গত দুই দিন ধরে চলছে শহরের আনাচে কানাচে সাফাই অভিযান। ফুটপাথ দখল মুক্ত করতে সক্রিয় পুলিশ। সঙ্গে রয়েছেন পুর আধিকারিকরা। কোথাও বা চলল বুলডোজার। থানায় কর্মীদের সামনে কাতরভাবে অনুনয়-বিনয় করতে দেখা গেল মা-বোনেদের। পেশায় তাঁরা হকার। কিন্তু কোন কথাই কানে নিলেন না পুলিশ কর্মীরা। এই ছবির নেপথ্যে মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার নবান্নের সভাঘরে সাংবাদিক সন্মেলন করেন মমতা। কি ভাবে দিনের পর দিন রাস্তার ধারে বসে পড়ছেন হকাররা? প্রশ্ন তুলে মন্ত্রী থেকে আমলা কেউ সেদিন বাদ জাননি মুখ্যমন্ত্রীর নিশানা থেকে। টাকা খেয়ে প্রশাসনের একশ্রেণির লোক যে এই কাজে মদত দিচ্ছেন সরাসরি উল্লেখ করেনও সেই কথা। বুধবার বিকেলে সাংবাদিক সন্মেলন করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি দাবি করেন, রাতারাতি তো এইসব কিছু হয়নি। এখন ফাঁপড়ে পড়ে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন রাজ্যের ‘দিদি’।
পুরোটাই আইওয়াশ। সদ্য লোকসভা ভোটে প্রমাণিত হয়েছে ওয়ার্ড ভিত্তিক ফলে অনেক জায়গাতেই বিজেপির কাছে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। ভোট হাতছাড়া হচ্ছে বুঝতে পেরেই মুখ্যমন্ত্রীর এমন কর্মকাণ্ড। কোন নোটিশ পাননি দখলদাররা। অথচ ক্যামেরা পৌঁছে গিয়েছে এলাকায় এলাকায়। দাবি বিরোধী দলনেতার। রাজ্যে মমতা সরকারের বড় ভোট ব্যাঙ্ক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। কংগ্রেস, তৃণমূল যাকে সর্বধর্ম সমন্বয় বলে থাকেন বিজেপি তাকেই দেখে তোষণনীতি হিসেবে। এদিন শুভেন্দু দাবি করেন, সল্টলেক, গড়িয়াহাট, এনআরএস এই সব জায়গায় যদি হকার উচ্ছেদ অভিযান চলতে পারে তবে মেটিয়াবুরুজ, পার্ক সার্কাসের মত জায়গায় নয় কেন। বৈষম্যের অভিযোগ তুলে দ্বিচারিতার কথা বললেন বিরোধী দলনেতা। আদতে হকার উচ্ছেদে মুখ্যমন্ত্রীর সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সাংবাদিক সন্মেলন থেকে।
এদিন বিরোধী দলনেতা দাবি করেন, হকার উচ্ছেদ করতে হলে সঠিক উপায়ে হোক। যারা উচ্ছেদ অভিযানে রাতারাতি কাজ হারাচ্ছেন তাঁদের বিকল্প কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা হোক। কথা না শুনলে বুলডোজারের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ার হুমকিও শুভেন্দু। এদিকে বৃহস্পতিবার আরও একবার নবান্নে পুর প্রশাসক, মেয়র, চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠক সারেন মমতা। বৈঠক শেষে বুঝিয়ে দেন, হকার উচ্ছেদে আপাতত কড়া অবস্থান থেকে তিনি নড়ছেন না। তবে হকারদের জন্য ১ মাস সময় সীমা বেঁধে দেন তিনি। পাশাপাশি এও জানিয়ে দেন যে এলাকায় বেআইনি দখল হবে সেখানকার কাউন্সিলরদের গ্রেফতার করা হবে। যত বড়ই নেতা হন না কেন পার পাবেন না।
রাজনৈতিকবিদদের একাংশের মতে বিরোধীরা সরব হতেই নিজের অবস্থান কিছুটা বদল করলেন মমতা। অতীতে হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়িয়ে সরব হয়ে ছিলেন নেত্রী। হকার উচ্ছেদে একশ্রেণির মানুষ কর্মহারা হচ্ছেন। রাজনীতির জল মাপতে নেমে পড়েছেন বিরোধীরা। হকার উচ্ছেদে সঠিক উপায়ের দাবি তুলে হকারদের পাশে দাঁড়িয়ে পড়ছেন শুভেন্দুরা। পরিস্থিতি বুঝেই কড়া অবস্থানে অনড় থেকে কিছুটা অদলবদল আনলেন নেত্রী।
Discussion about this post