গত বছর জুন জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নবতম সংস্করণ জাতীয় নাগরিক পার্টি। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মোঃ ইউনূসের ছত্রছায়ায় এই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সমন্বয়করা আজ বাংলাদেশের বুকে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে বদ্ধপরিকর হয়েছে। আর তাদের এই কর্তৃত্ব দীর্ঘস্থায়ী করতে অথবা ক্ষমতা ধরে রাখতে এই জাতীয় নাগরিক পার্টির জন্ম। মাস কয়েক হল এই রাজনৈতিক দলের উন্মোচন হয়েছে কিন্তু ক্ষমতায়, বৈভবে ও অর্থের প্রাচুর্যে কোনও অংশেই কম যাচ্ছে না, জাতীয় নাগরিক পার্টি। বাংলাদেশেই প্রশ্ন উঠছে, তাঁদের হাতে এত অর্থ আসছে কোথা থেকে?
সম্প্রতি ঈদের সময় জাতীয় নাগরিক পার্টি বেশ কয়েকটি ইফতার পার্টির আয়োজন করেছিল। এর মধ্যে একটি ছিল ঢাকার শহবাগ অঞ্চলের পাঁচ তারা হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে। যেখানে প্রায় ১৩০০ অতিথি অভ্যাগত আমন্ত্রিত ছিলেন। অভিযোগ, ওই পাঁচ তারা হোটেলের বেশ কয়েকটা দামী স্যুইট ও ব্যাঙ্কোয়েট হল জবরদখল করে এই ইফতার পার্টি হয়েছে। আদতে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের মূল মালিকানা প্রতিষ্ঠান হল বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড। যারা গত বছর বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পরবর্তী ছয় মাসে প্রায় ৫১ কোটি টাকা লোকসান করেছে। গত সপ্তাহে বিডি সার্ভিসেস চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সেই আর্থিক প্রতিবেদন থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের আয়, ব্যয় ও লোকসানের তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের প্রথম সারির বাংলা দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে জুন জুলাই এর গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে এই হোটেলে বিদেশী অতিথিদের আনাগোনা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হোটেল চালানোর খরচ কমেনি। তাই লোকসানের বোঝা দিন দিন বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলের একাংশ দাবী করছেন, প্রথমে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও পরে জাতীয় নাগরিক পার্টি নেতা সমন্বয়করা পাঁচ তারা হোটেলের একাধিক দামি সুইট দখল করে বসবাস করছেন। এমনকি তেরোশো লোকের ইফতার পার্টিতেও যে বিপুল খরচ হয়েছে তার বেশিরভাগ অর্থই সরকারি কোষাগার থেকে দিয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি কার বুকে একটি বাণিজ্যিক ভবনের কয়েকটি ফ্লোর দখল করে নিজেদের কার্যালয় স্থাপন করেছে এ খবর আমরা প্রায় সকলেই জানি। কিন্তু সেই দলের নেতা সমন্বয়করা যে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের একাধিক ঘর দখল করে বসবাস করছেন সে খবর অনেকেই জানেন না। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব নেই। উল্লু ঘর রাজনৈতিক দল বিএনপির যে পরিমাণ অর্থ সংকুলান হয়েছে, থাকার কথা নয় এই জাতীয় নাগরিক পার্টির। কিন্তু নব্য রাজনৈতিক দলের নেতা বা সমন্বয়কদের কেউ হেলিকপ্টারে জেলা সফর করছেন, কেউ আবার ১০০-১৫০ গাড়ির কনভয় নিয়ে ঘোরাফেরা করছেন। ইতিমধ্যেই নাহিদ ইসলাম স্যারজি সালাম বা হাসনাত আব্দুল্লাহদের এই উত্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাদের দাবি মত একসময় যারা সামান্য টিউশন করে পড়াশোনা করতেন আজ তারাই বিলাস ব্যসনে মত্ত।
কেউ নামিদামি বিদেশি গাড়ি ব্যবহার করছেন, দামি প্যান্ট শার্ট পড়ছেন। আবার অনেকেই বিয়ে-শাদী করে নতুন জীবন শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু তাদের আয়ের উৎস কি সেটাই জানা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে গুঞ্জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ২৯ মিলিয়ন ডলারের কথা বলেছিলেন হয়তো সেটাই এদের আয়ের উৎস। আমরা জানি বাস কয়েক আগে জর্জ সোরসের পুত্র আলেকজান্ডার সোরস ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টা মোঃ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে গিয়েছেন। জর্জ সোরসের ওপেন ফাউন্ডেশন যে ডিপ স্টেটের বড় অংশীদার সেটা এখন ওপেন সিক্রেট। ফলে অনেকেই দুয়ে দুয়ে চার করছেন। কয়েকটি বিদেশি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে এই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা সমন্বয়কদের একাউন্টে বড় রকমের অর্থ ক্রিপ্ট কারেন্সির মাধ্যমে এসেছিল। যা দেওয়া হয়েছিল মূলত হাসিনা হঠাও আন্দোলন জোরদার করার জন্য।
যদি সেই দাবি সত্য হয়, তাহলে বলতেই হয় এই নাহিদ হাসনাত বা সাদৃশ্যরা মোটেই এখন আর দরিদ্র নন, তারা এখন যথেষ্টই ধনী। এবার তাদের লক্ষ্য বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করা। তাই রমজান মাসে ইফতার পার্টিকেই তারা হাতিয়ার করে দেদার অর্থ ব্যয় করেছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী মহল থেকে শুরু করে অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশিষ্টজনদের খুশি করতে। আর ক্ষমতার জেরে তারা হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল দখল করে আধা সরকারি এই সংস্থার লোকসানের বোঝা বাড়িয়েছেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন কাদের হাতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ?
Discussion about this post