কেই হয়তো বলে, মরার উপর খাঁড়ার ঘা! দুর্গাপুজোর আগে রাজ্যের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেই সময়ই শীতকালীন সবজি চাষ করেন কৃষকরা। ফলে প্রাক উৎসবের মরশুমে দক্ষিণবঙ্গে প্রবল বর্ষণ এবং ডিভিসি জল ছাড়ায় কয়েকটি জেলায় তাল ঠুকেছিল বন্যা। আর তাতেই বিঘের পর বিঘে জমিতে ধানের পাশাপাশি জলাঞ্জলি গিয়েছিল শীতের সবজি। সেই পরিস্থিতি কিছুটা হলেও সামাল দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় ফের নতুন করে শীতের সবজি চাষ করেছিলেন কৃষকরা। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ডানার ধাক্কায় তাও দফারফা হতে বসেছে। ফলে দীপাবলী এবং ভাইফোঁটার আগে বাজারে নতুন করে আগুন ধরতে চলেছে বলেই মনে করছেন ব্যবসায়ী মহল।
গ্রীষ্মের সবজির দগদগে ক্ষত এখনও শুকায়নি। এর মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় ডানার দাদাগিরি দেখলো বাংলা। যদিও ঘূর্ণিঝড়টি পড়শি রাজ্য ওড়িশায় ল্যান্ডফল করেছে, তবু এর প্রভাব পড়েছে এই বাংলায়। বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণা, হাওড়া ও হুগলি জেলায় প্রবল বৃষ্টি চলছে। রাজ্যের সিংহভাগ সব্জির জোগান দেয় উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা। পাশাপাশি দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলাও আনাজের সঙ্গে নানা ফসলেরও বড় জোগানদার। আবার পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, নদিয়া ও দুই ২৪ পরগণায় ধান চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। সেই সঙ্গে রয়েছে আলুর চাষও। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী অতি প্রবল বৃষ্টি সবজির ক্ষেত জলের তলায় পাঠিয়ে দিচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে মাটির তলার আলুরও। অল্প সময়ের ব্যবধানে এই ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি মাথায় হাত বসিয়েছে কৃষকদের। পাশাপাশি কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে ব্যবসায়ীদেরও।
পুজোর ঠিক আগেই টানা বর্ষণ এবং ডিভিসি-র ছাড়া জলে বন্যার কারণে ক্ষেতেই পচে নষ্ট হয়েছিল বিপুল পরিমাণ সবজি ও আলু। ফলে লক্ষ্ণীপুজোর বাজারে সবজি মধ্যবিত্তের হাতে ছ্যাকা দিয়েছিল। তার পরে নতুন করে বাজারে আসতে শুরু করেছিল ফুলকপি, পালং, বাঁধাকপি, সিম-সহ শীতের সবজি। ফলে দামও নাগালের মধ্যে আসতে শুরু করেছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ডানার ছোবলে নতুন করে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বন্যার পরে ঘুরে দাঁড়িয়ে নতুন করে চাষ করেও কি রেহাই মিলবে না? ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী বৃষ্টিতে তাই আতঙ্ক ছড়িয়েছে চাষিদের মধ্যে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার চাষিরা ইতিমধ্যেই জমিতে জল ঢোকা আটকাতে তৎপর হয়েছেন। মূলত শীতকালীন সবজি যেমন ফুলকপি, বরবটি, টমেটো, বেগুন, ঝিঙে, পটল, মুলো-সহ বিভিন্ন সবজির চাষ শুরু করেছিলেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই নতুন করে তা বাজারে আসতেও শুরু করেছিল। এখন এই বৃষ্টি লাগাতার কয়েকদিন চললে সবজি মাঠেই পচন ধরতে শুরু করবে। তবে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছেন আলুচাষিরা। কারণ বেশি বৃষ্টি হলেই ক্ষেত জলের তলায় চলে যাবে, ফলে নতুন আলু ওঠার আগেই তা নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে ঘূর্ণিঝড় ডানার প্রভাবে সবজি চাষে ক্ষতি হলে কালীপুজোর আগে আলু ও আনাজের দাম আরও বাড়বে বলেই মত প্রশাসনিক আধিকারিকদের।
Discussion about this post