শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের হয়েছিল। সোমবার থেকে তাঁর বিচারপর্ব শুরু হচ্ছে। অপরদিকে, শেখ হাসিনা এখনও ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন। তাঁকে বাংলাদেশে ফেরাতে চায় ইউনূস প্রশাসন। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত পেতে ভারতের কাছে আবেদন করবে তদারকি সরকার। যদিও গত সপ্তাহেই ইন্টারপোলের কাছে শেখ হাসিনার জন্য রেড কর্নার নোটিশ জারির আবেদন জানিয়েছিল ইউনূস প্রশাসন। এখনও পর্যন্ত সেই ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করেনি ইন্টারপোল। ফলে হাসিনাকে ছাড়াই আজ থেকে শুরু হয়ে গেল বিচারপর্ব।
প্রসঙ্গত, দেশত্যাগী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে শতাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে গণহত্যা-সহ একাধিক ধারায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালেও মামলা দায়ের হয়। ১৭ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাতীর উদ্দেশ্যে ভাষণে দাবি করেন, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়ে ভারতের কাছে আবেদন করা হবে। তিনি আরও দাবি করেন, হাসিনার বিচার হবেই। গত ২৭ অক্টোবর ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান গোলাম মর্তুজা মজুমদার সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা-সহ ৪৬ জনকে ১৮ নভেম্বর সোমবার তাঁর সামনে হাজির করার নির্দেশ দেন। এদিন অবশ্য মাত্র ১৪ জনকে হাজির করাতে পারে ইউনূস সরকার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের বিচারক আগামী একমাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দেন। ইউনূস প্রশাসন ইন্টারপোলের কাছে রেড কর্নার নোটিশ জারি করার আবেদন করেছে। কিন্তু এখনও সেই নোটিশ জারিই করেনি ইন্টারপোল। এই বিষয়ে ভারত সরকারকেও কিছু জানানো হয়নি। ইন্টারপোলের এই নিরাবতাই বাংলাদেশের তদারকি সরকারের কাছে যথেষ্ট অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যেই ইউনূস সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, শীঘ্রই তাঁরা ভারত সরকারের কাছে হাসিনার প্রত্যর্পণের আবেদন জানাবে। ওই ভাষণে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে স্বৈরাচারী বলেও উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের তদারকি সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর একবারও শেখ হাসিনা সম্পর্কে একটিও মন্তব্য করেননি মুহাম্মদ ইউনূস। তবে তাঁর সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হওয়ার দিন জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি স্বমহিমায় ফিরলেন। প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস ঘোষণা করেন, “শুধু জুলাই-অগস্ট হত্যাকাণ্ডই নয়, ১৫ বছরের সব অপকর্মের বিচার করব”। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, বিচার তো হবে, কিন্তু হাসিনাকে কি দেশে ফেরাতে পারবে বাংলাদেশ? কারণ ভারত সরকার পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অতিথি হিসেবে যতদিন চাইবেন ততদিনই তিনি ভারতে থাকবেন। বাংলাদেশ যদি সরকারিভাবে প্রত্যর্পণের আর্জি জানায় তাহলে পরিস্থিতি কি পাল্টাবে? কূটনৈতিক মহলের মতে, ভারত সরকার হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে না। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির কয়েকটি ধারা হাতিয়ার করেই তাঁরা এই আর্জি নাকচ করতে পারে। কারণ, এর আগে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছিল, হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সবমিলিয়ে শেখ হাসিনা-সহ একাধিক অভিযুক্তকে হাতে পায়নি বাংলাদেশ। মোট ৪৬ জনের নামে মামলা হলেও মাত্র ১৪ জনকে সোমবার হাজির করানো হল। যাদের বন্দি করতে পেরেছিল ইউনূস প্রশাসন। জানা যাচ্ছে, এই ১৪ জনের মধ্যে ১০ জন সাবেক হাসিনা সরকারের মন্ত্রী। এবং দুজন শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ছিলেন। বাকি দু’জনের একজন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, আর একজন সাবেক সচিব। ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এই সাবেক মন্ত্রীদের খুন ও দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ।
Discussion about this post