এই মুহূর্তে বাংলাদেশের গতি প্রকৃতির উপর ইউনূস সরকারের আদৌ কোনও নিয়ন্ত্রণ আছে তো? মুহাম্মদ ইউনুসের তদারকি সরকারের ১২০ দিন অতিবাহিত হয়েছে। তাঁদের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, বিভিন্ন নির্দেশিকা দেখে এখন এই প্রশ্নই উঠছে আন্তর্জাতিক মহলে। সোমবার যেমন ঢাকায় ভরত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠক হল, তেমনই আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে ঢাকায়। এই প্রথমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের কোনও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করল। সোমবার দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে এই বৈঠক হয়। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস ছাড়াও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তদারকি সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। কি কি বিষয়ে কথা হল ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে?
সোমবার রাতে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে সবটা জানালেন বাংলাদেশের অন্যতম উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল ঢাকার কাছে স্পষ্টত কয়েকটি বিষয় জানতে চেয়েছে। এরমধ্যে যেমন রয়েছে বাংলাদেশে বসবাসকারী সংখ্যালঘুদের বর্তমান অবস্থা, তাঁদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও নির্যাতন বন্ধে কি কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে শ্রমিক অসন্তোষ কেন হচ্ছে, শ্রমিকদের কি কি সুবিধা দেওয়া হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। বোঝাই যাচ্ছে, বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
বাংলাদেশে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্যাতন চলছে, সেটা নিয়ে ভারত প্রথম থেকেই সরব। এবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই ব্যাপারে জানতে চেয়ে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিল, তাঁরাও চিন্তিত। এটা অবশ্যই মুহাম্মদ ইউনুসের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ, বাংলাদেশ এই মুহূর্তে ইউরোপীয় দেশগুলির থেকে সাহায্যপ্রার্থী। বিশেষ করে বাণিজ্য ও আর্থিক সুবিধা তাঁদের প্রয়োজন। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৯টি দেশের প্রতিনিধি মানবাধিকার ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলায়, অনেকটাই চাপে পড়ল বাংলাদেশের তদারকি সরকার। অপরদিকে ভারত ভিসা প্রদানে কড়াকড়ি শুরু করতেই বাংলাদেশের থরহরি কম্প অবস্থা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে নবীন প্রজন্মের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধছে। এর অন্যতম কারণ, বাংলাদেশী তরুণরা পড়াশোনা ও চাকরি সূত্রে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেতে পারছে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূল ভিসা সেন্টার নয়া দিল্লিতে অবস্থিত। সামান্য কয়েকটা ইউরোপীয় দেশের দূতাবাস রয়েছে বাংলাদেশে। ফলে ইউরোপ ও আমেরিকা-সহ বেশিরভাগ দেশে যেতে হলে বাংলাদেশী নাগরিকদের ভিসা নিতে দিল্লি আসতে হয়। যা এখন বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে দরবার করেছে ভিসা সেন্টার ভারত থেকে অন্য কোনও দেশে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যাতে বাংলাদেশের নাগরিকরা সহজেই ভিসা পেতে পারে।
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, বাংলাদেশ যতই দাবি করুক সে দেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ রয়েছেন।কিন্তু আন্তর্জাতিক মহল তা মনে করছে না। এর আগে ভারত, ব্রিটেন, কানাডা-সহ কয়েকটি দেশ এই বিষয়ে সরব হয়েছিল। সম্প্রতি আমেরিকার বাইডেন প্রশাসনের থেকেও বার্তা আসছে। যা মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে স্বস্তিদায়ক নয়। এবার ইউরোপীয় ইউনিয়নও সেই সুরে বাংলাদেশের কাছে রিপোর্ট চাইল। ফলে চাপ ক্রমশ বাড়ছে। সোমবার ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি ঢাকায় দাঁড়িয়ে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উস্মা প্রকাশ করেছেন। কূটনৈতিক চালে এটাও ভারতের বড় অস্ত্র সেটা বুঝিয়ে দেওয়া গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ এটাকে ভারতের অপপ্রচার বলে চালানোর চেষ্টা করছে। যা আদৌ ধোপে টিকবে না। কারণ, ইউরোপ ও আমেরিকায় বসবাসকারী আওয়ামী লিগের সমর্থকরা একই বিষয়ে সরব হয়ে লাগাতার প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে। অপরদিকে বাংলাদেশের বিতাড়িত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও লাগাতার ভার্চুয়াল মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। যার মোকাবিলা করা খুব কঠিন মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে।
Discussion about this post