এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম মানুষটি হলেন ডঃ খলিলুর রহমান। তিনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের পর সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তিও বটে। তবে, তাঁর ব্যস্ততা ঠিক কোন কারণে, সেটাই সবচেয়ে রহস্যজনক। খলিলুর রহমান, যিনি মার্কিন নাগরিক বলেই দাবি করা হয়, রজার রেহমান নামে তাঁর মার্কিন পাসপোর্ট আছে বলেও দাবি। যাকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের ডেকে এনে রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ পদে বসিয়েছিলেন। প্রথমে তিনি দাবি করেছিলেন আলাপ আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো ব্যবস্থা করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু অভিযোগ একজনকেও ফেরত পাঠানোর বদলে আরও লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন। যদিও ডঃ খলিলুর রহমানের পদন্নতি হয়। তাঁকে সরাসরি বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করে দেন মুহাম্মদ ইউনূস। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর বাড়তি দায়িত্বে আনা হয় তাঁকে। তারপরেই দেখা গেল, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেমন অকেজো হয়ে গিয়েছে, তেমনই সেনাপ্রধানের ক্ষমতাও খর্ব হয়েছে। আর সবটাই দেখছেন একজন, যার নাম ডঃ খলিলুর রহমান।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলের অভিমত, তাঁকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে বসানোর মূল লক্ষ্যই ছিল রাখাইন মানবিক করিডোর প্রস্তুত করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই এই করিডোর। তাই মার্কিন নাগরিক খলিলুর রহমানকেই দায়িত্ব দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তাই তিনি এই করিডোর ইস্যুতে ঘনঘন মার্কিন সফর করছেন। অপরদিকে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের একের পর এক বিদেশ সফর বাতিল হচ্ছে। যা নিয়ে কম চর্চা হচ্ছে না বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে। প্রসঙ্গত, গত ১১ মে পাঁচ দিনের মার্কিন সফরে যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের। তাঁর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে ল্যান্ড ফোর্সেস প্যাসিফিক সিম্পোজিয়াম এবং এক্সপোজিশন-২৫ নামে দুটি সামরিক মহড়ায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জানা গিয়েছে, তাঁর এই সফরের অনুমতি দেয়নি ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এবার জুন মাসের শেষ সপ্তাহে জেনারেল ওয়াকারের চিন সফরে যাওয়ার কথা ছিল। চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির তরফে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য সামরিক সরঞ্জাম ও অস্ত্রশস্ত্র কেনার বিষয়ে আলোচনায় যোগ দিতেই বেজিং সফরের উদ্দেশ্য ছিল সেনাপ্রধানের। কিন্তু জানা যাচ্ছে, এই সফরও বাতিল করা হয়েছে। তবে এবার তিনি নিজেই সফর বাতিল করলেন, নাকি এবারও তাঁকে যেতে দেওয়া হল না, সেটা জানা যায়নি। কিন্তু এটা জানা যাচ্ছে, জেনারেল ওয়াকারের বদলে চিনে যাচ্ছেন ডঃ খলিলুর রহমান। সম্প্রতি ইউনূসের প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মুখ্য সচিব মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন মিয়া আগামী ২৭ জুন চিন সফর করবেন। খলিলুর রহমান বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। সেখান থেকে ফিরেই তিনি বেজিং যাবেন এবং ২৯ জুন পর্যন্ত চিনে থাকবেন। ঢাকা-বেইজিং সহযোগিতার বিষয়ে “পরামর্শ” করবেন বলেই জানানো হয়েছে। আসলে কক্সবাজারে রাখাইন মানবিক করিডোর ইস্যুতে প্রবল ক্ষিপ্ত হয়েছে চিন। যার যেরে ইউনূসকে বিপদের মুখে পড়তে হতে পারে বলেই অনুমান করছেন কূটনৈতিক মহল। তাই সেখানে জেনারেল ওয়াকারকে পাঠানোর ব্যাপারে কোনও সাহস দেখাতে পারছেন না মুহাম্মদ ইউনূস। বরং তাঁর বিশ্বস্ত খলিলুরকে পাঠিয়ে চিনকে ম্যানেজ করার চেষ্টায় রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। কারণ, মিয়ানমারের সঙ্গে চিনের সক্ষতা সম্পর্কে সকলেই অবহিত। আবার মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ আরাকান আর্মির দখলে। এই সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিয়ানমারের জুন্টা শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে। জুন্টা ঘনিষ্ঠ চিন রাখাইন করিডোর নিয়ে মার্কিন নীতি কোনও ভাবেই মেনে নেবে না। এটা পরিস্কার। অপরদিকে বাংলাদেশের সেনাপ্রধানও রাখাইন করিডোরের বিপক্ষে। তাই ওয়াকারের চিন সফর বাতিল, বদলে খলিলুরকে পাঠানোর ব্যবস্থা। এখন দেখার, তিনি গিয়ে বেজিংয়ের ক্ষোভ প্রশমন করতে পারেন কিনা।
Discussion about this post