ঘুরে ফিরে সেই সেভেন সিস্টার্স। পদ্মাপারের কেউ বলছেন সেভেন সিস্টার্স কেড়ে নেওয়ার কথা। কেউ বলছে, সীমান্তের ওপারকে অস্থিতিশীল করতে এপারে বসে চলছে নীল নকশা তৈরির কাজ। আর তাতে না কি ভারত সরকারের মদত রয়েছে। এই অভিযোগ আর হুমকি নতুন নয়। গত ১৫-১৬ মাস ধরে এই রেকর্ড কখনও বাজিয়েছেন ইউনূস, কখনও তাঁর নবরত্ন সভার কোনও না কোও ‘রত্ন’। আর কোটা আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা নেতারা তো বলেই চলেছেন। তাদের যে কে থামাবে, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না।
তারা যখন ভাষণ দিচ্ছে, তখন তাদের শরীরে ভাষার দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে হাতের সামনে শত্রুকে পেলে কুচি কুচি করে কেটে ফেলবে। এত ঔদ্ধত্য ভাবা যায়নি। যে দেশের চাল না হলে তাদের চলে না, যে দেশের পিঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা না গেলে এই দুটির দাম হু হু করে বারতে থাকে, সেই দেশের বিরুদ্ধেই তারা তর্জন-গর্জন করছেন। শুধু তারা ভারতের বিরোধিতা করছে। পাল্লা দিয়ে তারা আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে চলেছে। যে বা যারাই আওয়ামী লীগের হয়ে কথা বলবে, ভারত-বাংলাদেশের সুসম্পর্কের কথা বলবে, তারা এদের চোখে হয়ে উঠবে শত্রু। কিছুদিন আগে তদারকি সরকার বাংলাদেশের এক বিশিষ্ট সাংবাদিককে গ্রেফতার করে। কী অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেটা কিন্তু গ্রেফতারের সময় জানানো হয়নি। পুলিশের তরফ থেকে তাঁকে তলব করা হয়েছে, থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তারপর তাকে গ্রেফতার করেছে। কারণ, তিনি তদারকি সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। এটাই তাঁর একমাত্র অপরাধ।
মাহফুজ আলমের কথাই ধরা যাক। প্রথম দিকে তাঁর ভাষা ছিল সুশীল। বেশ ভালো ভালো কথা শোনা গিয়েছিল তাঁর গলায়। বলেছিলেন সংঘাত বাড়লে দেশ অশান্ত হবে। রাজনৈতিক সহনশীলতা ছাড়া সামনে কোনও পথ খোলা নেই। আর সেই মানুষটাই এখন বলছে, ‘সুশীলতা করে লাভ নেই, এবার লাশ পড়লে লাশ নেব।’
মানে সরসরি লাশের রাজনীতি। কিন্তু ভারত থেকে কী কেউ পদ্মাপারে গিয়ে কাউকে খুন করে আসছে। গত জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনে যাদের মৃত্যু হয়েছিল সেটা হয় সেনাবাহিনীর গুলিতে না হলে বাংলাদেশের পুলিশবাহিনীর গুলিতে। সেই গুলি তো ভারত সাপ্লাই করেনি। এই রূপান্তর থেকে স্পষ্ট, তাঁর দায়িত্বশীলনতা বোধের অবলুপ্তি ঘটেছে। একজন দায়িত্ববান নেতার মুখে কখনও লাশের রাজনীতি শোনা যায় না। লাশের বদলে লাশ শুধু রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরির উদ্দেশ্যে নয়, এটা তার বদলে যাওয়া মানসিক অবস্থার প্রতিফলন। যেখানে ক্ষমতা না থাকলে শক্তি অর্জনের একমাত্র পথ প্রতিহিংসার রাজনীতি করা। এই বিবৃতি থেকে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে মাহফুজের মতো নেতারা চূ়ডান্ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
নাহিদের কথাতে সেটা খুব স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। নাহিদ বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা নিজেদেরই নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ সেদিকে যাচ্ছে।’ বিজয় দিবসে দেওয়া ভাষণে জাতীয় নাগরিক পার্টির এই নেতা বলেন, ‘আমরা স্বাধীন ভূখণ্ড পেলেও ৫৪ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে প্রতিশ্রুতি নিয়ে এই দেশ আমরা গঠন করেছিলাম। সেই দেশ আমরা নির্মাণ করতে পারিনি। এ দেশে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা হয়নি। বরং ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে। ’
প্রশ্ন এখানে একটাই – কোন পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ?












Discussion about this post