শহরে এলাকায় একাধিক পুরসভার পুর ওয়ার্ডে ভোটের ফল খারাপ। এই নিয়ে আগেই উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার উষ্মার সুর উঠে এল মুখ্যমন্ত্রীর গলাতেও। সূত্রের খবর বৃহস্পতিবার নবান্নে বৈঠক ডাকেন মমতা। সেখানেই তাঁকে এই বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করতে শোনা যায় নেত্রীকে। শহরে কি দিনে দিনে পুর পরিষেবার হাল খারাপ হচ্ছে? ভোট শেষে দেখা যাচ্ছে শহরে বিভিন্ন ওয়ার্ড ভিত্তিক তৃণমূলের ফল যথেষ্ট খারাপ। এই নিয়ে আগেই উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন অভিষেক। বেশ কিছু মন্ত্রী ও আমলার কাজের গতিপ্রকৃতি তার যে পছন্দের নয়, সেই সম্পর্কে ঘনিষ্ঠ মহলে কথাও বলেছিলেন। সম্প্রতি রাজনীতি থেকে সাময়িক বিরতি নিয়েছিলেন অভিষেক। সেই সংক্রান্ত পোস্টও করেছিলেন এক্স হ্যান্ডেলে। অভিষেকের করা পোস্ট থেকে শুরু হয় নানা জল্পনা।
ফের কী দলের সঙ্গে দুরত্ব বাড়াচ্ছেন অভিষেক? গতবছরের ঘটনার কী পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে? নানা মুনির নানা মতের মতো নানা প্রশ্ন দেখা যায়। দলীয় সূত্রে জানা যায় লোকসভা ভোট পের হতেই সরকার ও প্রশাসনের কার্যকলাপ নিয়ে আরও বেশি কঠোরতা আরোপ করতে চাইছেন অভিষেক। সরকার ও প্রশাসনিক কাজে কোনরকম ঢিলেমি বরদাস্ত নয়। এটাই বোঝাতে চাইছেন তিনি। গতবছর নবজোয়ার যাত্রায় সামিল হয়েছিলেন অভিষেক। সাধারণ মানুষের সঙ্গে জন সংযোগ ও তাঁদের কোন অভাব-অভিযোগ রয়েছে কিনা, থাকলে তা কেন রয়েছে, সেখানে সরকারের গাফিলতিটাই বা কোথায় ইত্যাদি ইত্যাদি খতিয়ে দেখাই ছিল উদ্দেশ্য। টানা ৫১ দিন ধরে সাড়ে ৪ হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ চলে ছিলেন তিনি। করেছিলেন ১৩৫ টি জনসভা, ৬০ টি বিশেষ অনুষ্ঠান, ১২৫ টি রোড শো ও ৩৩ টি রাতের অধিবেশন।
ভিও- রাজ্যের শাসকদল শুধু নয়। নবজোয়ার যাত্রার উপর চোখ রেখেছিল রাজ্যের শাসক বিরোধী দলগুলিও। ভোটের মুখে কেমন সাড়া মিলবে, সেটা দেখাই ছিল উদ্দেশ্য।‘যাত্রা শুরু হয়েছিল ২৫ শে এপ্রিল উত্তরবঙ্গের কোচবিহার থেকে। ১৬ শে জুন কর্মসূচি শেষ হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে। ৫১ দিনের কর্মসূচি শেষে পুরো কর্মযজ্ঞের পেছনে দলনেত্রীর অনুপ্রেরণার কথাই বলেছিলেন। নবজোয়ার যাত্রা থেকে সাধারণ মানুষের পালস অনেকটাই ধরে নিয়ে ছিলেন অভিষেক। অভিষেককে সামনে পেয়ে কেউ বিধবা ভাতা না পাওয়ার অভিযোগ জানিয়ে ছিলেন, কেউ বা লক্ষ্মী ভাণ্ডার না পাওয়ার অভিযোগ জানিয়ে ছিলেন। ভাতা নিয়ে বিরোধীরা যতই রাজনীতি করুক না কেন সরকারি সুবিদার্থে পাওয়া এই সামান্য ভাতাটুকুও মানুষের জীবনে কতটা জরুরি, তা সামনে থেকে অনুধাবন করেছিলেন।
ভিও- দলের এক অংশ মনে করেন সরকার ও প্রশাসনের বেশ কিছু কাজে অভিষেক অসন্তুষ্ঠ। কাজে ঢিলেমি, লক্ষ্য করা গিয়েছে বেশ কিছু দফতরের মন্ত্রী ও আমলাদের মধ্যে। কোন কাজ শুরু হলে কবে শেষ হবে তা ঠিক নেই। সামনেই ২০২৬ বিধানসভা ভোট। পঞ্চায়েত ভোট ও লোকসভা ভোটের বৈতরণী লক্ষ্মী ভাণ্ডার, সবুজ সাথীর মত প্রকল্পগুলিকে সামনে রেখে পার করা গেলেও বার বার তা সম্ভব নয়। ‘কাজ করলে পদে থাকুন, নইলে রাস্তা দেখুন’ নীতি পুরোপুরি না হলেও সংগঠনের অনেকাংশেই কার্যকর করেছেন অভিষেক। এখন তিনি চান সেই নীতি সরকার এবং প্রশাসনেও কার্যকর হোক।তৃণমূল যখন পরের বিধানসভা ভোটে যাবে, তখন দলের মাথায় থাকবে ১৫ বছরের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা। এখন থেকে যদি সময় বেঁধে কাজ না করা হয়, তা হলে শুধুমাত্র সংগঠন দিয়ে বিধানসভার বৈতরণী পার করা অসম্ভব।
ভিও- এরই মধ্যে আবার রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভার চেয়ারম্যানদের নিয়ে আগামী সোমবার ফের বৈঠক ডেকেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিঃসন্দেহে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ১৪৪ ওয়ার্ড বিশিষ্ট কলকাতা পুরসভায় বছর দুয়েক আগে পুরভোটে যেখানে মাত্র ৩টি ওয়ার্ডে জিতেছিল বিজেপি, সেখানে এবার লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে ৪৫টি ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে তারা। কলকাতার ২টি লোকসভা আসন। সেখানে তৃণমূল জিতলেও বহু ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। একাধিক হেভিওয়েট কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে তৃণমূল বিধায়ক, দক্ষিণ কলকাতার জেলা সভাপতি ও মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার- তাঁর ওয়ার্ড ৮৫। সেখানে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। রাজ্যের হেভিওয়েট মন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর আস্থাভাজন শশী পাঁজার নিজের ওয়ার্ড এবং তাঁর মেয়ে পূজা পাঁজার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডেও পিছিয়ে তৃণমূল। এর আগেও অভিষেকের কথার প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে নবান্নে। আদতে ওয়ার্ড ভিত্তিক ভোটে পিছিয়ে পড়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছে তৃণমূল। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
Discussion about this post