ঢাকার রাজপথ থেকে অলিগলি, সর্বক্ষণে তাঁর কন্ঠ ছিল দৃপ্ত, বলিষ্ঠ। তিনি ইনকিলাব মঞ্চের মূল কারিগর। গুলিবিদ্ধ হয়ে ছয়দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন শরীফ ওসমান হাদি। সুদূর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় তাঁর। এরপর থেকেই ফের উত্তপ্ত হয় বাংলাদেশ। অশান্ত হয়ে ওঠে ঢাকার রাজপথ। তবে আমাদের প্রতিবেদন ঢাকার পরিস্থিতি নিয়ে নয়, আমরা ফিরে দেখব এবং বিশ্লেষণ করব ঝালকাঠি থেকে উঠে আসা একজন তরুণ, কেন রাজনীতিতে এলেন? কেন তিনি শিক্ষক থেকে হয়ে উঠলেন লড়াকু নেতা? কেন হলেন ঘাতকের টার্গেট?
ঝালকাঠির একটি মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ওসমান হাদি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে চলে আসেন ঢাকায়। পড়াশোনা শেষ করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন ওসমান হাদি। এর সঙ্গে ইংরেজি কোচিংয়ে তিনি ক্লাস নিতেন। তখনও সক্রিয় রাজনীতিতে দেখা যায়নি হাদিকে। তবে ২০২৪ সালের ছাত্রদের আন্দোলনে তাঁকে দেখা যায়। তারপর থেকেই হাদির প্রবেশ করেন রাজনীতিতে। রাজপথের লড়াইয়ে তিনি সামিল হন হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ ছাএদের সঙ্গে। গণ অভ্যুত্থানে তিনি আসেন সামনের সারিতে। অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে গঠন করেন ইনকিলাব মঞ্চ। সেখানে থেকে শুরু হয় রাজনীতির যাত্রা। সভা,সমাবেশে দেখা যায় নিয়ম করে।
আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের দাবি এবং জুলাই বিপ্লবের চেতনা রক্ষায় তাঁর দেওয়া জ্বালাময়ী বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবলভাবে ভাইরাল হয়। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে হাদি হয়ে ওঠেন আইকন। যদিও এই ওসমান হাদি ভারতের বিরুদ্ধে নানা মন্তব্য করেন। ভারতকে হুমকি, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অস্তিত্ব অস্বীকার, এমনকি মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে অবস্থান…..সবটাই উঠে আসে তাঁর বক্তব্যে। এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভাঙা থেকে শুরু করে ভারত বিরোধী জিগির ওঠে তাঁর কণ্ঠে। তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছিল, জুলাই বিপ্লবের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন না করে তিনি রাজনীতির মাঠ ছাড়বেন না। সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেছিলেন হাদি। ঢাকা ৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য ঘোষণাও করেছিলেন। এমনকি শুরু হয়েছিল প্রচার। নিয়মিত মিছিল করতেন।
এমনকি বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তিনি বলতেন, তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এরপরই ঘটে অঘটন। ১২ই ডিসেম্বর শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর রাস্তায় বেরোতেই গুলি চলে হাদির উপর। দুই আততায়ী বাইকে করে এসে হাদিকে টার্গেট করে গুলি চালিয়ে সুচারুভাবে বেরিয়ে যায়। ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ব্যাটারি চালিত রিক্সায় ছিলেন ওসমান হাদি। কার সঙ্গে ছিলেন আরও একজন ব্যক্তি। ফকিরাপুলের দিক থেকে তাঁরা পশ্চিমে বিজয়নগরের দিকে যাচ্ছিলেন। তাঁদের অনুসরণ করছিল একটি বাইক। বেলা ২ টো ২৪ মিনিটে রিক্সা চলন্ত অবস্থায় পিছন থেকে বাইকে আসা আততায়ী হাদি কে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলি চালানোর মুহূর্ত ধরা পড়ে সিসিটিভি ক্যামেরাতে। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর এভার কেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় হাদিকে। আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার এম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় সিঙ্গাপুর।












Discussion about this post