চিনা রক্তচক্ষু উড়িয়ে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ পাবে ভারত?সে সম্ভাবনা এবার অতি প্রবল। এর আগে রাশিয়া, ফ্রান্স ও আমেরিকা ভারতকে সমর্থন জানিয়েছিল। এবার সমর্থন জানালেন ব্রিটেনের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার। তিনিও নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ নিয়ে জোরদার সাওয়াল করলেন। ফলে ভারতের সদস্যপদ নিয়ে রাষ্ট্র সংঘে পাঁচ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে চিন এখন একেবারেই কোনঠাঁসা হয়ে পড়ল।
গত কয়েক বছর ধরেই রাষ্ট্র সংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে ভারত। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশের সংখ্যা পাঁচ থেকে বাড়িয়ে সাত কিনবা নয় করার সিদ্ধান্তও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ভারতকে স্থায়ী সদস্যপদ দেওয়া নিয়ে বেঁকে বসেছিল চিন ও ব্রিটেন। সেখানে ভারতকে সদস্যপদ দেওয়া নিয়ে প্রথম থেকেই সমর্থন জানিয়ে আসছে রাশিয়া এবং আমেরিকা। এরপর ফ্রান্সও ভারতের পক্ষে সাওয়াল করে। ফলে একমাত্র চিন বাদে বাকি চার সদস্য দেশ ভারতের দাবিকে সমর্থন করে দিল। এখন প্রশ্ন, চিন কি বাকি চার দেশের চাপে ভারতের দাবিকে মেনে নেবে?
সম্প্রতি, রাশিয়া ও ইউক্রেনের দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ থামিয়ে শান্তি স্থাপন করতে উদ্যোগী হয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংশা করছেন বিশ্বের তামাম দেশ। দিন কয়েক আগেই জি-২০ এবং গ্লোবাল সাউথ সামিটে মোদির এই উদ্যোগের প্রশংশা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংশোধন জরুরি। ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ, দেশটির গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বরকে সমর্থন করে আমেরিকা। এরপরই রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সাধারণ সভায় এসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ একই সুরে ভারতকে সমর্থনের কথা বলেন। রাশিয়া অনেক আগে থেকেই নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে ভারতকে সমর্থন করে আসছে। এবার সেই পথে এগিয়ে এল ব্রিটেনও। আমেরিকা এবং ফ্রান্সের পর এবার ব্রিটেনও নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য জোরালো সাওয়াল করল। ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার বলেছেন, “নিরাপত্তা পরিষদে আফ্রিকা মহাদেশ থেকে স্থায়ী সদস্য থাকা উচিত। এছাড়াও ভারত, জাপান, ব্রাজিল, জার্মানিকে স্থায়ী সদস্য়পদ দেওয়া প্রয়োজন। অস্থায়ী সদস্যের সংখ্যাও বাড়াতে হবে নিরাপত্তা পরিষদে”।
নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ আপাতত পাঁচটি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া এবং চিন। বিগত কয়েক বছর ধরেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী সময়ের দাবি মেনে এই সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি করে আসছেন। ভারতের মতোই স্থায়ী সদস্য হিসেবে অন্যান্য দাবিদার জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশ। নিরাপত্তা পরিষদের সাধারণ সভাতে এই নিয়ে বহু আলোচনা এবং বিতর্ক হয়েছে। এমনকি পাঁচ স্থায়ী সদস্য থেকে বাড়িয়ে সাত বা নয় সদস্য দেশে উন্নীত করার আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু ভারতকে নিয়েই যত গোলমাল। একসময় পাকিস্তানও নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে নিজেদের দাবি পেশ করেছিল চিনের প্রচ্ছন্ন সমর্থনে। এখন পাকিস্তানের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব খারাপ। কিন্তু বেজিং কোনও ভাবেই ভারতকে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে মানতে নারাজ। এমনকি ব্রিটেন বাদে বাকি তিনটি দেশ ভারতকে সমর্থন করলেও চিন ছিল অদ্ভুতভাবে নিষ্চুপ। এবার ব্রিটেনও ভারতকে সমর্থন করায় চাপে পড়ে গিয়েছে বেজিং। কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য, এই মুহূর্তে চিনের ভিতরেই প্রবল চাপে শি জিংপিং। চিনের অর্থনীতি ক্রমশ পতনের মুখে। এই আবহে চিনা রক্তচক্ষূ এড়িয়ে ভারত শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হতে পারে কি না।
Discussion about this post