গত বছর ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাষ্ট্র সংস্কারের আলোচনায় স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধান বাতিল বা পুনর্লিখনের প্রস্তাব তুলেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। আবার অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ ‘বাহাত্তরের সংবিধানের কবর রচনার’ কথা বলে বিতর্ক আরও উসকে দিয়েছিল। ২০২৫ সালের ঈদের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়ে দিলেন, আসন্ন জুলাই মাসেই গণঅভ্যুত্থানের দাবিপত্র জুলাই সনদ ঘোষিত হবে। তাঁর বক্তব্য, এই ‘জুলাই সনদ’ একটি প্রতিশ্রুতি, যেখানে জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র নির্মাণের লক্ষ্যে সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবগুলোর মধ্য থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেসব বিষয়ে ঐক্যমত্য হয়েছে, তার তালিকা থাকবে। এই সনদে স্বাক্ষর করে রাজনৈতিক দলগুলো জাতির কাছে সেসব বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে। এখানে অবশ্যই প্রশ্ন উঠছে, আদৌ কি ঐক্যমত হয়েছে?
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ঈদের আগে দেওয়া জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে মুহাম্মদ ইউনূস কার্যত দুটি ঘোষণা করেছেন। একটি আগামী বছরের এপ্রিল মাসে জাতীয় নির্বাচনের আর দ্বিতীয়টি হল আসন্ন জুলাই মাসেই জুলাই সনদ ঘোষণা করা হবে। আর এই দুটি ঘোষণার মাধ্যমে তিনি একটি ফাঁদ পেতেছেন। আর সেই ফাঁদেই আটকে গিয়েছে বিএনপি-র মতো এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগকে তো আগেই রাস্তা থেকে সাফ করেছেন মুহাম্মদ ইউনূস। এবার বিএনপিকেও বাধ্য করছেন তাঁর পথে আসতে। বলা ভালো মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাঁর মাথার ওপর থাকা জামায়তে ইসলামী এবং এনসিপি এই ফাঁদ রচনা করেছে। যাতে পা না দেওয়া কার্যত অসম্ভব বিএনপির পক্ষে। এতদিনে নিশ্চই বোঝা গিয়েছে, মার্কিন ডিপ স্টেটের অর্থায়নে এবং পাকিস্তানের আইএসআইয়ের মারফত এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশে পালাবদল হয়েছে। মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই বলেছিলেন এই গণঅভ্যুত্থান ছিল একটা মেটিকুলাস ডিজাইনের অংশ। কিন্তু সেই ষড়ষন্ত্র যখন কার্যত ভেস্তে যেতে বসেছিল বিএনপি এবং বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রতিবাদে। তখনই প্ল্যান বি নিয়ে হাজির হয়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে প্রায় ঢুকেই পড়েছিল মার্কিন সেনা। কিন্তু বাংলাদেশ সেনার প্রবল আপত্তিতে আপাতত তাঁদের থামতে হয়েছে। কিন্তু বিএনপি ও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের চাপে জাতীয় নির্বাচন যদি ডিসেম্বরের মধ্যেই করতে হয়? তখন কি হবে? জামাত-এনসিপি খুব ভালো করেই জানে, নির্বাচনে তাঁরা খুব বেশি সফল হবে না। এ ক্ষেত্রে তাঁদের বিএনপি-র মুখাপেক্ষী হয়েই থাকতে হবে। আর তাতে মার্কিন ডিপ স্টেট খুব একটা হালে পানি পাবে না, কারণ বিএনপি বরাবরই চিন পন্থী।
তাই আসরে নামলো মার্কিন ডিপ স্টেট। এবার লক্ষ্য, বিএনপি-এনসিপি-জামাত জোটের সরকার গঠন এবং রাষ্ট্রপতি হবেন মুহাম্মদ ইউনূস। ব্যাস তাঁদের আর ঠেকানো যাবে না। বাংলাদেশের বুকে তাঁরা যা ইচ্ছা তাই করবেন। এই ঠক বাস্তবায়ন করতে আসরে নেমেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। সহযোগী ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৬ এবং পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। তাঁদেরই ছকে মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন সফর, তার ঠিক আগেই জুলাই সনদ জারি করা ও নি্র্বাচনের সময়কাল ঘোষণা। বিশেষ করে, বাংলাদেশের বেশিরভাগই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে— আদৌ এই সনদ ভবিষ্যৎ জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনে কতটা কার্যকর ও মুখ্য ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির অবস্থান মৌলিকভাবে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সুকৌশলে মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছিলেন, জুলাই সনদ অনুযায়ী আশুকরণীয় সংস্কার কাজগুলো আমরা বাস্তবায়ন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বাকি অংশের বেশকিছু কাজও আমরা শুরু করে যেতে চাই। আশা করি, অবশিষ্ট অংশ পরবর্তীকালে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ ইউনূস ইঙ্গিত দিয়েই রেখেছেন। এবার লন্ডনে গিয়ে বাকি বৈঠক হবে বিএনপির কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে। নিমরাজি হয়েও এবার রাজি হয়েছে বিএনপি। আগামী শুক্রবারই এই লন্ডনে বৈঠকে বসছেন মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান। অর্থাৎ, ইউনূসদের পাতা ফাঁদে পা দিতেই হল তারেক রহমানকে।
Discussion about this post