অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে চারদিনের সফরে ঢাকায় গিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। প্রায় সাত বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশে এটি তার দ্বিতীয় সফর। বাংলাদেশের উত্তেজনা যেন থামছেই না, তারই মাঝে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউএসএড প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহায্য প্রকল্প। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার শাখা জানিয়েছে, সাম্প্রতিক কালে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলির সদস্যদের দৈনিক রেশনের বরাদ্দ অর্ধেকে নামাতে হয়েছে।
এই পরিস্থিতি দেখতে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসকে আমন্ত্রণ করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতিসংঘের মহাসচিব তিন দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়ায় গিয়ে রোহিঙ্গা শিবিরের অবস্থা পরিদর্শন করলেন গুতেরেস। গত বুধবারই ইউনূসের প্রেস উইং জানিয়েছে, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চারদিনের সফরে বাংলাদেশ আসছেন। গুতেরেসের সঙ্গে থাকবেন ইউনূসও।
শুক্রবার সকালে মহাসচিবের অবস্থানরত হোটেলে তার সঙ্গে প্রথমে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বলে খবর। কক্সবাজারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্মাণাধীন কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও খুরুশকূল জলবায়ু উদ্বাস্তু কেন্দ্র পরিদর্শন করারও পরিকল্পনা ছিল তাদের। পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস উখিয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বলেই জানা যাচ্ছে।
পাশাপাশি, জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস বিমানবন্দর থেকে সরাসরি উখিয়ায় গিয়ে সেখানে তিনি রোহিঙ্গা লার্নিং সেন্টার, রোহিঙ্গাদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শনও কড়েছেন। মহাসচিব গুতেরেস এর আগে কয়েক বার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করলেও ইউনূস এই প্রথম কোনও রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করলেন। উখিয়ায় রোহিঙ্গা ইমামদের সঙ্গে কথা হয় তাদের।
প্রসঙ্গত নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই একের পর এক চাপে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারকে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে যখন সরব আমেরিকা তখন ইউনূস সরকার মনে করছে, রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের সফরের পরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহায্যের প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়তে পারে। গুতেরেসের এই ঢাকা সফরকে ইউনূস সরকারের প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের অনুমোদন হিসাবেই দেখছেন তাঁর অনুগামীরা। তবে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায় মিছিল ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে।
জানা যাচ্ছে, আজ শনিবার ঢাকায় জাতিসংঘের কার্যালয়ে যাবেন মহাসচিব। সেখানে জাতিসংঘের কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। গোলটেবিল বৈঠকেও যোগ দেবেন গুতেরেস। সেখানে বাংলাদেশের যুবসমাজ ও নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। আগামী ১৬ মার্চ সফর শেষ করে সকালে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস।
Discussion about this post