লোকসভা ভোট মিটেছে। ২০২৬ এ রাজ্যে এবার বিধানসভা ভোট । ভোট ময়দানে কি ফের জোট বাধবে সিপিআইএম-কংগ্রেস? সোমবার দিল্লিতে AICC র সঙ্গে বৈঠক শেষে জোটে ইতিবাচক দিকটি দেখছে রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। সালটা ২০১৬। বাংলার বিধানসভা ভোটে প্রথমবার জোটবদ্ধ হয়ে লড়েছিল কংগ্রেস-বামফ্রন্ট। ঠিক তার ৫ বছর আগে ২০১১ সালে বাংলায় ভরাডুবি হয়েছে লাল দুর্গের। ঘাসফুল ফুটেছে বাংলার মাটিতে। ২০১৬ সালে বামেদের তৃতীয় স্থান দিয়ে রাজ্যের বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে আসে কংগ্রেস। ৪৪ টি আসনে জয় পায় তারা। এরপর ধীরে ধীরে বাংলার বুকে আবির্ভাব হয় বিজেপির।
বামেদের অবস্থা ক্রমশই সঙ্গীন হয়। কংগ্রেসেরও হাল এগোয় সেই পথে। ২০১৯ সালে জোটের ইচ্ছে থাকলেও মুর্শিদাবাদ ও রায়গঞ্জ আসন নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে টানাটানির জেরে এগোয়নি কংগ্রেস ও সিপিআইএমের জোটের ভবিষ্যৎ। তবে প্রতীকী জোটে অংশ নেয় দুই দল। যার জেরে সেই ভোটে পরস্পরের বিরুদ্ধে দু’টি করে আসনে প্রার্থী দেয়নি বাম-কংগ্রেস। বহরমপুরের প্রার্থী অধীর চৌধুরী ও মালদহ দক্ষিণে আবু হাসেম খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রার্থী না দিয়ে তাদের সমর্থনে প্রচারে নামে সিপিআইএম। আবার বাঁকুড়া ও যাদবপুর আসনে সিপিএমের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়নি কংগ্রেস। এরপর ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট। নির্বাচনে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের জোটে নতুন গঠিত দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টকে নিয়ে তৈরি হয় সংযুক্ত মোর্চা। সেই ভোটে বাম-কংগ্রেস শূণ্যে নেমে আসে। ISF এর ঝুলিতে একটি আসন গিয়ে কোনক্রমে মুখ রক্ষা হয় জোটের।
২০২৪ এও লোকসভা ভোটে বাম-কংগ্রেসের মধ্যে জোট হয়। জোটে থাকার কথা ছিল আইএসএফের। তবে নানা কারণে জোট থেকে নাম বাদ পড়ে আইএসএফের। কংগ্রেস ও বামেরা একত্রে লড়াই করে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে। প্রতিবারের মতো এবারও প্রশ্ন ওঠে কংগ্রেসের ভোট বামেদের ঝুলিতে যাওয়া নিয়ে। বাংলার রাজনীতিতে কথিত আছে বামেদের ভোট কংগ্রেসের ঝুলিতে গেলেও কংগ্রেসের ভোট বামেদের ঝুলিতে যায় না। শেষ পর্যন্ত কি হবে সেই আশা-আকাঙ্খা ও সংশয়ের মাঝে লোকসভা ভোটে কংগ্রেস-বাম জোটের প্রতি আস্থা রাখেনি বাংলার মানুষ। এমনকি বহরমপুর থেকে হারতে হয়েছে কংগ্রেসের একনিষ্ঠ সৈনিক তথা বাংলা কংগ্রেসের মুখ অধীর চৌধুরীকেও।
এখন প্রশ্ন ২০২৬ এ বাংলা বিধানসভা ভোট। সেই ভোটে কি ফের দু-দল জোটবদ্ধ হয়ে লড়াই করবে। গত সোমবার বাংলার প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠকে বসে AICC। বৈঠকের পর প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, সিপিআইএমের সঙ্গে হয়তো জোট করেই বাংলার রাজনীতিতে এগোবে কংগ্রেস। সূত্রের খবর বৈঠকে তৃণমূল নিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠে এলেও বামেদের নিয়ে কোন সমালোচনা সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের সামনে করেনি প্রদেশ কংগ্রেস। পাল্টা এআইসিসিও বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে কোন নেগেটিভ বার্তা দেয়নি। আর এই বিষয়টিকে দুইয়ে দুইয়ে চার হিসেবে দেখছে বাংলার কংগ্রেস নেতৃত্ব। অর্থাৎ আগামী বিধানসভা ভোটেও বাম-কংগ্রেসের প্রায় ১০ বছরের জুটিকে ভোট ময়দানে দেখা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
Discussion about this post