পরপর দুদিনের ঘটনা, তাতেই বুঝিয়ে দিল তফাৎ।
চিত্র – ১
বৃহস্পতিবার সদ্য চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা কলকাতা ও বিভিন্ন জেলায় ডিআই অফিসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। তাঁদের দাবি ছিল কারা যোগ্য ও কারা অযোগ্য তাঁর তালিকা দ্রুত প্রকাশ করার। কিন্তু এই ন্যায্য ও মানবিক দাবি নিয়ে সমাজের মেরুদন্ড শিক্ষককূল যখন দরবার করতে গেল, তখন কলকাতা পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা করল নির্বিচারে, আবার কাউকে কাউকে লাথি মারতেও দেখা গেল। অর্থাৎ শিক্ষকরা পেলেন লাঠি-জুতো।
চিত্র – ২
শুক্রবার কলকাতার মৌলালির কাছে রামলীলা ময়দানে সমাবেশ করে জমায়েত-এ-উলেমা-এ হিন্দ। নতুন ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় তাঁরা মিছিলও করলেন। অথচ তাঁরা পুলিশের অনুমতি পেল, এমনকি কলকাতা পুলিশ সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়ে দিল অমুক সময় অমুক জায়গায় মিছিল আছে, তাই যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত হবে।
এই দুই চিত্রতেই পরিষ্কার রাজ্য সরকার এবং পুলিশ প্রশাসন ঠিক কোন পথে চলছে। অনেকেই যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও সু্প্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি বাতিল হওয়ায় এখন সর্বহারা শিক্ষকরা। তাঁদের বক্তব্য, শিক্ষক হিসেবে কোনও দিন ভাবতে পারিনি, এভাবে পুলিশের মার খেতে হবে। শিক্ষকরা বলছেন, নিয়োগ–দুর্নীতি করেছে রাজ্য সরকার। তাতে স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কর্তাদের পূর্ণ মদত রয়েছে। এখন আদালতের রায়ে যোগ্য–অযোগ্য— সবার চাকরি গেল। কিন্তু এসএসসি বা রাজ্য সরকার কেউই যোগ্য ও অযোগ্য তালিকা দিতে পারলো না! অথচ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজি ইনডোরের ভরা সভায় দাবি করছেন, আমরা চাকরি দিয়েছিলাম। বাম-বিজেপি মামলা করে আপনাদের চাকরি খেয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট আমাদের সুযোগ দিল না। অর্থাৎ তিনিই জাজমেন্ট দিয়ে দিলেন। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়েছে। যাইহোক, পুলিশ কেন শিক্ষকদের লাঠিপেটা করল, সেই বিষয়ে স্পিকটি নট মুখ্যমন্ত্রী। নিন্দুকেরা বলছেন, যেহেতু তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, সেহেতু শিক্ষকদের আন্দোলন করা ঠিক হয়নি। তাই পুলিশ “মৃদু পদক্ষেপ” করল।
অন্যদিকে নয়া ওয়াকফ বিল নিয়ে যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের বিরোধিতা করছে, সেহেতু সংখ্যালঘু সংগঠনগুলির ডাকা যে কোনও প্রতিবাদ কর্মসূচি বৈধতা পাচ্ছে। এই যেমন জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ’ নামে এক সংগঠন কলকাতায় মিছিল করে জমায়েত করলো। কয়েক হাজার মানুষ সামিল হলেন, রাজপথ অবরুদ্ধ হল। পুলিশের ভূমিকা ছিল সুসংহত। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এদের দাবিতে সহমত, তাই তাঁদের বিক্ষোভ মিছিল হল নির্বিঘ্নে। অথচ নিরস্ত্র শিক্ষকরা যখন বিক্ষোভ দেখাতে গেলেন, তখন বীর পুঙ্গব পুলিশবাহিনী সেই নিরীহ শিক্ষকদের ওপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ করলো। এটাই তফাৎ। বিরোধীদের দাবি, এই রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন এখন রাজনৈতিক রঙ দেখে ব্যবস্থা নেয়। ফলে পুলিশের নৈতিকতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
Discussion about this post