সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচুর রয়েছেন মঞ্চে। সেই মঞ্চ থেকেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিচারব্যবস্থায় রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন। শনিবার কলকাতায় ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির একটি অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ভারতের প্রধান বিচারপতি। সেখানেই আমন্ত্রিত ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। উপস্থিত ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম-সহ অন্যান্য বিচারপতিরা। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রীর তাৎপর্যপুর্ণ মন্তব্য, “বিচারব্যবস্থায় রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব উচিৎ নয়”।
সাম্প্রতিককালে কলকাতা হাইকোর্ট একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবারই সেই রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বেশ কয়েকটি রায় প্রসঙ্গে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট বলে দাবি করেছিলেন। এই আবহেই শনিবার দেশের মুখ্য বিচারপতির সামনে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহল। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি কোনও উদ্দেশ্য করে বলছি না, কাউকে আঘাতও করতে চাইছি না। তবে এটা বলতে চাই, বিচারব্যবস্থা রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থআকলে মানুষ কোথায় যাবে? তিনি আরও বলেন, বিচারব্যবস্থা আমাদের কাছে অতি পবিত্র। মন্দির-মসজিদ-গির্জা-গুরুদ্বারের মতো। সরকার বিচারব্যবস্থার সঙ্গে রয়েছে। আমার একান্ত অনুরোধ, বিচারব্যবস্থায় কোনও রকম রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থাকা উচিৎ নয়। বিচারব্যবস্থা সৎ এবং নিরপেক্ষ থাকা উচিৎ। পাশাপাশি বজায় থাকা উচিৎ গোপনীয়তাও”।
অনুষ্ঠানে দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, জনতা বলেন, আদালত ন্যায় বিচারের মন্দির। আমরা নিজেদের সেই মন্দিরের দেবতা বলে ভুল করি। এটা খুব বিপদের। তিনি বিচারপতি এবং বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিচারকরা বিচার করুন, কিন্তু অন্যের সম্পর্কে আগেভাগে কোনও ধারণা তৈরি করে ফেলবেন না। সহানুভুতি রেখে বিচার করতে হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের সামনে যাঁরা দাঁড়িয়ে, তাঁরা সাধারণ মানুষ।
প্রসঙ্গত, কলকাতা হাইকোর্টের কয়েকজন বিচারপতির দেওয়া রায় নিয়ে বারবার সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যেই বিচারপতিদের নাম না নিয়ে রায়ের সমালোচনা করেছেন। এমনকি প্রকাশ্যেই কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিজেপির সঙ্গে যোগোযোগের অভিযোগও করেছেন। এদিন জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই বিষয়টিই খুঁচিয়ে তুললেন। যদিও এদিন মুখ্যমন্ত্রী মজার ছলে বলেন, আমিও আইনের লোক। আমি তিন-চারটি কেস লড়েছি। এখনও বার অ্যাসোশিয়েশনের সদস্য। আপনারা সুযোগ দিলে আমি আবার আইন চর্চা করতে পারি।
Discussion about this post