হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনা কমেনি, বরং বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে একের পর এক ফতোয়া জারি করে চলেছে কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠনগুলি। এবার দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে তিন পাতার লিফলেট বিলি করা হল বাংলাদেশের অলিগলিতে। ওই লিফলেটে ১৬ দফা ফতোয়া জারি করেছে “ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-জনতা” নামে এক সংগঠন। দুর্গাপূজায় কি কি করা যাবে না, কিভাবে পুজো করতে হবে সেগুলি জানানো হয়েছে ওই ফতোয়ায়। যা নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে বাংলাদেশে। দুর্গাপুজো সর্বজনীন নয়। বরং এমন দাবি করার অর্থ অন্য ধর্মকে অবমাননা করা। “ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-জনতা” নামের এক সংগঠন সম্প্রতি বাংলাদেশে দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে এমনই বক্তব্য পেশ করেছে।
এর আগে দুর্গা পুজো কমিটিগুলির কাছে ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করে হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। পাশাপাশি ঢাকা-সহ অন্যান্য জায়গায় দুর্গাপূজা করা যাবে না বলে বিশাল মিছিল হয়। এবার সরাসরি লিফলেট বিলি করে ফতোয়া জারি করা হল। আর পুরো বিষয়ে নিশ্চুপ বাংলাদেশের তদারকি সরকার। উল্টে সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, দূর্গাপুজোর সময় মাইক ও ঢাক বাজানো যাবে না কারণ তাতে নামাজ পড়তে অসুবিধা হয়। ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর ঘটে যাওয়া লাগাতার হামলা ও নির্যাতন নিয়ে সরব হয়েছে। এমনকি এই বিষয়ে নরেন্দ্র মোদি আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তুলেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ আছে বাংলাদেশেই। যেমন এবার হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসব দূর্গাপুজো নিয়ে কট্টরপন্থীদের ফতোয়া সামনে এল।
ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-জনতা’ নামের সংস্থার তরফে জারি করা হল ১৬ দফা ফতোয়া। সেখানে পরিষ্কারভাবে লেখা হয়েছে, কোনও মন্দিরে দুর্গা পুজোকে সর্বজনীন উল্লেখ করে সাইন বোর্ড টাঙানো যাবে না। কারণ, ধর্ম যার যার, উৎসবও তার তার। এমনকি বাংলাদেশের হিন্দুদের ‘ভারতের দালালি’ বন্ধ করার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে ওই ফতোয়ায়। এর জন্য মন্দিরগুলিতে ভারত বিরোধী ব্যানার ও পুজোতে ভারতবিরোধী স্লোগান রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, হিন্দু মানেই ভারতের দালাল, বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এ অপবাদ ঘুচাতে হবে নিজেদের। ওই ১৬ দফা ফতোয়ায় এও বলা হয়েছে, যত্রতত্র রাস্তা বন্ধ করে পুজো করা যাবে না, এমনকি পার্কেও পুজোর আয়োজন করা যাবে না। মাইক ও ঢাক বাজানো যাবে না।
শুধু তাই নয়, মন্দিরের প্রয়োজনের অতিরিক্ত মূর্তি রাখা যাবে না এমনকি মূর্তির উচ্চতাও ইচ্ছেমতো বৃদ্ধি করা যাবে না। ওই লিফলেটে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশেরও কম হিন্দু ধর্মাবলম্বীর জন্য শতকরা ৯৮ ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে কাজ থেকে দূরে রেখে অর্থনীতির ক্ষতি করা চলবে না। তাই দুর্গাপুজোয় ছুটি বাতিল করতে হবে। সামনেই মহালয়া, তারপর দুর্গাপুজো। কিন্তু বাংলাদেশে হিন্দুদের মধ্যে এখন আতঙ্কের পরিবেশ। একদিকে রাস্তায় রাস্তায় দুর্গাপুজো বিরোধী মিছিল, কড়া ফতোয়া দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে তদারকি সরকারও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরে থাক, উল্টে নানা রকম নিয়মে বেঁধে দিতে চাইছে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশ এখন কোন পথে এগোচ্ছে।
Discussion about this post