মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স চলতি মাসে ভারত সফর করবেন। এবং তাঁর দুই শীর্ষ কর্মকর্তা, জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজও ভারত সফরে আসছেন। সূত্রের খবর, জেডি ভ্যান্স এই মাসের শেষের দিকে দিল্লিতে আসবেন। আর তুলসি গ্যাবার্ড এবং মাইক ওয়াল্টজ ১৫-১৮ মার্চের মধ্যে ভারতে আসবেন। জানা যাচ্ছে, নয়া দিল্লিতে একটি নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতেই ভারতে আসবেন তুলসি, তার আগে তিনি জাপান ও থাইল্যান্ডেও যাবেন। নিজেই টুইট করে এই খবর দিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত এই মার্কিন গোয়েন্দা কত্রী। অন্যদিকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজের ভারতের অন্যতম প্রধান ভূ-রাজনৈতিক শীর্ষ সম্মেলন, রাইসিনা সংলাপে অংশগ্রহণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে মার্চে যেমন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট-সহ দুই শীর্ষ কর্মকর্তা ভারতে আসছেন, তেমনই ইঙ্গিত রয়েছে এই মার্চেই ভারতে আসতে পারেন স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে এই মাসে অনেক বড় কিছু অপেক্ষা করছে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ড পদে শপথ নেওয়ার পর থেকেই গোটা বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে তাঁর মনোভাব সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি এই কট্টরপন্থী মানসিকতা একেবারেই পছন্দ করেন না। ফলে গত মাসে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওয়াশিংটন ডিসি সফর করছিলেন, তখন ভারত-মার্কিন যৌথ বিবৃতিতে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার কথাও বলা হয়েছিল। এবং এই কাজ ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে একযোগে করতে চায় সেটাও বলা হয়েছিল। সেই সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে পাকিস্তানকে সরাসরি হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছিল যে পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার করে যেন সন্ত্রাসবাদ আর মাথাচাড়া না দেয়। ফলে গুরুত্বটা তখনই বেড়ে গিয়েছিল। আবার নরেন্দ্র মোদি যখন হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাতের জন্য ওয়াশিংটন ডিসিতে গিয়েছিলেন, তখন তিনি তুলসি গ্যাবার্ড প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। গ্যাবার্ড প্রথম মার্কিন কর্মকর্তা যিনি ১২ ফেব্রুয়ারি ব্লেয়ার হাউসে মোদির সাথে দেখা করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদান নিয়ে যে কথা হয় সেটা তাঁরা দুজনেই অকপটে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিকরা।
এই মুহূর্তে যথেষ্ট চাপে রয়েছে পাকিস্তান। সম্প্রতি চাঞ্চল্যকরভাবে পাকিস্তানে একটা আস্ত ট্রেন হাইজ্যাক করে বালোচ লিবারেশন আর্মি। যা এক কথায় অভূতপূর্ব একটি ঘটনা। কিন্তু এই ঘটনার ঠিক আগেই মার্কিন প্রশাসন মার্কিন নাগরিকদের উদ্দেশ্যে একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল যে তাঁরা যেন এই সময় পাকিস্তানে ভ্রমণ না করেন। ফলে প্রশ্ন উঠছে, মার্কিন গোয়েন্দারা কি আগেভাগেই কোনও ইঙ্গিত বা সুস্পষ্ট গোয়েন্দা তথ্য হাতে পেয়েছিল যে পাকিস্তানে বড় কিছু ঘটতে চলেছে? যদিও এই বিষয়ে বিশেষ কিছু জানায়নি মার্কিন প্রশাসন। এবার মার্কিন গোয়েন্দা পরিচালক তুলতি গ্যাবার্ড ভারতে আসছেন। তিনি এমনিতেই নিজেকে হিন্দু পরিচয় দিতে পছন্দ করেন এবং পাকিস্তানকে পছন্দ করেন না। এ হেন তুলসি গ্যাবার্ড ভারতে এসে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সম্মেলনে যোগ দেবেন এবং ভারতীয় গোয়েন্দা এজেন্সিগুলির সঙ্গে মতবিনিময় করবেন সেটা খুবই উল্লেথযোগ্য হতে চলেছে। কূটনৈতিক মহলের মতে, পাকিস্তান ছাড়াও তুলসির সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও উঠবে।
কারণ এই মুহূর্তে বাংলাদেশ জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশাসন একে একে বহু শীর্ষ জঙ্গি নেতা এবং মারাত্মক খুনের আসামীদের জেল থেকে ছেড়ে দিয়েছে। যা নিয়ে ভারত সরকার বারবার আপত্তি জানিয়ে এসেছে। ফলে ধরেই নেওয়া যায়, ভারতের তরফে মার্কিন গোয়েন্দা মহাপরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড এবং মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজকে বাংলাদেশ সংক্রান্ত যাবতীয় গোয়েন্দা রিপোর্ট তুলে দেওয়া হবে। এটা বাংলাদেশের বর্তমান তদরকি সরকারের পক্ষে খুব একটা সুখকর হবে না এটা বলাই বাহুল্য। কারণ, এই তিন মার্কিন শীর্ষ কর্তার পরপরই ভারত সফরে আসতে চলেছেন স্বয়ং ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটা বড় ঝটকা হিসেবে সামনে আসতে পারে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক মহল। বিশেষ করে এই আবহে মুহাম্মদ ইউনূসের চিন প্রীতি এবং চিন সফর ঘিরে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে ভারতে। ফলে মার্চ মাসে পরপর শীর্ষ মার্কিন পদাধিকারিদের ভারত সফর মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য হুমকির হতে চলেছে, এ কথা বলাই বাহুল্য।
Discussion about this post