অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি শুরু থেকেই সমর্থন ও আস্থা প্রকাশ করে এলেও বর্তমানে তদারকি সরকারের উপর নানা কারণে ক্ষুব্ধ তাঁরা। প্রথম কারণটি অবশ্যই নির্বাচন করানো নিয়ে টালবাহানা। দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনের ‘সুস্পষ্ট’ সময়সীমা নিয়ে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় এখন প্রতিনিয়ত অসন্তোষ জানাচ্ছেন বিএনপি-র নেতারা। ফলে সুস্পষ্ট একটা মতোবিরোধ প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে। আবার বাংলাদেশের তদারকি সরকার এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করার যে তৎপরতা শুরু করেছিল, সেটা নিয়েও বিএনপি সরব হয়েছিল। এখন প্রশ্ন উঠছে, মুহা্ম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকার কি ছলে-বলে-কৌশলে বিএনপিকে সাইডলাইনে ঠেলে দিতে চাইছে? কিন্তু জুন-জুলাইয়ের তথাকথিত বিপ্লবে ছাত্রনেতাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাস্তায় নেমেছিল বিএনপি। ফলে এই গণঅভ্যুত্থানে তাঁদেরও ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি করছে বিএনপি নেতারা। বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক দলটির অনেকেই মনে করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে গোপন চক্রান্ত চলছে। এই পরিস্থিতিতে আগামীদিনে বিএনপি নতুন করে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছে। ফলে জল অনেকদূর গড়াবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একটি রোডম্যাপ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে ‘অস্পষ্টতার’ অভিযোগ তুলে অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রকাশ্যেই হতাশা প্রকাশ করেছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার বিএনপির ছাত্র সংগঠনের এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন খালেদাপূত্র তারেক রহমান। তিনি ওই সভায় দাবি করেন, যারা জনগণের মুখোমুখি হতে ভয় পায়, তাঁরাই নির্বাচন নিয়ে নানান টালবাহানা করে, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। এমনকি তিনি মুহাম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকারকে বিগত ৫৩ বছরের সবচেয়ে দূর্বল সরকার বলেও কটাক্ষ করেন। ওই ছাত্র সম্মেলনে বিএনপি নেতা মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর এবং ডঃ আসাদুজ্জামান রিপন নির্বাচন করানোর জন্য তদারকি সরকারের টালবাহানা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এমনকি বিএনপি মহাসচিব দাবিও করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে। অপরদিকে, বিএনপি নেতা ডঃ আসাদুজ্জামান রিপন দাবি করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার প্রক্রিয়ার জন্যই কি নির্বাচন পিছোনোর অভিসন্ধি? সেটা বাংলাদেশের মানুষ জানতে চায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের উদ্যোগ এবং বাহাত্তরের মুজিববাদী সংবিধান কবরস্থ করার উদ্যোগ আপাতত সফল হয়নি। তবে এই ধরণের উদ্যোগের পিছনে কাদের হাত রয়েছে, সেটা নিয়েই এখন ভাবছে বিএনপি। বিশেষ করে হাসিনা সরকারের পতনের পাঁচ মাস পর এসে জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র নিয়ে ছাত্রনেতাদের এই তোড়জোড় ও হুমকি দেখে বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত। তাই তাঁদের বক্তব্যে বারবার উঠে আসছে ষড়ষন্ত্র ও চক্রান্তের তত্ত্ব। তাঁরা এমনটাও মনে করছেন, ছাত্রনেতাদের এই উদ্যোগের পিছনে নির্বাচনকে বিলম্বিত বা দীর্ঘায়িত করার যে চেষ্টা চলছে তার যোগসূত্র থাকতে পারে। বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে না বললেও ঘুরিয়ে বোঝাচ্ছেন, এই অভিসন্ধির নেপথ্যে জামায়তে ইসলামীর মতো দলের ভূমিকা রয়েছে।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনা এবং তাঁদের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লিগ কার্যত নিশ্চিহ্ন। এই আবহে দ্রুত নির্বাচন করানো গেলে সবচেয়ে সুবিধা পাবে বিএনপি। তাঁরা কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জিতে সরকার গঠন করতে পারতো। কিন্তু জামাতের প্রচ্ছন্ন মদতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা করার সিদ্ধান্তে কিছুটা হলেও চাপে পড়েছে বিএনপি। এরপর থেকেই শুরু হয় চাপানউতোর। সবমিলিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস ও ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ তুলতে শুরু করে বিএনপি। যা নিয়ে এখন বাংলাদেশের রাজনীতি উত্তাল।
Discussion about this post