বাংলাদেশ বারেবারে ভারত বিদ্বেষ দেখিয়েছে। কখনও এই আচরণ দেখা গিয়েছে ছাত্রনেতাদের তরফে, আবার কখনও দেখা গিয়েছে স্বয়ং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূসের থেকে। তবুও চুপ ছিল ভারত। নিশ্চুপের অর্থ দুর্বলতা নয়। বরং এটি একটি কৌশলী রাজনীতির পরিপক্বতা। কিন্তু এটা বোধ হয় বোঝেনি ইউনূসের দেশ। ধেয়ে এসেছে সেভেন সিস্টার্স থেকে কলকাতা দখলের হুমকি। ভারতের সাতটি রাজ্যকে ল্যাণ্ডলক বলে ব্যাখ্যা। এইবার ধীরে ধীরে কঠিন হল ভারত। প্রথমে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের জোরালো যুক্তি দিয়ে যোগ্য জবাব বাংলাদেশকে। তারপর ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দিল ভারত। এরপর ভারতের তরফে বাংলাদেশে বেশ কিছু রেল রুটের প্রজেক্ট চলছিল, সেগুলিকে থামিয়ে দিয়েছে ভারত। জানা যাচ্ছে, কম করে প্রায় গুরুত্বপুর্ণ আটখানা রেল রুটের প্রজেক্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ভারতের তরফে। অর্থাৎ বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সরাসরি যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য রুট তৈরি করা হচ্ছিল, সেটা এখন বিসবাও জলে। এটাতে চরম বিপাকে পড়তে চলেছে বাংলাদেশ।
আসলে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচ করে তিনটি বড় রেল প্রজেক্ট তৈরী করছিল। যার ফলে বাংলাদেশকে ভারতের উত্তর পূর্ব এর সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হত। তার সঙ্গে বাংলাকেও জুড়ে দেওয়া যেত। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটি দেশের সুবিধা হত, সেটা নয়। ভারত সরাসরি বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে সবরকম ট্রেড করত। এদিকে বাংলাদেশ বস্ত্র রফতানির জন্য রেল রুটের মাধ্যমে ভারত হয়ে কম খরচে গোটা বিশ্ব দরবারে পৌঁছে যেত। যেটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতি হল বলা যায়। এছাড়াও যেহেতু এই প্রজেক্টটি ভারতের উদ্যেগে হচ্ছিল, কাজেই বাংলাদেশ বিনামূল্যে নিজের দেশে রেল পরিকাঠামো গড়ে ফেলছিল। কিন্তু অনেকে বলছেন, বাংলাদেশ নিজের মুর্খামির জন্য এটি হারিয়ে ফেলল। আসলে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত এগুলি অনেক আগেই ঘটাতে পারতো। কিন্তু বেছে বেছে এই সময়েই কেন করছে? এর কারণ বুঝতে বোধ হয় বাকি নেই বাংলাদেশের।
আসলে বিশ্ব দরবারে ভারতের কূটনৈতিক ক্ষেত্রটা আলাদা। যার মধ্যে সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, যখন বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধাটা বন্ধ করল ভারত, তখন ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদশের উপর শুল্ক চাপায়। যাতে তাদের বস্ত্র শিল্পের উপর প্রবলভাবে প্রভাব পরে। শুধু তাই নয়, যেদিন এটি ঘোষণা করা হল, সেদিন বাংলাদেশে আইএমএফের ঋণের জন্য মিটিং চলছিল। ফলে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সময় কতটা উপযোগী সেটা বুঝিয়ে দিল মোদি সরকার। এর জেরে পুরো ১৫ হাজার কোটি টাকার আইএমএফের তরফে ঋণ বাংলাদেশকে আটকে দিয়েছে।
ঠিক একইভাবে রেল প্রজেক্ট বন্ধের সময়টাও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আসলে ভারত তিনটি বড় রেল প্রজেক্ট তৈরী করছিল।
আখাউড়া – আগরতলা সীমান্ত রেল সংযোগ, যেখানে বাংলাদেশ ত্রিপুরাকে যোগ করা হচ্ছিল। এর জন্য ভারত ৪০০ কোটি টাকা বাংলাদেশকে দান করেছিল। যার অধীনে বাংলাদেশের ভিতর ৭ কিলোমিটার লম্বা রেল ট্র্যাক তৈরি করা হচ্ছিল। এর ফলে বাংলাদেশের সুবিধা, এই জেলায় বাংলাদেশের রেল পরিকাঠামো অত্যন্ত খারাপ ছিল। সেটা তারা অনায়াসেই উন্নত করে ফেলতে পারতো। এমনকি বাংলাদেশ সেভেন সিস্টার্স এ নিজেদের দেশে বস্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রী রফতানির সঙ্গে এই রেল রুটের দিয়ে মায়ানমার পর্যন্ত ট্রেড করতে পারত। ফলে ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ বাংলাদেশ কিছু মাসের মধ্যে তার পাবে।
আরও একটি বড় প্রজেক্ট খুলনা – মোংলা বন্দর রেল সংযোগ। যার জন্য তিন হাজার তিনশো কোটি টাকার বিনিময়ে মোংলাকে রেল ওয়ের সঙ্গে জোড়া হচ্ছিল। এর ফলে এই বন্দর থেকে সরাসরি পণ্য শুধু রেলের মাধ্যমে নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছনো সম্ভব ছিল। আর সেটা অত্যন্ত কম সময়ে। রফতানির জন্য এই একই রেল রুটের মাধ্যমে মংলা বন্দরে বস্ত্র পাঠিয়ে, সেখান থেকে বিদেশে রফতানি করা যেত। সেটাও থমকে গেল।
তৃতীয়টি হল, ঢাকা – টঙ্গী – জয়দেবপুর রেল সংযোগ। এর জন্য ভারত প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা খরচ করে রেল প্রজেক্ট চালাচ্ছিল। সেটাও থমকে গেলো। এছাড়াও আরও পাঁচটি প্রজেক্টের জন্য সমীক্ষা চালানো হচ্ছিল ভারতের তরফে। আপ সেগুলিও আপাতত বন্ধ।
তবে এক্ষেত্রে ভারতের খুব একটা সমস্যা হবে না। কারণ ভারত আগে বুঝেই বাংলাদেশকে বাইপাস করে নেপাল ও ভুটান এর সঙ্গে অনেক আগেই আলোচনা করেছে। যার ফলে উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার হয়ে নেপাল, সিকিম হয়ে ভুটানের মধ্য দিয়ে একটি নতুন রেল প্রজেক্ট শুরু হওয়ার কথা। এর ফলে ভারতের সুবিধাই হবে। আর সেটা হবে বাংলাদেশে তৈরি হওয়ার রেল প্রজেক্ট এর খরচের থেকেও কম খরচে। এমনকি বাংলাদেশ যে সুবিধাগুলি পেত সেগুলি পাবেন নেপাল এবং ভুটান। কাজেই এত বড় রেল প্রজেক্ট এর কাজ থমকে যাওয়ায় কি করে বাংলাদেশ, সেটাই দেখার
Discussion about this post