বাংলাদেশের খোলামেলা আবদার! শেখ হাসিনাকে ফেরত চায় পদ্মাপাড়। এবার সরাসরি শেখ হাসিনার প্রত্যর্পন চেয়ে ভারতকে নোট ভারবাল বাংলাদেশের। তবে কি সেদেশে হিন্দু নির্যাতন নিয়ে নয়া দিল্লির যে চাপ, সেই চাপ কমাতেই নয়া চাল ইউনুস সরকারের?
সোমবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে জানান, ভারত সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে নোট ভার্বাল বা সরকারিভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশে তাঁর বিচারও হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বিচারের সম্মুখীন করার জন্য এই প্রত্যর্পন। ঢাকা থেকে দিল্লিতে এ বিষয়ে ‘নোট ভারবাল’ পাঠানো হয়েছে বলেও জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
উল্লেখ্য, এর আগেই শেখ হাসিনা কে ফেরত চেয়ে ভারতকে চিঠি দিয়ে আর্জি জানিয়ে ছিল বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র দফতর। এবার হাসিনাকে দ্রুত গ্রেপ্তারির জন্য বাংলাদেশ পুলিশকে ইন্টারপোলের সাহায্য নিতে নির্দেশ দেয় আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত। ইন্টারপোলের মাধ্যমে দ্রুত হাসিনার বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারি করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ ইন্টারপোলকে আবেদন জানানোর বিষয়টিও স্পষ্ট করা হয়েছে । বাংলাদেশের সরকারি আইনজীবী জানাচ্ছেন, যুদ্ধাপরাধ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ইতিমধ্যেই এই সংক্রান্ত চিঠিও ইন্টারপোলকে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তার শুরুটা হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং তার পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে। এরপর এই আন্দোলনের জেরে গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সরকারের পতন হয়। বাংলাদেশ ছাড়েন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপাতত ভারতে আশ্রয় নেন তিনি । হাসিনা পরবর্তী সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রুজু করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সাইদুর রহমানের খুনের ঘটনায় বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-সহ ১৪৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আগেই শেখ হাসিনা-সহ ১৪৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল।
ইউনুস সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছিলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে। আগামী দিনে যা সিদ্ধান্ত হবে এই চুক্তি মেনেই হবে। শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে বিদেশ মন্ত্রকের কাছে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।” এরপরই বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়ে দেন, বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে দিল্লিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতদিন শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে ভারতকে বার্তা দিতে দেখা গিয়েছে একাধিক উপদেষ্টাকে।
ইউনুসও জানিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত নির্দেশ দিলেই হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে ভারতের কাছে আবেদন করা হবে।
প্রসঙ্গত,অক্টোবরের শেষের দিকে আমেরিকার ‘ফিনানশিয়াল টাইমস্’-এর এক সাক্ষাৎকারেও ইউনূস স্পষ্ট করেছিলেন তাঁর অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থানের কথা। তাঁর বক্তব্য এখনই হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরানোর কোনও ভাবনা চিন্তা নেই বাংলাদেশ সরকারের । অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, “হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতা-বিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। আদালতের রায় ঘোষণা হলে আমরা ভারতের সঙ্গে অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে তাঁকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করব।”
এরই মধ্যে সোমবার দুপুরে হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশ চিঠি পাঠিয়েছেন ভারতকে সে কথা জানালেন ইউনূস সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ।
এমনিতেই বাংলাদেশে হাসিনার পতনের পর থেকে দিল্লি ও ঢাকার কূটনৈতিক সম্পর্কে জটিলতা তৈরি হয়।ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরের পরই এই চিঠি পাঠিয়ে কূটনৈতিক দিক দিয়ে দিল্লিকে চাপে ফেলতে মরিয়া বাংলাদেশ।
উভয় সংঙ্কটে ফেলার চক্রান্তও চলছে কারণ একদিকে, বহুদিনের বন্ধু হাসিনা। আরেকদিকে, নতুন করে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনপ্রতিষ্ঠা। এই পরিস্থিতিতে ভারতের পদক্ষেপ কী হবে সেদিকেই তাকিয়ে ওয়াকিবহাল মহল।
Discussion about this post