গত জুন মাসে বাংলাদেশে যখন প্রথম অশান্তি শুরু হয়, তখনই আটকে গিয়েছিল ঢাকা থেকে কলকাতাগামী আন্তর্জাতিক ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস। তারপর থেকে ভারতের রেল মন্ত্রক অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলাচলকারী প্রতিটি ট্রেন। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যায় বাস পরিষেবাও। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিমান পরিষেবাও বন্ধ রেখেছিল সবকটি বিমান সংস্থা। জুন-জুলাইয়ের অশান্তির জেরে বাংলাদেশী নাগরিকদের ভিসা দেওয়াও বন্ধ করেছিল ভারত। বাংলাদেশ সীমান্তও সিল করে দিয়েছে বিএসএফ। ৫ আগস্টের পর ঢাকায় অবস্থিত হাইকমিশনের অধিকাংশ কর্মী-অফিসারদের বিশেষ বিমানে ফিরিয়ে এনেছিল নয়া দিল্লি। ফলে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে তদারকি সরকার গঠিত হলেও রেল, সড়ক ও উড়ান পরিষেবা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। তবে খুব সীমিত সংখ্যায় বিমান পরিষেবা শুরু হলেও বন্ধ রয়েছে ট্রেন ও বাস পরিষেবা। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সমস্ত যোগাযোগ?
ট্রেন ও বাস পরিষেবা বন্ধ থাকায় স্থল বন্দরগুলি খাঁ খাঁ করছে। এই স্থল বন্দরগুলি দিয়ে যেমন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হয়, তেমনই দুই দেশের নাগরিক সীমান্ত পাড় করেন। ফলে ভারতের বনগাঁ, গেদে, হিলির মতো শহরে অর্থনীতি এর ওপর নির্ভরশীল। এখন দুই দেশের টানাপোড়েনে চরম সমস্যায় পড়েছেন এই শহরের ব্যবসায়ীরা। গেদে ও বনগাঁ স্টেশনে নেই বাংলাদেশীদের ভিড়। অধিকাংশ মানি এক্সচেঞ্জ কাউন্টার বন্ধ, স্থানীয় রিকশা, টোটো ও অটো চালকদের মাথায় হাত। পাশাপাশি হোটেল ও অন্যান্য দোকানপাট বন্ধ। ফলে চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। একই চিত্র ওপার বাংলার ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
সকলেরই প্রশ্ন, কবে স্বাভাবিক হবে সমস্ত পরিষেবা? জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের অশান্ত অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রথমে ট্রেন চলাচল সাময়িক বন্ধের পক্ষপাতী ছিল ভারতই। যদিও পরবর্তী সময়ে ভারত এই রেল চলাচল শুরুর বিষয়ে উদ্যোগী হলেও এখন বাংলাদেশ সরকার কিছুটা ‘বেঁকে’ বসেছে। বাংলাদেশের রেল কর্তারা মনে করছেন, ভারতের ভিসা ইস্যু স্বাভাবিক না হলে ট্রেনে যাত্রী পাওয়া যাবে না। ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত, এটা পাল্টা চাপ সৃষ্টির কৌশল। যদিও পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানান, বাংলাদেশের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া গেলেই দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল আবার শুরু হবে। কিন্তু আদতে গ্রিন সিগন্যাল দেবে ভারত সরকার। কারণ, এটা খুবই স্বাভাবিক, ভিসা প্রদান বন্ধ থাকলে ট্রেন বা বাসে যাত্রী হবে না। তাই এই পরিষেবা বন্ধ থাকবে। কারণ, এই মুহূর্ত ভারত শুধুমাত্র জরুরি ভিত্তিতে মেডিকেল গ্রাউন্ডে ভিসা দিচ্ছে। বাকি সব ভিসা বন্ধ।
কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেস, খুলনা এবং কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী বন্ধন এক্সপ্রেস এবং নিউ জলপাইগুড়ি ও ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী মিতালি এক্সপ্রেস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। কবে থেকে এই ট্রেনগুলি আবার চালু হবে, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের তরফে কিছু জানানো হয়নি। জানায়নি ভারতের রেল মন্ত্রকও। ১৯ জুলাই থেকে ২৯ নভেম্বর! পুরোপুরি বন্ধ তিনটি আন্তর্জাতিক ট্রেন। এর সঠিক কারণ কি, এই বিষয়ে ভারত সরকার কোনও উচ্চবাচ্য করেনি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, যেহেতু এই মুহূর্তে অশান্ত বাংলাদেশ, তাই বহু মানুষ ভারতে প্রবেশ করে ফিরবেন না। তাই ট্রেন ও বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। অপরদিকে যে সামান্য মেডিকেল ভিসা দেওয়া হচ্ছে, তাও বন্ধ করার দাবি তুলছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা। আবার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারি এবং ভারতের জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগের পর এবার কলকাতার কয়েকজন চিকিৎসক এবং বেসরকারি হাসপাতাল সরাসরি জানিয়ে দিল, তাঁরা বাংলাদেশী রোগী দেখবেন না। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ জটিল।
Discussion about this post