সাম্প্রতিক অতীতে গোটা ভারতকে নাড়িয়ে দেওয়া আর জি কর কাণ্ডে নতুন মোড়। কলকাতার এই নামী সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিতরই কর্তব্যরত এক পড়ুয়া চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করার অভিযোগ ওঠে। তিনমাস পেরিয়ে যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি এখনও উত্তাল। ঘটনার দিন কয়েকের মাথায় কলকাতা পুলিশ খুন ও ধর্ষণের মামলায় এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। তিনি পেশায় কলকাতা পুলিশেরই সিভিক ভলান্টেয়ার। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল তাহলে কি সর্ষের মধ্যেই ভূত রয়েছে? ঘটনার তিনমাস পেরিয়ে সেই সম্ভাবনাই উজ্জ্বল হচ্ছে। কারণ, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আর জি কর কাণ্ডের তদন্তভার কলকাতা পুলিশের খেকে গিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে। এরপর তদন্তে যত অগ্রগতি হয়েছে, ততই একটা বৃহত্তর ষড়ষন্ত্রের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টে স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দিতে গিয়েও সিবিআই একই দাবি করেছে। পরে সিবিআই মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার ষড়ষন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে আর জি কর মেডিকেল কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে। তদন্ত এখনও চলছে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে। ফলে তদন্ত নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন তোলার অবকাশ নেই।
তবে ওই তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণে যে একমাত্র সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় জড়িত সেটা মোটামুটি মেনে নিচ্ছেন তদন্তকারী সিবিআই আধিকারিকরা। কিন্তু ধৃত সেই সিভিক ভলান্টিয়ার অবশ্য অন্য দাবি করছেন। যা নিয়ে নতুন করে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। শিয়ালদা আদালতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে বিচারপ্রক্রিয়া। এরমধ্যেই একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য করছেন ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। কি কি দাবি করছেন তিনি? তার সাফ দাবি, আমি কিছু করিনি, আমায় ফাঁসিয়েছে বিনীত গোয়েল। অর্থাৎ, সিভিক ভলান্টিয়ার সরাসরি দায়ি করছেন কলকাতার তৎকালীন নগরপালকে। এটা ছিল তাঁর আদালনে ঢোকানোর সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলা বয়ান। ধৃত সিভিক অবশ্যে এখানেই থেমে থাকেননি। আবার গাড়িতে তোলার সময় চিৎকার করে সঞ্জয়ের দাবি, ‘ আমাকে বলতে দিচ্ছে না। আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। বড়় বড় অফিসাররা ফাঁসিয়েছে। ওদের জিজ্ঞাসা করুন, ওরা সব জানে….’
সঞ্জয় রায় প্রিজন ভ্যানের ভিতর থেকে চিৎকার করে আরও অভিযোগ করেন। এবার তিনি তৎকালীন নগরপাল বিনীত গোয়েল ছাড়াও অভিযুক্ত করলেন কলকাতা পুলিশের এক ডিসিকে। তাঁর কথায়, বিনীত গোয়েল ডিসি স্পেশাল আমায় ফাঁসিয়েছে। আমি নাম বলে দিচ্ছি। ওরা সাজিশ করে আমায় ফাঁসিয়েছে। ওরা জানে কেন ফাঁসিয়েছে। যদিও এটা প্রথমবার নয়, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার এর আগেও একই অভিযোগ করেছিলেন। এর আগে তাঁকে আদালতে তোলার সময় একইভাবে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, ‘আমি কিন্তু রেপ আর মার্ডার করিনি। আমায় নীচে নামিয়ে দিল। আমার কথা শুনছে না। পুরো সরকার আমায় ফাঁসাচ্ছে। আমি এতদিন চুপ ছিলাম। আমায় সব জায়গায় ভয় দেখাচ্ছে তুমি কিছু বলবে না, তুমি কিছু বলবে না। এমনকী ডিপার্টমেন্ট আমায় ভয় দেখিয়েছ, আমি পুরোপুরি নির্দোষ। আমায় ফাঁসানো হয়েছে।’
ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, আর জি কর হাসপাতালে ওই তরুণী চিকিৎসকের খুন হওয়ার পিছনে একটা বড় ষড়ষন্ত্র অবশ্যেই রয়েছে। দিনের পর দিন ওই হাসপাতাল দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছিল। শুধু তাই নয়, জুনিয়র চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষা নিয়েও চলছিল দেদার বেনিয়ম। সিবিআই সবদিক তদন্তের আওতায় রেখেছে। এখন দেখার, ধৃতের এই দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে কলকাতা পুলিশের শীর্ষকর্তাদের ভূমিকাও সিবিআই এবার তদন্তের আওতায় নিয়ে আসে কিনা। তাহলে আরও বড় মাথা গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
Discussion about this post