শেখ হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশ কার্যত ডলার সংকটে ভুগছে। সে দেশের বৈদশিক মুদ্রা রিজার্ভ এতটাই কমে এসেছে যে, ভারতের আদানি গোষ্ঠী-সহ বেশ কয়েকটি সংস্থার বকেয়া মেটাতে পারছে না। পাশাপাশি চাল, গম, আলুর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও অনেক ভেবে চিন্তে এগোতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কিছুটা স্বস্তির খবর হতে পারে চলতি ডিসেম্বর মাসেই বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক বা এডিবি-র কাছ থেকে বিপুল পরিমান অনুদান পাবে। কারণ গত সেপ্টেম্বর মাসেই এই দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের তদারকি সরকারকে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ১.১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে। যা এই মাসেই বাংলাদেশের হাতে আসবে। অন্তর্বর্তী সরকার মনে করছে, এই ঋণ পেলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও গতিশীল হবে।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, সে দেশের বহুমুখী সংস্কার এবং উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে বিশ্বব্যাঙ্ক ৫০০ মিলিয়ন অর্থাৎ ৫০ কোটি মার্কিন ডলার এবং এডিবি ৬০০ মিলিয়ন বা ৬০ কোটি মার্কিন ডলার ঝণ পাবে। সবমিলিয়ে ঋণের পরিমান ১.১ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের মুদ্রায় যা গিয়ে দাঁড়াবে ১৩ হাজার ২০০ কোটি টাকায়। বাংলাদেশের অর্থ উপদেষ্টা সালেউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছিলেন, কয়েকটি শর্তে এই ঋণ পাওয়া গিয়েছে। যেমন বেসরকারি এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির দ্বারা নজরদারি, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে খেলাপি ঋণের হিসেব দেখানো এবং নতুন গঠিত টাস্ক ফোর্সের কার্যবিবরণী জমা দেওয়ার শর্ত চাপানো হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন, সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি এবং নতুন করে অস্থির হয়ে ওঠার কারণে দেশটিতে অর্থনৈতিক দুরবস্থা চরমে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে নতুন অন্তবর্তী সরকার। এই অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ- আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, এডিবি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের কাছ আগেই ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য চেয়েছিল। তাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রস্তাব দিয়েছে। আর বিশ্বব্যাঙ্ক ও এডিবি মিলিয়ে আরও ১.১ বিলিয়ন অর্থ সাহায্য পাওয়া গেল। অর্থাৎ, চাহিদার তুলনায় অনেক কম অর্থ সাহায্য পাচ্ছে বাংলাদেশ।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ। তবুও তিনি বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, লাগামছাড়া দুর্নীতিই এর জন্য দায়ি। বিশ্বব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল হোক বা এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক, প্রত্যেকেই ঋণের শর্ত হিসেবে স্বচ্ছ হিসেবনিকেশের কথা বলেছে। কিন্তু ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অর্থ কি ইউনূস প্রশাসন সঠিক কাজে লাগাচ্ছেন? কারণ এর আগে জুন-জুলাই বিপ্লবের সময় হওয়া ক্ষয়ক্ষতি ও আহত ব্যাক্তিদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে বিপুল অর্থ পেয়েছিল বাংলাদেশের তদারকি সরকার। কিন্তু অভিযোগ উঠছে, বহু মানুষ ক্ষতিপূরণের জন্য জুলাই ফাউন্ডেশনে ঘুরে যাচ্ছেন। এমনকি বহু মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন।
এবার বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও এডিবি থেকে পাওয়া ১.১ বিলিয়ন অর্থের বেশিরভাগটাই সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জন্য ব্যবহার করা হবে না, এই গ্যারান্টিও কেউ দিতে পারছেন না। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের তদারকি সরকার চালাচ্ছে জামাত ও তাঁদের সহযোগী কট্টর মৌলবাদী সংগঠনগুলি। ফলে বাংলাদেশ সরকারের নীতি নির্ধারণও তাঁদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। সেই দিক থেকে এবার পাওয়া ঋণ সঠিক কাজে ব্যবহার হতে তো, এটাও একটা বড় প্রশ্ন। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মৌলবাদী সংগঠনগুলি ভারতকে রীতিমতো হুমকি দিচ্ছে। আর তাঁদের এই সাহসের পিছনে রয়েছে পাকিস্তানের মদত। ফলে ঋণ হিসেবে পাওয়া টাকার একটা বড় অংশ চলে যেতে পারে এই সমস্ত জঙ্গি সংগঠনগুলির হাতে। গত বুধবার গভির রাতে ঢাকার সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুন লাগে। তাতে জ্বলে-পুড়ে যায় বহু নথিপত্র। অভিযোগ উঠছে, ওই আগুনে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রণালয়ের বহু নথিও ছাই হয়ে গিয়েছে। বিরোধীদের দাবি, তদারকি সরকারের বিগত পাঁচ মাসের হিসেব নিকেষও পরিকল্পনা করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে টাকা নয়ছয়ের দুর্নীতি সামনে না চলে আসে।
Discussion about this post