র কতটা লাভবান হচ্ছে, বা ভবিষ্যতে কতটা লাভবান হতে পারে?
চলতি বছরের জুলাই এবং আগস্ট মাসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণ আন্দোলনের পর বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের চাকা থমকে গিয়েছিল। শেখ হাসিনার পতন এবং দেশত্যাগের পর বাংলাদেশে আন্দোলন থেমে গেলেও অস্থিরতা রয়েই গিয়েছে। বাংলাদেশে নতুন তদারকি সরকার গঠিত হয়েছে প্রায় তিন মাস হয়ে গেল। তবুও সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, ও অরাজকতা কিন্তু কমেনি। এখনও বাংলাদেশের বহু পোশাক কারথানায় তালা ঝুলছে। আর যে কয়েকটি চালু হয়েছে, সেখানেও পোশাক-শ্রমিকদের দাবিদাওয়া এবং প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে সংকটের কারণে পোশাক শিল্প চরম সমস্যার মুখে দাঁড়িয়ে। ব্রিটেনের বিখ্যাত সাময়িকী দ্য ইকোনোমিস্ট এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের চলমান অস্থিরতার কারণে যদি বাংলাদেশ থেকে মাত্র দশ শতাংশ অর্ডারও ভারতে চলে আসে, তাহলেও বছরে ভারতের রফতানিতে যোগ হবে অতিরিক্ত আরও ৩ বিলিয়ন ডলার। ওই প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, এই আবহে ভারতের কারখানাগুলিতে পশ্চিমী দেশগুলি থেকে পোশাকের অর্ডার বাড়ছে হু হু করে। আবার ভারতের এক বিণিজ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান পোশাক কারখানাগুলোর চার ভাগের একভাগই ভারতীয় মালিকানার এবং এই ভারতীয় কারখানা মালিকরা বর্তমানে তাদের কারখানা ভারতে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছেন। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প কার্যত খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে।
গত বছর পর্যন্ত বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পোশাক রফতানি করতো। যা ওই দেশকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেডিমেড পোশাক রফতানিকারক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। সেখানে ভারতের রেডিমেড পোশাক রফতানির পরিমান প্রায় ১৬ থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলার। উল্লেখ্য, চিন বিশ্বের বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক দেশ। কিন্তু বর্তমানে ভারত পোশাক শিল্পে দ্রুত উন্নতিসাধন করছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং হিংসা। বাংলাদেশে তৈরি রেডিমেড পোশাকের একটা বড় বাজার হল ভারত। কিন্তু ভারতের উৎসবের মরশুমের আগেই অর্থাৎ জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে পোশাক কারখানাগুলি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তাঁদের অর্ডার এসে পৌঁছায় ভারতীয় কোম্পানিগুলিতে। বাংলাদেশের এই পরিস্থিতির জন্য বর্তমানে ভারতের পোশাক রফতানি বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। মূলত ইউরোপ এবং আমেরিকার বড় বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলি ভারতীয় কোম্পানিগুলিকেই অর্ডার দিতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশের সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরসহ তৈরি পোশাক কারখানা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে পোশাক কারখানাগুলি এখনও অচল হয়ে আছে বলেই জানা যাচ্ছে। আবার কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার জেরেও পোশাক কারখানাগুলিতে উৎপাদন ব্যহত হয়। যার ফলে সিংহভাগ অর্ডারই ভারতীয় কোম্পানিগুলির হাতে চলে আসে। অপরদিকে, ভারতীয় পোশাক কারথানাগুলির গুণগতমান, উৎপাদনশীলতা এবং ফ্যাশন সচেতনতা আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা আরও বাডিয়ে দিয়েছে। ফলে আগামীদিনে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে আন্তর্জাতিক অর্ডার ফিরে যাবে এই আশাও নেই বললেই চলে। একটা হিসেব বলছে, শেথ হাসিনার পতন এবং বাংলাদেশের তদারকি সরকারের খামখেয়ালি মনোভাবের জন্য ভারতের পোশাক শিল্প প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করিয়েছে। আর আগামীদিনে এই মুনাফা আরও বাড়বে বলেই আশা করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
Discussion about this post