‘হায়াত মউতের মালিক আল্লা ন্যূনতম সিকিউরিটি নিয়ে চলাও হল সুন্নাহ। কিন্তু আমাদের লড়াইটা হল … আমার মা স্বাভাবিকভাবেই কান্নাকাটি করেন। আমার পরিবার সবাই। তো আমি আমার মাকে বলেছি যে দেখো … মানে আমরা যে লড়াইয়ে নেমেছি… আমার একটা মনে হয় কি কোনও রাজনীতিবিদের না বাসায় মৃত্যু হইতে পারে না। এটা কোনও ভালো মৃত্যু না। যিনি রাজনীতি করেন, যিনি লড়াই করেন, যিনি বিপ্লবী, যিনি সংগ্রামী, তাঁর মৃত্যুটা হবে একটা সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে। একটা রাজপথে। একটা গ্লোরির মৃত্যু। আমি তো ভীষণভাবে প্রত্যাশা করি… আমি ছোটবেলা থেকে এই স্বপ্নটা দেখি… অনেক জায়গায় বলেছি যে একটা তুমুল মিছিল হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে। সেই মিছিলের সামনে আমি আছি। কোনও একটা বুলেট এসে আমার বুকটা হয়তো বিদ্ধ করে দিয়েছে এবং সেই মিছিলে আমি হাসতে হাসতে আমি শহীদ হয়ে গেছি। এবং সবাই যখন মৃত্যুটাকে ভীষণ ভয় পায়, আমি তখন হাসতে হাসতে আল্লাহর কাছে ভীষণ সন্তুষ্টি নিয়ে পৌঁছতে চাই যে আমি একটা ন্যূনতম এই জীবনটা লিড করতে পারলাম যে আমি একটা ইনসাফের হাসি নিয়ে আমি আমার আল্লাহর কাছে পৌঁছাতে চাই। সুতরাং… আগামী পঞ্চাশ বছর বাঁচলাম। কোনও ইমপ্যাক্ট তৈরি হল না আমারে দিয়ে। দেশের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য, উম্মার জন্য, জাতির জন্য। কিন্তু আমি ধরেন পাঁচবছর বাঁচলাম। সেটার মধ্যে দিয়ে যদি ৫০ বছরের ইমপ্যাক্ট তৈরি হয় তাহলে অনেকদিন বেঁচে থাকাই কি সাফল্যের বলেন?’
এই ভাষণ কার, তা আর নতুন করে বলার দরকার পড়ে না। কিছুদিন আগে তিনি এই সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যমকে। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর মৃত্যু নিয়ে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, অর্থাৎ রাজপথে মৃত্যু, সেই ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়েছে। বুলেট তাঁকে বিদ্ধ করেছে। তবে বুকে নয়, মাথায়। আর সেটা হয়েছে রাজপথে। তবে কোনও মিছিল ছিল না। মিছিল হল সিঙ্গাপুর থেকে তাঁর মৃত্যুর খবর আসার পর। তিনি শরিফ ওসমান হাদি। শুনুন তাঁর স্বকণ্ঠের সেই ভবিষ্যদ্বাণী।
মৃত্যুর আগেও কিছুদিন আগেও তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন। সেই সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁকে দেখা যায় উপদেষ্টাদের তেড়ে গাল দিতে। বাংলাদেশের এই তরুণ তুর্কি নেতা বলেন, ‘এই ওয়াকার সাহেব অথবা আর্মি যদি কোন ক্যু করার চেষ্টা করে জনগণ গিয়ে ক্যান্টনমেন্টের ইট খুঁইড়ে নিয়ে আসবে, ইট। একটা ইট ক্যান্টনমেন্টে আস্তা থাকবে না। সরকারের উদ্দশ্যে তাঁর প্রশ্ন, ‘আপনি কারে ডরান? আপনি ভোট নেন। মিনিমাম একশো রিকশাওয়ালার সঙ্গে কথা বলেছি। প্রত্যেকে বলে এই উপদেষ্টাদেরকে তাঁরা বিশ্বাস করে না। কিন্তু ইউনুস বেটা ভালো।’
এখানেই শেষ নয়। ওই সাংবাদিক সম্মেলনে হাদিকে এও বলতে শোনা যায়- ‘বিএনপি, আপনারা তো আসলে. .. কীভাবে জেনজি আপনাদের সাথে একাত্বতা হবে? দেখলাম দুদু… দুদু … উনি তো ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতা… তিনি বললেন বিএনপির যত কর্মী আছে প্রস্রাব কইরা দিলে না কি সব ভাইসে যাবে… এই অন্যান্য… আপনাকে বিনীত অনুরোধ করি। গত ১৬ বছর আপনাকে প্রস্রাব করতে নিষেধ করছে ক্যাডা ? আপনি ১৬ বছর প্রস্রাব করেন না কেন, আল্লাহর ওয়াস্তে বলেন?’
এদিকে, হাদির কফিন বাংলাদেশে ফিরতেই ঝড় উঠেছে নেট দুনিয়ায়। হাদির কফিনের সামনে লেখা ছিল সেই ঐতিহাসিক বক্তব্য – হারাম খাইয়া আমি এতো মোটা তাজা হই নাই যাতে আমার স্পেশ্যাল কফিন লাগবে। খুবই সাধারণ একটা কফিনে হালাল রক্তের হাসিমুখে আমি আমার আল্লাহর কাছে হাজির হব।’ কফিনের এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোডের প্রথম দুই ঘণ্টায় ৪১ হাজার মানুষ শেয়ার করেছেন। লাইক ও কমেন্ট করেছেন সাড়ে তিন লক্ষাধিক মানুষ। ওই ছবিতে কমেন্ট করেন সাড়ে চোদ্দ হাজার নেটিজেন।
ওই ছবিতে কমেন্ট করেছেন জনৈক আহমেদ জয়নাল তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় বিপ্লবীরা বেশিদিন বাঁচে না। তাদেরকে শহীদ হতে হয়। তবুও তাঁরা বেঁচে থাকে মানুষের চেতনায়, সংগ্রামের প্রেরণায়। ’












Discussion about this post