বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে সরগরম পরিস্থিতি কুটনৈতিক মহলে। চলতি বছরেই সেদেশে ছাত্রআন্দোলন,গণঅভ্যুত্থান থেকে হাসিনার দেশত্যাগ এবং নতুন তদারকি সরকার গঠন সব নিয়েই পটপরিবর্তন হয়েছে। নতুন অন্তরবর্তী সরকার সামাজিক সংস্কারের বদলে কট্টরপন্থী সংগঠন গুলিকে মদত দিয়ে যাচ্ছে। ফলে আজও অশান্তি অব্যহত। এই আবহে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে এবার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন সেদেশেরই একজন ধনকুবের৷
বাংলাদেশি ওই ধনকুবেরের নাম মহম্মদ সইফুল আলম৷ তিনি ওপার বাংলার একজন খ্যাতনামা শিল্পপতি। এস আলম শিল্প গোষ্ঠীর কর্ণধার তিনি৷ এবার তিনিই সরাসরি ইউনূস সরকারকে নিশানা করলেন। শিল্পপতি মহাম্মদ সইফুল আলম তার আইনজীবিকে দিয়ে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের তদারকি সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে৷
শিল্পপতির তরফে বিস্তর অভিযোগ মহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে। জানা যাচ্ছে,শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয়ের পরই মহাম্মদ ইউনুস ক্ষমতায় এসেই এস আলম শিল্প গোষ্ঠীর বিপুল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার খেলা শুরু করেছেন৷
এবার ইউনূস সরকারের পাল্টা অভিযোগ, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন সইফুল আলম কয়েক বিলিয়ন ডলার বেআইনি ভাবে বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন৷ আর এই বেআইনি চক্র থামাতেই ক্ষমতায় এসে মহম্মদ ইউনূস সরকার ওই শিল্পগোষ্ঠীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে৷
এই পাল্টা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পপতির আইনজীবীরা অভিযোগটি বিস্তারিত ভাবে বুঝিয়েছেন, তারা বলছেন, সইফুল আলমসহ তাঁর পরিবারের সমস্ত সদস্যদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি ফ্রিজ করে দিয়েছে বাংলাদেশের তদারকি সরকারের প্রধান৷ এমন কি, আলম এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বাংলাদেশে প্রবেশের উপরেও জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা৷ ফলে বাংলাদেশে নিজেদের যাবতীয় সম্পত্তির এবং ব্যবসার উপরে নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকেন সইফুল আলম৷
আমরা শুরুতেই বলেছিলাম ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ! তাই আরও অভিযোগ, সইফুল আলম বাংলাদেশে যে বিপুল বিনিয়োগ করেছিলেন, গত কয়েকমাসের অরাজকতায় তার একটা বড় অংশই শেষ করে দেওয়া হয়েছে৷ এর জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি বিঁধেছেন সইফুলের আইনজীবীরা৷ পরিপ্রেক্ষিতে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার৷
তবে এই বিষয় নিয়ে গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের তরফে অভিযোগ করা হয়, ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে এড়িয়ে এবং কারচুপি করে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন সইফুল আলম৷ এমনকি আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে এটিকে বড় কেলেঙ্কারি হিসেবেই গণ্য করা হয়৷
প্রসঙ্গত, ফিনান্সিয়াল টাইমস-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, শিল্পপতি মহাম্মদ সইফুল আলম এর দুই আইনজীবী ওই আইনি চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছেন, ২০১১ সাল থেকে পরিবার সহ সইফুল আলম স্থায়ী ভাবে সিঙ্গাপুরে বসবাস করতে শুরু করেন৷ এরপর ২০২০ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্বও ত্যাগ করেন তিনি ও তার পরিবার৷ এবং পাকাপাকি ভাবে ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সইফুল আলম এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব পান৷
উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুরের স্থায়ী নাগরিকের পরিচয়েই ওই শিল্পপতি বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করেছেন৷ ইতিমধ্যেই তার আইনজীবী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূসের পাশাপাশি তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন উপদেষ্টাকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন৷ সেই নোটিসে বলা হয়েছে, ছ মাসের মধ্যে দু পক্ষ বসে বিষয়টি মিটমাট না করলে তাঁরা আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত বা ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ আরবিট্রেশনে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করবেন৷
Discussion about this post