আর কয়েকদিন পরেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদ থেকে বিদায় নেবেন জো বাইডেন। তিনি যতটা না ভারত বন্ধু হিসেবে পরিচিত, তার থেকে অধিক পরিচিত তাঁর পাকিস্তান প্রীতি। আবার তিনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের খুব ঘনিষ্ট হিসেবেও পরিচিত। তবুও বিদায় বেলায় দুই বন্ধুকে দিয়ে গেলেন চরম ধাক্কা। যার জেরে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এখন চরম বিভ্রান্ত। কোন অঙ্কে বাইডেন ভারতের দুই প্রতিবেশীর উপর শাস্তির খাঁড়া ঝুলিয়ে দিলেন?
দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান এফ-সিক্সটিন কেনার পরিকল্পনা করছিল মুহাম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকার। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস নিজের ব্যক্তিগত যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে আমেরিকার সঙ্গে এফ-সিক্সটিন সংক্রান্ত চুক্তি করার প্রচেষ্টা করছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে জো বাইডেন প্রশাসন তা সরাসরি নাকচ করে দেয়। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মতো দেশের বিমানবাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন অত্যাধুনিক এই যুদ্ধবিমানের প্রয়োজনীয়তা নেই। অপরদিকে, বাইডেন প্রশাসন পাকিস্তানের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত চারটি সংস্থার উপর সবধরণের নিষেধাজ্ঞা জারি করে শাহবাজ শরীফের সরকারকেও প্রবল চাপে ফেলেছে। ফলে এই জোড়া ধাক্কায় বেসামাল ভারতের দুই প্রতিবেশী দেশ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শেষ বেলায় জো বাইডেনের নেতৃত্বে মার্কিন প্রশাসনের এহেন সিদ্ধান্তে কতটা লাভ হবে ভারতের?
বাংলাদেশ আমেরিকা থেকে এফ-১৬ না পেলেও জানা যাচ্ছে চিনের থেকে ১০টি জে-টেন সি মাল্টিরোল ফাইটার জেট কেনার পথে অনেকটা এগিয়েছে। কিন্তু প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিনের অত্যাধুনিক জে-টেন সি মাল্টিরোল ফাইটার জেট আমেরিকার এফ-১৬ এর থেকে ধারে ভারে কিছুটা কম। কিন্তু বাংলাদেশের ইউনূস সরকার এখন ভারত ও মিয়ানমারের সাথে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি যে কোনও মূল্যে করতে উদ্যোগী হয়ে উঠেছে। কিন্তু চিন যে আমেরিকার মতো মুখ ঘুরিয়ে নেবে না, তার কোনও গ্যারান্টি নেই। কারণ, এই মুহূর্তে চিন বেশ চাপে রয়েছে। কারণ চিন মূলত গোটা বিশ্বেই খুব কম দামে ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার আগেই ট্রাম্প চিনকে কার্যত শুল্ক যুদ্ধের হুমকি দিয়ে বসে আছেন।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে বসার আগেই ঘোষণা করে দিয়েছেন, চিনের সামগ্রীর উপর ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক চাপাবেন। যা নিয়ে গভীর চিন্তায় পড়ে গিয়েছে চিন। এই পরিস্থিতিতে বেজিং ভারতের ওপর সুর নরম করতে বাধ্য হয়েছে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কারণ, আমেরিকা যদি চিনা পণ্যে চড়া আমদানি শুল্ক চাপায়, তাহলে বিশ্ব বাণিজ্যে গভীর প্রভাব পড়বে। তাই ভারতের বাজার ধরতে এখন মোদির দিকে ঝুঁকছে বেজিং। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকা ও ভারতকে চটাটে চাইবে না চিনের প্রেসিডেন্ট। কারণ, ভারতকে ভয় দেখাতে চিনের জে-টেন সি মাল্টিরোল ফাইটার জেট কেনার যে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ, তাতে ভারত আপত্তি জানাতে পারে। আবার ডোনাল্ড ট্রাম্পও বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শক্তি বৃদ্ধি মেনে নেবেন না।
সেই অর্থে চিন শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ১০টি জে-টেন সি মাল্টিরোল ফাইটার জেট বিক্রি করে কিনা সেটা দেখার। যদিও এই মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রধান মাথাব্যাথার কারণ হল আরাকান আর্মির আধিপত্য। মিয়ানমারের এই সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দখলে বাংলাদেশের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত। আরাকান আর্মি বাংলাদেশে হিন্দু ও বৌদ্ধদের উপর হওয়া নিয়মিত অত্যাচার মোটেই ভালো চোখে দেখছে না সেটাও তাঁরা খোলাখুলি স্বীকার করেছে। আরাকান আর্মি একপ্রকার হুমকি দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশকে। আবার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়েও আরাকান আর্মি বাংলাদেশকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর হাতে এই মুহূর্তে যে ফাইটার জেটগুলি রয়েছে, সেগুলি অনেক পুরোনো। ফলে এই যুদ্ধবিমান নিয়ে বাংলাদেশ আরাকান আর্মি বা ভারতের বিরুদ্ধে কতটা লড়াই দিতে পারবে, সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
Discussion about this post