জেনারেল ওয়াকার উজ জামান তার ক্ষমতা গ্রহনের এক বছর পার করলেন। নিসন্দেহে খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।এবং কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন সেনাপ্রধান। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অনেক।কিন্তু একটিও রক্ষা করতে পারেন নি। মব জাস্টিস নিয়ে সেনার পক্ষ থেকে কঠিন বার্তা দেওয়া হলেও, কোন কঠিন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি সেনাপ্রধানকে। তাই সেনাপ্রধানকে নিয়ে মানুষের মনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। গতকাল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৮তম প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্ণ করলেন। ২০২৪ সালের ২৩ জুন তিনি সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হন, এমন এক সময়ে যখন দেশ রাজনৈতিক অস্থিরতা, জনরোষ এবং সরকারের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিপর্যস্ত ছিল। এই এক বছরে তাঁর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী শুধু পেশাগত দক্ষতা ও আধুনিকরনের দিকেই অগ্রসর হয়নি, বরং দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে এক নীরব কিন্তু দৃঢ় ভূমিকা পালন করেছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং চরম জনরোষেও সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতা বজায় রাখার দিকেই ছিলেন সেনাপ্রধান। যা হয়তো দেশের মানুষের ক্ষতিই করেছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র ও জনতার নেতৃত্বে শুরু হওয়া গণ-আন্দোলনের সময় সেনাবাহিনী রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব না করে নিরপেক্ষ অবস্থান নেয়। বিক্ষোভ দমন না করে বরং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করে। এই অবস্থান অনেকের মতে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পথ প্রশস্ত করে দেয়।পরবর্তীতে ৫ আগস্ট সেনাপ্রধান নিজেই শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং বলেন, “রাজনৈতিক দল ও ছাত্র-জনতার সমর্থনে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে”।
নৈতিক অবস্থান ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া-সেপ্টেম্বরে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “দেশে ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত”—এই বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে এবং আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ, মানবাধিকার রক্ষা এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণে সেনাবাহিনীর ভূমিকা তুলে ধরেন।
সরকারের অনৈতিকতার বিরুদ্ধে অবস্থান- জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বারবার বলেছেন, তাঁর কোনো ক্ষমতালিপ্সা নেই। তিনি সরকারের দমনমূলক নীতির বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান না নিলেও, সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতা ও নৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখে এক ধরনের নীরব প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। তাঁর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না করেও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ-সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “২০২৫ সালে আমরা একটা দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে যেতে চাই। জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য জরুরি”। তিনি পুলিশ ও বেসামরিক প্রশাসনের পুনর্গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং সেনাবাহিনীর মাঠে অতিরিক্ত উপস্থিতি কমিয়ে আনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
সমালোচনা ও বিতর্ক- তাঁর কিছু পদক্ষেপ যেমন প্রশংসিত হয়েছে, তেমনি কিছু বিতর্কও সৃষ্টি করেছে। মার্চ ২০২৫-এ ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন নেতার সঙ্গে গোপন বৈঠক নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা হয়। তবে এসব বিতর্কের মধ্যেও তাঁর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী পেশাদারিত্ব বজায় রেখেছে।
Discussion about this post