হাওড়া ব্রিজ বা রবীন্দ্র সেতু, দ্বিতীয় হুগলি সেতু বা বিদ্যাসাগর সেতু দিয়েই এখন কলকাতাবাসী গঙ্গা পাড়াপাড় করেন। এবার তৃতীয় সেতুর নির্মানের সমস্ত বাঁধা কেটে গেল। ফলে খুব শীঘ্রই সেই সেতু নির্মানের কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে যাবে বলে আশা করছেন রা্জ্যবাসী। গঙ্গার উপর প্রস্তাবিত এই তৃতীয় সেতুটি বারানসী-কলকাতা এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে জুড়ে যাবে। ফলে খুব সহজেই যানজট এড়িয়ে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়ি কলকাতায় চলে আসতে পারবে। এতদিন জমিজটের কারণে এই সেতুর পরিকল্পনা ঝুলে ছিল। সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় জমি বন্দ্যোবস্ত করে ফেলেছে। জানা যাচ্ছে, এখন কেন্দ্রীয় সরকারের অধিনস্থ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের চূরান্ত ছাড়পত্রের অপেক্ষায় রয়েছে রাজ্য সরকার।
সূত্রের খবর, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে বারানসী-কলকাতা এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সঙ্গেই গঙ্গার উপর এই তৃতীয় সেতু নির্মানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল নবান্নের তরফ থেকেই। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সেই প্রস্তাব প্রাথমিকভাবে মেনেও নিয়েছিল। কিন্তু বরাবরের মতোই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় জমি। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ বা কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনীয় জমি জোগাড় করে দেওয়ার শর্ত দেয় রাজ্য সরকারকেই। সেই মতো দক্ষিণ ২৪ পরগণায় জমির খোঁজ শুরু হয়। অবশেষে প্রয়োজনীয় জমির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে নবান্ন সূত্রে। জানা যাচ্ছে, হুগলি বা গঙ্গা নদীর উপর এই সেতু হাওড়ার বাগনান থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিষ্ণুপুরের কাছে এসে মিশবে। সেখান থেকে একটি পথ চলে যাবে জোকার দিকে, অন্যটি চলে যাবে ডায়মন্ড হারবারের দিকে। হুগলি নদীর উপর এই সেতু এবং দুটি রাস্তার জন্য বিষ্ণুপুর এবং সংলগ্ন এলাকায় প্রয়োজনীয় জমি চিহ্নিত করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন।
নবান্ন সূত্রে খবর, কেন্দ্রের জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ প্রথমে পরিকল্পনা করেছিল, বারানসী-কলকাতা এক্সপ্রেসওয়ে হাওড়ার বাগনানের কাছে মুম্বই রোডে এসে মিশবে। কিন্তু রাজ্য সরকার দাবি করে, এতে সমস্যা আরও বাড়বে। বাগনানে যানজটে আটকে পড়বে, ফলে স্থায়ী সমাধান হবে না। বরং বাগনান থেকে ওই নির্মিয়মান রাস্তা হুগলি নদী পেড়িয়ে সোজা ডায়মন্ড হারবার রোডে এসে মিশলে সুবিধা হবে বলে জানায় নবান্ন। কেন্দ্রীয় সরকার নবান্নের এই দাবি মেনে নিয়ে প্রয়োজনীয় জমি জোগাড় করে দিতে বলে। প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে এর জন্য বাগনান থেকে হুগলি নদী পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার এবং নদী পার করে আরও ১৭ কিলোমিটার এগোবে বারানসী-কলকাতা এক্সপ্রেসওয়ে।
ফলে কমবেশি ৩৩ কিলোমিটার পথের জন্য জমির প্রয়োজনীয়তা ছিল। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, সড়ক পরিকাঠামো খাতে কেন্দ্রের থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার সুবিধা পেতে চলেছে রাজ্য। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ইতিমধ্যেই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এই রাজ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প শুরু করেছে। এরমধ্যে যেমন বারানসী-কলকাতা এক্সপ্রেসওয়ে রয়েছে, তেমনই ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ রক্সৌল-হলদিয়া এক্সপ্রেসওয়ে, খড়গপুর-মোড়গ্রামের মধ্যে প্রায় ২৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে এবং না এক্সপ্রেসওয়েতে এলিভেটেড বা ঝুলন্ত সড়ক পরিকাঠামো রয়েছে। এবার হুগলি নদীর উপর তৃতীয় সেতু নির্মান হলে তার ব্যায়ভারও কেন্দ্র বহন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
Discussion about this post