আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় প্রতিদিনই নতুন নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। এবার বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন নির্যাতিতার ময়নাতদন্তে অংশ নেওয়া ফরেন্সিক মেডিসিনের প্রফেসর অপূর্ব বিশ্বাস। তাঁকে রবিবার সিজিও কমপ্লেক্সে তলব করেছিল সিবিআই। প্রায় ৬ ঘণ্টা তিনি এবং অন্যান্য চিকিৎসকরা সিজিও কমপ্লেক্সে ছিলেন। সন্ধ্যার দিকে বেরিয়ে এসে তিনি বিস্ফোরক দাবি করেছেন। সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদ সামলে সিজিও কমপ্লেক্সের বাইরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ঘটনার দিনই দ্রুত ময়নাতদন্তের জন্য তাঁদের চাপ দেওয়া হয়েছিল। তাঁর আরও বিস্ফোরক দাবি, রাতের মধ্যেই যদি ময়নাতদন্ত না করা হয় তাহলে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেব। আর এই অভিযোগ করেছিলেন পানিহাটির কাকু। যিনি নিজেকে নির্যাতিতার কাকু বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।
আর জি করের নির্যাতিতা চিকিৎসকের দেহ কী ভাবে সন্ধ্যা ৬ টার পর নিয়ম বহির্ভূতভাবে ময়নাতদন্ত হয়েছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল খোদ সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি সেই রাতেই নির্যাতিতার দেহ অভূতপূর্ব তৎপরতায় পুলিশ প্রশাসন সোদপুর শ্মশানঘাটে দাহকার্য সম্পন্ন করে বলেও অভিযোগ উঠেছিল। এর পিছনে কি কারণ রয়েছে, কোন প্রভাবশালীর নির্দেশে এত তৎপরতা দেখাল আর জি কর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং কলকাতা পুলিশ, সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল সুপ্রিম কোর্টে। পরবর্তী সময় নির্যাতিতার বাবা-মাও একই অভিযোগ করেছিলেন যে তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই পুলিশ তড়িঘড়ি দেহ দাহ করে দেয়। ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে সিবিআই তদন্তকারীরাও সেই প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন। যা তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া স্টেটাস রিপোর্টেও উল্লেখ করেছিলেন।
সিবিআই আর জি কর হাসপাতালে সেদিন উপস্থিত থাকা বেশ কয়েকজন চিকিৎসক এবং কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এবার ডাকা হয়েছিল নির্যাতিতার দেহের ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসক দলকে। সেই দলেই ছিলেন আর জি করের ফরেন্সিক মেডিসিনের প্রফেসর অপূর্ব বিশ্বাস। রবিবার তাঁকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করা হয়েছে। এরপর সিবিআই দফতর থেকে বেরোনোর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ডঃ অপূর্ব বিশ্বাস বলেন, ‘‘কাগজপত্র আসতে কিছুটা দেরি হয়েছিল। নিহত ডাক্তার ছাত্রীর কাকা পরিচয় দিয়ে এক জন আমাদের বলেছিলেন, তাড়াতাড়ি ময়না তদন্ত না-হলে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেব। কে এই হুমকি দিয়েছিলেন এই প্রশ্নের উত্তরে ডঃ বিশ্বাস জানান, যত দূর মনে পড়ছে, তিনি নিজেকে প্রাক্তন কাউন্সিলর বলে পরিচয় দেন। হয়তো ডাক্তার ছাত্রীর এলাকার কাউন্সিলর। এখন ওঁর নামটা আমার মনে নেই। তবে তিনি যে নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার পরিবারের কেউ নন সেটাও বলেন অপূর্ব বিশ্বাস।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কে সেই প্রাক্তন কাউন্সিলর? উল্লেখ্য, আর জি করের নির্যাতিতার দেহ হাসপাতাল থেকে সোদপুরে নিয়ে আসা এবং শ্মশানঘাটে দাহ করা পর্যন্ত তাঁর পরিবারের পাশে ছিলেন প্রাক্তন কাউন্সিলর সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। তিনিই পানিহাটি পুরসভার দাহকার্যের ফর্মে সাক্ষর করেছিলেন নির্যাতিতার পরিবারের পক্ষ থেকে। যদিও পরে জানা যায়, সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় নামে ওই প্রাক্তন কাউন্সিলর ওই পরিবারের প্রতিবেশী এবং পূর্ব পরিচিত। যাকে ইতিমধ্যেই পানিহাটির কাকু বলে ডাকা হচ্ছে। যিনি পেশায় ব্যবসায়ী। মূলত বৈদ্যুতিক প্রকল্পে ঠিকাদারি করেন পানিহাটির কাকু। এবার তাঁর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ ওঠার পর উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। এখন দেখার এবার সিবিআই দফতরে তাঁর ডাক পড়ে কিনা। সোমবার এই বিষয়ে মন্তব্য করেন নির্যাতিতার বাবা। তিনি বলেন, আমি ব্যাপারটা টিভিতে দেখেছি। তবে এটুকু বলতে পারি, আমি বা আমার পরিবারের কেউ এরকম হুমকি দেয়নি।
অপরদিকে এবার সিবিআই দফতরে হাজিরা দিলেন পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ ওরফে নান্টু ঘোষ। মুখ্যমন্ত্রী খুব কাছের মানুষ নান্টু ঘোষ গত ৯ আগষ্ট রাতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলেন পানিহাটিতে নির্যাতিতার বাড়ি এবং শ্মশানঘাটে। সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন সিবিআই তদন্তকারীরা। এদিন পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষ সিজিও কমপ্লেক্সে ঢোকার মুখে দাবি করেন, কিছু কাগজপত্র জমা দিতে এসেছেন। যদিও তাঁর সঙ্গে কোনও কাগজপত্র বা ফাইল ছিল না।
আর জি কর হাসপাতালে যেমন সূর্যাস্তের পর নিয়ম বহির্ভূতভাবে ময়নাতদন্ত হয়েছিল। তেমনই সেই রাতেই তড়িঘড়ি দেহ দাহ করার অভিযোগ উঠেছিল। এই ঘটনার জন্য কে বা কারা দায়ি, কার নির্দেশে এত তৎপরতা দেখাল হাসপাতাল ও পুলিশ, সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আগেই এল বিস্ফোরক দাবি। যা করলেন নির্যাতিতার দেহের ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসক ডঃ অপূর্ব বিশ্বাস। আর তার পরই রাজ্য রাজনীতিতে যুক্ত হল আরেক কাকুর নাম। এর আগে ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের নাম রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলেছিল। এবার আর জি কর কাণ্ডে সামনে এল ‘পানিহাটির কাকু’-র নাম।
Discussion about this post