বাংলাদেশের অন্দরে এখন যে কার্যকলাপ ঘটছে, তাতে হাস্যকৌতুক দেশ হিসাবে বিশ্ব দরবারে রূপ পাচ্ছে পদ্মাপাড়ের দেশ। ঘটনার ঘনঘটা। বাংলাদেশে প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূস দাবি করেছেন, বাংলাদেশ হল এক আশার বাতিঘর। তিনি যখন কাতারের রাজধানীতে বসে এই দাবি করছিলেন, তখন তারই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলছেন, মব কালচার ঠেকাতে ব্যর্থ সরকার। যত দিন এগোচ্ছে, ততই বাংলাদেশে মব কালচার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি তার জন্য আইন শৃঙ্খলার অবনতিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যার প্রমাণ মিলেছে পুলিস সদর দফতরের পরিসংখ্যান। যখন মোহম্মদ ইউনূস গোটা বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশ নিয়ে আশার কথা শোনাচ্ছিলেন, তখন বাংলাদেশের অন্দরে চলছিল কুপিয়ে হত্যাকাণ্ড। যা ঘটছিল দেশের এক কোণে। রাজধানী ঢাকাতে চলছিল সংঘর্ষ। তারপরও আশার বাতিঘর বাংলাদেশ? যিনি একথা বলছেন, তিনি আবার এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অভিভাবক।
মঙ্গলবার কাতারের রাজধানী দোহাতে অনুষ্ঠিত হয়েছে অর্থনা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫ । যে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূস। সেখানে যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখেন নোবেল জয়ী। জানা যাচ্ছে, এই সম্মেলনটি আন্তর্জাতিক পরিবেশ সম্মেলন। যেটি কাতারের ২২ এবং ২৩ দুদিন ধরে হচ্ছে। কিন্তু এই সম্মেলনটির লক্ষ্য কি? জানা হচ্ছে, কাত্রের উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়ায় টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি এবং অনন্য পরিবেশের বৈচিত্রকে কাজে লাগানো প্রতিশ্রুতি তুলে দেওয়া হবে। এর লক্ষ্য শুধুমাত্র কাতার কেন্দ্রিক। বৈশ্বিক কোনও চিন্তাভাবনা নয়। এই সম্মেলনের যোগ দেওয়ার মধ্যে একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ছিলেন মোহাম্মদ ইউনূস। যারা যারা এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন তারা বেশিরভাগই হয় শিক্ষক আর না হয় এনজিওর কোন বিশেষ সদস্য। এখন প্রশ্ন উঠছে, এরকম একটি বেসরকারি শীর্ষ সম্মেলনে রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে কেন গেলেন? কারণ হিসাবে অনেকে বলছেন, এই সম্মেলনে গিয়ে মোহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য শুনলেই খানিকটা আন্দাজ করা যায়। আর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, আমার বন্ধু এবং অংশীদারদের সম্মান জানাই অন্তর্ভুক্তি কালীন সামাজিক চুক্তি পুন:লিখনের জন্য। পাশাপাশি সামাজিক ব্যবসা এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ভূমিকা অন্বেষণ করতে প্রান্তিক মানুষের জন্য টেকসই অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিদার জন্য সহায়ক। এখানে বিশ্লেষকরা বলছেন, সামাজিক ব্যবসা প্রসারের জন্য কি তিনি কাতারের রাজধানীতে গিয়ে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন?
তিনি ওই সম্মেলনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। গোটা বিশ্বের জন্য বাংলাদেশ আশার বাতিঘর হিসাবে দাঁড়াতে চায়। যখন তিনি কাতারে এই ধরনের বক্তব্য রাখছেন, তখন বাংলাদেশে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে। একটি কলেজের সাইনবোর্ড অন্য কলেজের শিক্ষার্থীরা খুলে নিয়ে গিয়েছে। এমনটাই ছিল অভিযোগ। এমনকি অভিযোগ উঠে এসেছে, এই ঘটনা যখন ঘটছে তখন নাকি প্রায় ৫০ টি পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখ ছিল। এইরকম ঘটনা প্রায় ঢাকাতে ঘটেই চলেছে। যদিও পুলিস ২২ এপ্রিল চড়াও হয়। তাতে ইউনূসের নিগোগ কর্তা হিসাবে পরিচিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতাদের কেউ কেউ। এমনকি অধ্যক্ষ উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনের ডাক দিয়েছে। খবর পাওয়া যাচ্ছে, বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা খুলনাতে যেতে পারেননি। যা নিয়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে বাংলাদেশের অন্দরে। ফোনেতেই নাকি তিনি অনুরোধ করেছিলেন শিক্ষার্থীদের।
যখন মোহম্মদ ইউনূস মধ্য প্রাচ্যে বাংলাদেশ নিয়ে আশার বাণীর আসরে মগ্ন, তখন তার দেশ একেবারে এই ধরণের ঘটনা। তবে এই ঘটনাটি থেমে থাকেন, শোনা যাচ্ছে বোরখা পড়ে বিএনপি কর্মীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ করছে। শোনা যাচ্ছে, ইউনূসের আমলে রাউজানে ৮ জন খুন হয়েছেন। এমনকি 24 ঘন্টায় চট্টগ্রামে প্রায় দশটি জায়গায় সংঘর্ষ মারামারি ঘটনা। প্রত্যেকদিনই বাংলাদেশের কোন না কোন জেলাতে খুন অপহরণ বা ডাকাতির মত ঘটনা ঘটছে। বাদ যাচ্ছে না নারী নির্যাতনও। চট্টগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয়ের পাঁচ জন শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। কিন্তু সরকার এখনো পর্যন্ত তেমন কোন অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এমন অভিযোগও সামনে আসছে। দোষীদের গ্রেপ্তার না করে বরং আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের জোর দাবি উঠছে। এমনকি সেই ভূমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নাকি নির্দেশ দিয়েছেন, হাসিনার দলের মিছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ঠেকাতে হবে। যা ঘিরে বাংলাদেশের অন্দরে নিন্দার ঝড়ও উঠেছিল।
গত ৮ মাসে যে মব কালচার চালানো হচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগই বর্তমান সরকারের সমর্থক এবং বিএনপি’র কয়েকজন সহকারী সংগঠক ও এর সঙ্গে জড়িত। আর এতেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে, নিরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। তবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরো একবার স্বীকার করলেন, মব কালচার ঠেকাতে ব্যর্থ সরকার। এমনকি তিনি একটি সভাতে বলেছেন, মব জাস্টিস এলাও করা যাবে না। এদিকে কাতারে দাঁড়িয়ে ইউনুস বলছেন, বাংলাদেশ একটি আশার বাতিঘর। এবার কার কথা বিশ্বাস করবেন বাংলাদেশের জনগণ? বাংলাদেশের সরকারের বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মাদ ইউনুসকে নাকি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে?
Discussion about this post