আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা কর্মীর বিচার চলছে। সেখানে ঘটা একটি ঘটনায় তোলপাড় বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার পক্ষে যেহেতু কোনও আইনজীবী দেখা যাচ্ছে না, সেখানে ট্রাইব্যুনাল স্বত:প্রণোদিত হয়ে হাসিনার পক্ষে একটি আইনজীবী নিযুক্ত করেছে। সেই আইনজীবীকে নিয়েই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কাকে শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী হয়ে ট্রাইবুনাল নিয়োগ করল? এদিকে শোনা যাচ্ছে, তিনি নাকি অনেক আগে, শেখ হাসিনার ফাঁসি চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন। আর সেই আইনজীবীকে যখন নিয়োগ করা হল শেখ হাসিনার পক্ষে, তখন এটা নিয়ে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এমনকি, এমন চলতে থাকলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন কি কেউ কেউ, ট্রাইবুনালের এই কাণ্ড দেখে হাস্যকর বলেও উল্লেখ করছেন।
জানা যাচ্ছে, শেখ হাসিনা যেহেতু কোনও আইনজীবী নিয়োগ দেন নি, তাই ট্রাইবুনাল স্বত:প্রণোদিতভাবে আইনজীবী নিয়োগ করেছে। সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবীকে নিযুক্ত করা হয়েছে। এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। আমিনুল গনি টিটু কে নিয়োগ করা হয়েছে।ট্রাইব্যুনাল ১ এই আদেশ দিয়েছে। এবং এই বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ২৫ জুন দিন ধার্য করেছেন। বিচারের মুখোমুখি হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরেও শেখ হাসিনা এবং অন্যান্য অভিযুক্ত শাকিল হাজির না হওয়ার কারণে বিচারের স্বার্থে আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। জানা গিয়েছে, আমার বিরুদ্ধে ২২৭ টি মামলা হয়েছে। তাই ২২৭টি হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গিয়েছি বলে শেখ হাসিনার যে অডিও বক্তব্য, এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ফরেনসিক টেস্ট করেছে পুলিশ। এবং বলা হচ্ছে এটা সরাসরি আদালত অবমাননা। আর সেই কারণেই গণি টিটুকে নিযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে এই আইনজীবীর কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। এমনকি বলা হচ্ছে, যে আইনজীবী শেখ হাসিনার গুরুতর বিপক্ষের মানুষ, তাকে কিভাবে শেখ হাসিনার পক্ষে নিযুক্ত করা হলো। এমনকি কেউ কেউ বলছেন, বিচারকে প্রহসনের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কয়েকটি ফেসবুক পোস্টের মধ্যে ৫ ই আগস্ট এই আইনজীবী লিখেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংসকারী, খুনি, মিথ্যেবাদী শেখ হাসিনার ফাঁসি চাই। এমনকি আইনজীবী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নাকি বিপক্ষের মানুষ, সেটা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। এমনকি তিনি আরেকটি পোস্টে লিখেছিলেন, তিন লক্ষ কে ৩০ লক্ষ বললে কি আমাকে সত্যবাদী বলবেন? আমাকে কি মেধাবী বলবেন? এক কথায় আমাকে শনাক্ত করুন। অর্থাৎ তিনি এখানে বলতে চেয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ কে ৩ লক্ষ বলেছেন অনেকে, তাদের সমর্থন করছেন তিনি।
আর এরকম একটি বিতর্কিত আইনজীবীকে, শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিযুক্ত করে ট্রাইবুনাল কোন বিতর্কের জন্ম দিল কিনা, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা, শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়া যদি বিতর্কিত হয়, তবে এই সরকারকে নিয়েও নানা রকম প্রশ্ন উঠবে। এমনকি আওয়ামী লীগের তরফে অভিযোগ উঠছে, শেখ হাসিনার পক্ষে কোনও আইনজীবী দাঁড়াচ্ছে না, দাঁড়াতে পারছে না, এমনটাই অভিযোগ। এই পরিপ্রেক্ষিতে একজন সিনিয়র আইনজীবী বলেছিলেন, যদি কেউ না দাঁড়ায় তবে আমি দাঁড়াবো। আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করলো, তখন তিনি অনেক বিতর্কিত একজন আইনজীবী। এমনকি অনেকে বলছেন, গত দশ মাসের যা কথা হয়েছে, এর পরে আরো বেশি কথা উঠবে। এমনকি এই আদালতকে শেখ হাসিনার পক্ষের মানুষজন বিতর্কিত আদালত বলে উপস্থাপন করবেন।
Discussion about this post