বাংলাদেশের অন্দরে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তুমুল বিতর্ক। যত দিন এগোচ্ছে, ইউনূস বিরোধী শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিএনপি সহ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাওয়া দলগুলি যেভাবে সুর চড়াচ্ছে, তাতে মনে করা হচ্ছে, শেখ হাসিনার পতনের বর্ষপূর্তিতে ফের আরও একটি ৫ই অগাস্টের ঘটনা ফিরে আসবে।
বাংলাদেশে নির্বাচন এখন আলোচনা কেন্দ্রবিন্দুতে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে আসছে, কখনও দফায় দফায় বৈঠক আবার কখনও প্রতিবাদ। কবে হবে নির্বাচন? ডিসেম্বর নাকি জুন? আর এটাকে ঘিরেই প্রধান উপদেষ্টা এবং বিএনপির মধ্যে টানটান উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে যেভাবে বর্তমানে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে সুর চড়াচ্ছে, তাতে বিএনপি এখন শুধু একটা রাজনৈতিক দল নয়, বরং একটি প্রতীক। যাদের রয়েছে কিছু সুনির্দিষ্ট দাবি। তারা চাইছে, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হোক। আর এটিকে ঘিরেই চলতি বছরের মধ্যভাবে নির্দিষ্ট একটি অবস্থান নিয়েছে। তারা জুনের মধ্যে সময় দিয়েছে সরকারকে। এর মধ্যেই রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে সরকারকে। না হলে জুলাইয়ে তীব্রভাবে মাঠে নামবে বিএনপি। আর সেই পরিস্থিতিতে ঘটনা কোন দিকে মোর নেবে সেটা সুনির্দিষ্ট করে নাম বোঝা গেলেও ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট। ডিসেম্বরের মধ্যে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস। এমনকি তিনি জাপান সফরে গিয়ে বলেছেন, দেশের একটিমাত্র রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। এটা যে বিএনপিকেই ইঙ্গিত করছে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই নিয়ে অবশ্য সুর ছড়িয়েছে বিএনপির নেতৃত্ব। তারা জানিয়েছে, এটা ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অর্থাৎ শুধু বিএনপি নয়, দেশের বহু রাজনৈতিক দলই চাইছে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন হোক। এমনকি সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠকেও প্রায় ২৩ টি রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইছে। এই মুহূর্তে বিএনপি মনে করছে, যে যে সংস্কার চেয়েছিল সরকার, এখন সেটিকে হাতিয়ার করে সময় নিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এদিকে জামাত চাইছে , আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হোক। অন্যদিকে এনসিপি চাইছে, আগে সংস্কার, তারপর নির্বাচন হোক। এদিকে নির্বাচন নিয়ে তর্ক, বিতর্ক চলতে চলতে ফের আরও একটি ৫ই অগাষ্ট আসতে চলেছে। অর্থাৎ শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক বছর পূর্ণ। এদিকে বিএনপি বলছে, বর্ষপূর্তিতে বড় কর্মসূচি আসবে। জাতীয় নাগরিক পার্টিও আলাদা করে কর্মসূচির কথা ভাবছে। কিন্তু বর্তমানে বিএনপির বক্তব্য এবং কার্যকলাপ অত্যন্ত স্পষ্ট। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলছেন, নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে না হলে তারা আর সহযোগিতা করবেন না। খালেদা জিয়াও বেশ কিছু বক্তব্য রাখছেন। আর এখন থেকেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি নিজস্ব স্ট্যাটিজি নিয়ে শুরু করেছে। তবে বিএনপির একটি প্লাস পয়েন্ট হল, সেনাপ্রধানও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইছেন। তবে সরাসরি সেনাবাহিনী কোনও পক্ষ নিচ্ছে না। কিন্তু দ্রুত নির্বাচন চাইছে। ঠিক বিএনপি বা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলির মতো। তবে বিএনপি ধারেভারে বুঝিয়ে দিচ্ছে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে জোরালো আন্দোলন শুরু করবে তারা। পাশাপাশি আরও ভয় ধরাচ্ছে মহম্মদ ইউনূসকে, যে আগস্টে কি ফের কোনও বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে? আরও একটু অভ্যুত্থান দেখবে গোটা বাংলাদেশ? কারণ এই মুহূর্তে বাংলাদেশে নির্বাচন কোনও সাংবিধানিক অনুশীলন নয়, বরং পরিণত হচ্ছে ক্ষমতা কাঠামো পুনর্গঠনের একমাত্র প্রক্রিয়া। ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে বিএনপি নিশ্চিতভাবে শক্তিশালী হয়ে ঝাপাবে। আর জুনের মধ্যে নির্বাচন হলে অনেক বেশি সময় পেয়ে যাবে প্রধান উপদেষ্টা স্বার্থসিদ্ধি লাভ করার জন্য। আসলে সময়ের খেলা চলছে বাংলাদেশের অন্দরে।
Discussion about this post