২০২৪ সালে ৫ই অগাষ্ট শেখ হাসিনার পর থেকে একটা বিষয় উঠে এসেছিল। সেটা হল শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের জন্য কি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান চাপ দিয়েছিলেন? হঠাৎ কেন বলছি? তার কারণ বর্তমানে বাংলাদেশের বহু মানুষ সেনাপ্রধানকে দায়ী করছেন শেখ হাসিনার পতনের জন্য। আগে আপনারা শুনুন শেখ হাসিনার একটি অডিও।
এখানেই স্পষ্ট হল, সেনাবাহিনীকে নিয়ে কুৎসা রটানো হচ্ছে। সেটা আরও একবার প্রমাণিত। শেখ হাসিনা নিজে বলছেন, সেনাবাহিনী বা সেনাপ্রধান কেউ তাকে চাপ দেয়নি। তবে এটা সত্যি, যদি সেনাবাহিনী চাইতো, তবে পরিস্থিতি আয়ত্তে থাকত। কিন্তু সেই সময় প্রেক্ষাপট এমন তৈরি হয়েছে, যেখানে সেনাবাহিনীর কোনও কিছু করার ছিল না। তাদের আন্দোলনকারীদের হয়েই কাজ করতে হয়েছে। সেনাপ্রধান শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে অনেকেই বিশ্বাস করেন, শেখ হাসিনার পতনের পিছনে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ছিল। কিন্তু এর পিছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছিল সেটা অনেকেই বিশ্বাস করতে চায় না। তবে এটাই শেখ হাসিনার পতনের পিছনে অন্যতম কারণ। কারণ এর আগেও একাধিকবার শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক কিছুই দাবি করেছিল। যেগুলো শেখ হাসিনা মেনে নেননি। আর তাই তার পতন ঘটেছে। অন্তত বর্তমানে দাঁড়িয়ে বহু বিশেষজ্ঞ এমন দাবিই করছেন।
এমনকি ২০২৪ সালের ৭ই জানুয়ারি যখন নির্বাচন হয়েছিল তার আগে ২০২৩ এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হ্যাসকে দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনাকে একটি সরকারের রূপরেখা দিয়েছিল। এবং সেই সরকারের প্রধান হিসেবে দিয়েছিল মহম্মদ ইউনূসকে। তার নেতৃত্বে একটু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল শেখ হাসিনাকে। তখন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। অবশেষে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি একটি নির্বাচন করেছিলেন শেখ হাসিনা। ফের শেখ হাসিনা নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশের মসনদে বসেন। তার ৭-৮ মাসের মধ্যেই পরিস্থিতি ঘুরে যায়। এবং আওয়ামীলীগ সরকারের পতন ঘটল। শেখ হাসিনার পতনের সময় পর্যন্ত সেনাবাহিনী বা সেনাপ্রধান কোনও চাপ দেয়নি। বরং সেনাবাহিনীর দায়িত্ব সহকারে শেখ হাসিনাকে নিরাপদ স্থানে রেখে এসেছিলেন। সেই জায়গাতে দাঁড়িয়ে সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করার কোনও জায়গায় নেয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার যা পরিণতি তাতে তিনি কখনওই সেনাবাহিনী বা প্রধানের উপর ক্ষোভ চেপে রাখতেন না। কিন্তু উল্টে তিনি বলছেন, এগুলি সব মিথ্যে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা সেনাবাহিনীকে কাঠগড়ায় তুলতে চায়, যারা সেনাপ্রধানের অপসারণ চায়, তারাই এই বিষয়টি প্রচার করছে। শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বন্দ্ব লাগাতে চায়। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু শেখ হাসিনার পতনের সময় সেনাবাহিনী আন্দোলনকারীদের হয়েই কাজ করেছে। বরং শেখ হাসিনার বিপরীতে গিয়েছে তারা। কিন্তু এখন সেই সেনাপ্রধানকেই কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের একটা শ্রেণীর মানুষ চাইছে, সেনাপ্রধান সরে যাক। সেটা যে কোনও কারনের ভিত্তিতে হোক না কেন। শুধুমাত্র তাদের স্বার্থ পূরণের জন্য। আর সেটা করছে বর্তমান সরকারের কিছু সদস্য। তবে এখনো শেখ হাসিনা যথেষ্ট সক্রিয়। তার বিরুদ্ধে কোন মিথ্যে অপবাদ তিনি সহ্য করবেন না। তাই একের পর এক যেমন অডিও বার্তার মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিচ্ছেন বিভিন্ন বিষয়, ঠিক একইভাবে সেনাপ্রধানের কোনও হাত নেই তার পতনের পিছনে, সেটাও পরিষ্কার করে দিলেন।
Discussion about this post