অবশেষে মিলল প্রমান। পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে প্রথমবার বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশ করা জাহাজে বিস্ফোরক ও অস্ত্রশস্ত্র এসেছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করছিল ওয়াকিবহাল মহল। ভারতের গোয়েন্দা সূত্রও এমন দাবি করছিল। এবার ঝোলা থেকে বিড়াল বেরিয়েই পড়ল। গত ২১ ডিসেম্বর করাচি বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে দ্বিতীয়বার এসে পৌঁছয় পণ্যবাহী জাহাজ ‘এমভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং’। আর সেই জাহাজ থেকে খালাস হওয়া একটি কন্টেনার খুলতেই বেরিয়ে গেল মারাত্মক পণ্য। যা আসার কথাই ছিল না, শেষ পর্যন্ত তাই এসেছে বলে জানা গেল। ‘এমভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং’ জাহাজ থেকে একটি কন্টেনার খুলতেই দেখা গেল কয়েকটি বক্স, আর তাতে লাল কালিতে বড় বড় করে লেখা “সিসমিক ইমলশন এক্সপ্লসিভ”। যা উচ্চমাত্রার বিস্ফোরক হিসেবে পরিচিত।
কম্বড়িয়ান একটি সংস্থার তৈরি বলে লেখা আছে ওই প্যাকেটগুলিতে। জানা যাচ্ছে, পাক জাহাজ থেকে পণ্যবাহী কন্টেনারগুলি নামানোর পর পর কয়েকটির পরীক্ষা চালায় বাংলাদেশ কাস্টমস ও নৌবাহিনীর প্রতিনিধিরা। সে সময় একটি কন্টেনার খুলতেই বেরিয়ে আসে বিস্ফোরক বোঝাই প্যাকেটগুলি। সঙ্গে সঙ্গেই সেই আমদানিকারক সংস্থার সব কন্টেনার আটক করে কাস্টমস ও নৌবাহিনী। কিন্তু এক ঘন্টার মধ্যেই কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সেগুলি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় তাঁরা। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম বিডি ডাইজেস্ট-কে চট্টগ্রাম বন্দরের এক কর্তা জানিয়েছে, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের একটি ফোন আসার পর ওই কন্টেনারগুলি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় কাস্টমস ও নৌবাহিনী।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম বিডি ডাইজেস্ট জানিয়েছে, ডবলুএইচএলইউ-৪২৬১৭৯৪২জি১ নম্বরের ওই কন্টেনার থেকে উচ্চ মাত্রার ওই বিস্ফোরক বোঝাই প্যাকেটগুলি পায় চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মরত কাস্টমস ও নৌবাহিনীর আধিকারিকরা। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম বিডি ডাইজেস্ট ওই কন্টেনার ও বিস্ফোরক বোঝাই প্যাকেটগুলির দুটি ছবিও প্রকাশ করেছে। তাঁদের দাবি, বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা স্বীকার করেছে বন্দরে আমদানিকারক সংস্থার কয়েকটি কন্টেনার আটক হয়েছিল। কিন্তু এক ঘন্টার মধ্যে তা ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, বাংলাদেশ সরকারের অন্দরে উচ্চ পর্যায়ের কেউ নির্দেশ দিয়েছিলেন ওই কন্টেনারগুলি ছেড়ে দেওয়ার জন্য। তাই কাস্টমস ও নৌবাহিনীর আধিকারিকরা আর বাঁধা দিতে পারেননি, দ্রুত ছেড়ে দিতে হয় বিস্ফোরক বোঝাই কন্টেনারগুলি। প্রসঙ্গত, ৫৩ বছর পর প্রথমবার কোনও পণ্যবাহী জাহাজ বাংলাদেশের কোনও বন্দরে ভিড়েছিল গতমাসে। সে বার করাচি থেকে আসা ৩৭০টি কন্টেনার খালাস হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরে। একমাসের মাথায় দ্বিতীয়বার সেই পাকিস্তানী জাহাজ আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। এবার খালাস হয়েছে দ্বিগুনের বেশি কন্টেনার।
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বরাবরই সন্দেহ করছিল পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলির কাছে অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক চোরাচালান হতে পারে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মহল একই সন্দেহ করছিল। কারণ, মুহাম্মদ ইউনুসের আমলে বাংলাদেশ জঙ্গিদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। বহু জঙ্গি গোষ্ঠীর ওপর যেমন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে, তেমনই জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে একাধিক শীর্ষ জঙ্গি নেতাকে। ফলে বাংলাদেশ থেকে এখন ভারত বিরোধী কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রমান ভারতের তিন রাজ্য থেকে ৯ জন আনসারুল্লা বাংলা টিমের জঙ্গি আটকের ঘটনা থেকেই পরিস্কার। সম্প্রতি বাংলা, অসম ও কেরল থেকে ৯ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়েছে বিভিন্ন রাজ্য থেকে। ধৃত জঙ্গিদের জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে, ভারতে নাশকতামূলক কার্যকলাপের উদ্দেশ্যে বড় মাপের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান থেকে যে বিপুল পরিমান বিস্ফোরক বাংলাদেশে ঢুকছে তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে ভারত। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম বিডি ডাইজেস্টের প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হওয়া ওই বিস্ফোরক বোঝাই কন্টেনারগুলি ইতিমধ্যেই সিলেট ও কেরাণীগঞ্জের দিকে গিয়েছে।
তবে সেগুলি যে সেনাবাহিনী বা অন্য কোনও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর জন্য আনা হয়নি, সেটা পরিস্কার। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, ওই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক জঙ্গিদের হাতেই পৌঁছেছে। এও জানা যাচ্ছে, গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বন্দরের প্রোটকল ভাঙা হয়েছিল। কারণ, এ ধরনের বিস্ফোরকজাতীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট প্রটোকল অনুসরণ করতে হয়। প্রটোকল অনুসারে, এসব পণ্য ‘ডেঞ্জারাস গুডস’ এর আওতাধীন। তাই পণ্য খালাসের পূর্বে বিশেষ অনুমতি নেওয়া ছাড়াও সতর্কাবস্থা জারি করা হয়। নির্দিষ্ট শেডে এসব পণ্য খালাস করা হয়। কিন্তু এই কনসাইনমেন্ট-এর ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো প্রটোকল অনুসরণ করা হয়নি। বরং তড়িঘড়ি করে পণ্য খালাসের পর স্থানটি ছেড়ে যান দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। এখন দেখার ভারত আগামীদিনে এই ব্যাপারে কোনও বড় পদক্ষেপ নেয় কিনা।
Discussion about this post