সোমবারই দেশে ফিরছেন বিএনপি-র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। এরপরই বাংলাদেশে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন করানোর দাবিতে বড় ধরণের কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। তার আগেই নির্বাচন নিয়ে মুখ খুললেন বাংলাদেশের আর এক গুরুত্বপূর্ণ দল আওয়ামী লিগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনিও এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বাইরে। কারণ গত বছরের ৫ আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের জেরে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। অন্যদিকে হাসিনার দেশ ছাড়ার পর জেলমুক্ত হন খালেদা জিয়া, পরে তিনি লন্ডনে যান চিকিৎসা করাতে। তবে লক্ষ্য করার মতো বিষয় হল, দুজন দুই মেরুর রাজনীতিবিদ হলেও, নির্বাচন নিয়ে দুজনের সুর এক তারেই বাঁধা। যা মুহাম্মদ ইউনূসের কাঁছে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সম্প্রতি দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ভার্চুয়াল ভাষণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মহম্মদ ইউনুস নির্বাচন না করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছেন। ভোট না করে ক্ষমতায় টিকে থাকতেই যুদ্ধ যুদ্ধ রব তুলছেন। প্রসঙ্গত অতি সম্প্রতি বিমানবাহিনীর অনুষ্ঠানে গিয়ে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে মুহাম্মদ ইউনুস বলেছেন, ভারত-পাক যুদ্ধ আবহে আমরা যদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি না নিয়ে থাকি তবে সেটা আত্মঘাতী হবে। অনেকেই মনে করছেন, ভারত পাকিস্তানকে আক্রমণ করলে ঢাকা ইসলামাবাদের পাশেই থাকতে চাইছে। তাই আচমকা যুদ্ধ প্রস্তুতির কথা বলে সেই আভাসই দিতে চেয়েছেন ইউনুস সাহেব।
শেখ হাসিনাও তাঁর ভার্চুয়াল ভাষণে এই যুদ্ধের প্রসঙ্গই টেনেছেন। তিনিও এই প্রশ্ন তুলেছেন, ইউনুস কেন যুদ্ধ প্রস্তুতির কথা বলছেন। কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চান তিনি। হাসিনার কথায়, আওয়ামী লিগ সভানেত্রীর কথায় কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার ঘটনার আরও কড়া ভাষায় নিন্দা করা উচিত ছিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের। আবার এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারে রাখাইন করিডোর দেওয়ার বিষয়টিও তাঁর ভাষণে তুলে ধরেন বিতারিত প্রধানমন্ত্রী। মায়ানমারে সমুদ্র বন্দর থাকতেও কেন সেখানে ত্রাণ সামগ্রী পাঠাতে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে? এরফলে বাংলাদেশের সার্বভোমত্ব ক্ষুন্ন হবে বলেও দাবি করেছেন শেখ হাসিনা।
অপরদিকে, বিএনপি নেত্রী এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন। যদিও তিনি বাংলাদেশে ফিরছেন। বিএনপির দাবি, আগামী মঙ্গলবার দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর ভোটের দাবিতে প্রবল আন্দোলনে অবতীর্ণ হবে দল। নেত্রী খালেদা কিছু না বললেও তাঁর পুত্র তথা বিএনপির কার্যকরী চেয়ারম্যান তারেক রহমান জিয়া কয়েকদিন আগেই এক ভার্চুয়াল ভাষণে ইউনূস সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনিও নির্বাচন পিছিয়ে দিতে মুহাম্মদ ইউনূস যুদ্ধ জিগির তুলছেন বলেই দাবি করেন।
প্রসঙ্গত, সেই ২০১৬ সাল থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে। যাদের সিংহভাগই মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে এসেছেন। প্রবল গৃহযুদ্ধে বিদ্ধ্বস্ত রাখাইনের দখল এখন আরাকান আর্মির হাতে। এই আরাকান আর্মি-সহ অন্যান্য বিদ্রোহী জনগোষ্ঠীকেই মানবিক সহায়তা দিতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেটা করা হচ্ছে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করেই। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, চিনকে মোকাবিলা করতে ভূ-রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে বাংলাদেশের ওই এলাকায় আধিপত্য স্থাপন করতে চাইছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্তে প্রবল ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ, বিএনপি-সহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল। হাসিনার অভিযোগ, ইউনুস যেন তেন প্রকারেণ ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চাইছেন। আর অন্তর্বর্তী সরকারের কর্তারা মনে করছেন, মার্কিন প্রস্তাবে সায় দিলে বাংলাদেশে ভোট নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন চাপ দেবে না। কিন্তু এর ফলে যুদ্ধের মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ।
Discussion about this post