বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে এসেছেন ডঃ খলিলুর রহমান। গত বছর ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের তদারকি সরকারের ক্ষমতা দখলের পর ২০২৪ সালের নভেম্বরে মাসে প্রথমে তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ নিয়োযিত হন। সূত্রের খবর, সে সময়ই খলিলুর রহমান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে বলেছিলেন, ২০ থেকে ২৫ জন ব্রিগেডিয়ার এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার আধিকারিকদের নিয়ে তাঁর অধীনে একটি পৃথক সচিবালয় গঠন করা হোক। যদিও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সেই প্রস্তাব সামনে আসতেই নাকচ করে দেওয়া হয়। মূলত সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান এই প্রস্তাবে সবচেয়ে ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু চক্রান্তের দ্বারা ক্ষমতায় আসা ইউনূস অবশেষে খলিলুর রহমানকে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। পাশাপাশি তাঁকে সেনাবাহিনী বিষয়ক একটা বড় দায়িত্ব দিয়ে দেন। এর ফলে মুহাম্মদ ইউনূস এবং সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারের মধ্যে প্রথম দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। প্রসঙ্গত, ডঃ খলিলুর রহমান মূলত মার্কিন নাগরিক। সে দেশে তিনি রজার রহমান হিসেবে পরিচিত। ফলে একজন বিদেশী নাগরিককে কেন ডঃ ইউনূস বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করলেন সেটা ভেবেই অবাক হয়েছিলেন। কিন্তু সময় যত এগোলো, ততই বোঝা গেল ইউনূসের আসল উদ্দেশ্য ঠিক কি।
রাষ্ট্রপুঞ্জের আড়ালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মিয়ানমারের রাখাইন করিডোর দেওয়ার যে প্রচেষ্টা করছেন ইউনূস সাহেব। সেটার কারণেই খলিলুর রহমানকে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছিলেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের একমাত্র সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামকেও বিদেশি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত খলিলুর রহমানকে দিয়েই করছেন। ফলে যত দিন যাচ্ছে, মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশ্য ও বিধেয় বোঝা যাচ্ছে। আর এটা করতে গিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস খলিলুর রহমানকেই জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের সাথে সংঘর্ষের পথে ঠেলে দিয়েছেন। জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আড়াআড়ি ভেঙে দেওয়ার চক্রান্ত হয়েছে। মূলত, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অধীনে থাকা ১০ম, ১৭তম এবং ২৪তম পদাতিক ডিভিশন এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের মতো কয়েকটি ইউনিটকে কাজে লাগিয়ে সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিলেন। খলিলুর রহমান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হয়েই ছুটে গিয়েছিলেন, ১০ম পদাতিক ডিভিশনের রামু-ভিত্তিক সদর দফতরে। জানা যাচ্ছে সেখানে গিয়েই তিনি আরাকান সেনাবাহিনী এবং রাখাইন-ভিত্তিক বিদ্রোহী সংগঠনগুলিকে রসদ সরবরাহ এবং লজিস্টিক সহায়তা প্রদানের পরিকল্পনা সম্পর্কিত বিষয়গুলির উপর কিছু নির্দেশ ও আদেশ জারি করেছিলেন। সেনাবাহিনীর ভেতরে যারা জেনারেল জামানকে “দৃঢ়ভাবে” সমর্থন করে, তাদের জন্য এটি ছিল অভ্যুত্থানের সমান। ফলে দ্রুতই সেই খবর জেনারেল ওয়াকারের কাছে পৌঁছে যায়। এবং তিনি তাঁর অনুগত সেনা আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন এবং পরিস্কার বুঝিয়ে দেন বাংলাদেশ সেনা বিনা শর্তে কোনও ভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশে সামরিক ক্যাম্প তৈরি করতে দেবেন না।
পরবর্তী সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা হাইকমিশনের চার্জ দি অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি জেকবসন এবং কয়েকজন সামরিক অ্যাটাসে জেনারেল ওয়াকারের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং তাঁকে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়। জানা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের কাছে সেনাপ্রধান একটাই শর্ত চাপিয়েছেন যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অবস্থানকারী কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে রাখাইনে সরিয়ে দিতে হবে। যা একপ্রকার অসম্ভব কাজ। ফলে বারবার আলোচনা করেও বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে রাজি করানো যাচ্ছে না। এবার বাংলাদেশে মার্কিন বেস স্টেশন তৈরি করার প্রচেষ্টার খবর রটতেই নড়েচড়ে বসেছে ভারত। সূত্রের খবর, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ফোনে কথা বলেন ওয়াকার উজ জামানের সঙ্গে। পুরো বিষয়টি জানার পর অজিত ডোভাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদ ঠেকাতে ভারত ও রাশিয়া সহমত হয়েছে। এই মুহূর্তে অজিত ডোভাল রাশিয়া সফরে রয়েছেন। এবং জানা যাচ্ছে চিনের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে রাশিয়ার। ফলে বাংলাদেশকে ঘিরে দ্রুততার সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। এখন ভারত, চিন ও রাশিয়া কাছাকাছি চলে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাসন রুখতে। ফলে দুই-এক দিনের মধ্যেই বাংলাদেশের সেনাপ্রধান বড় কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেন বলেই খবর। অর্থাৎ, মুহাম্মদ ইউনূসের দিন ফুরিয়ে এল বলে।
..
Discussion about this post