নিজের জুতো এক হাতে নিয়ে, অন্য হাতে ধুতির খুঁট হাঁটুর উপর তুলে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছেন এক বয়স্ক ব্যক্তি। কারণ, তাঁর ঘরের উঠোন থেকে শুরু করে সামনের রাস্তা জলমগ্ন। ঘূর্ণিঝড় ডানা কলকাতায় সে রকম প্রভাব না ফেলতে পারলেও ছাপ রেখে গিয়েছে প্রবল বর্ষণের মাধ্যমে। শুক্রবার সকাল থেকেই তাই কলকাতার আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢেকেছিল। সারাদিন অবিরাম বর্ষণে তিলোত্তমা কলকাতার একটা বড় অংশ জলের তলায় চলে যায়। প্রথমেই যে ব্যক্তির উল্লেখ করা হল, তিনি আর কেউ নন, দমদম লোকসভা কেন্দ্রের দীর্ঘদিনের সাংসদ সৌগত রায়। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথমসারির নেতা এবং সাংসদ। সংসদীয় রাজনীতিতে অতি পরিচিত নাম। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ কলকাতার লেক গার্ডেন্স এলাকায়। এই অঞ্চলে জল জমার সমস্যা দীর্ঘদিনের। ফলে শুক্রবারও প্রবল বর্ষণের পর হাঁটু জল জমে যায় লেক গার্ডেন্সের বিস্তৃর্ণ এলাকায়। সাংসদ সৌগত রায়ের বাড়িতেও জল ঢুকে যায় স্বভবতই। বিরক্ত সাংসদ বললেন, জানি না কেন জল জমে, তবে এই এলাকায় বরাবরই জল জমে।
রাজ্যের শাসকদলের দাপুটে সাংসদ সৌগত রায়কে এদিন যথেষ্টই বিরক্ত দেখিয়েছে। বিশেষ করে সাংবাদিকদের প্রশ্নের সামনে তাঁকে আমতা আমতা করতেও শোনা গেল। তবে তিনি স্বীকার করে নেন, তাঁর বাড়ির এলাকায় বরাবরই জল জমে যায় বৃষ্টি হলে। তবে যদি সময়টা সামান্য পিছিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় গত মে মাসে। এই সৌগত রায়কেই সেবার দেখা গিয়েছিল অন্য ভূমিকায়। আপনাদের হয়তো মনে আছে, ২০২৪ লোকসভা ভোটের ঠিক আগেই বাংলার দিকে ধেয়ে এসেছিল ঘূর্ণিঝড় রেমাল। তাতে কলকাতা এবং সংলগ্ন জেলাগুলি কার্যত লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় রাজনৈতিক দলগুলি এবং ভোটপ্রার্থীরা প্রচারও করছিলেন জোরকদমে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের পর দমদমের বিস্তৃর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে গিয়েছিল। অনেক জায়গায় গাছ ভেঙে পড়েছিল।
জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছিল। সে সময় দমদমের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায় ভোট প্রচার ছেড়ে ছুটে গিয়েছিলেন দমদম পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। বিটি রোড সংলগ্ন অলি-গলিতে বাঁশ হাতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সৌগত রায় বাঁশ হাতে ড্রেনের মুখ খুঁচিয়ে জল বের করার পথ করার চেষ্টা করেছিলেন। আবার কখনও তাঁকে দেখা গিয়েছিল জেসিবি-র স্টিয়ারিংয়ে উঠে বসেছেন। রাস্তায় ভেঙে পড়া গাছ এবং একটি কারখানার চিমনি তিনি জেসিবির সাহাস্যে সরানোর চেষ্টা করছেন। জেসিবি-র সিটে তাঁর পাশেই বসেছিলেন অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আবার বরাহনগর বিধানসভা উপনির্যাচনে তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন। ফলে ভোট প্রচারে নেমে বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা কতই না রঙ্গ করেছিলেন লোকসভা ভোটের আগে। কিন্তু এবার ঘূর্ণিঝড়ে কলকাতায় একটাও গাছ বা লাইট পোস্ট ভেঙে পড়েনি। তবুও একটানা বৃষ্টিতে রাস্তায় রাস্তায় জল জমে যায়। যা নিয়ে রীতিমতো বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রবীন সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেন, সকাল থেকে বাড়িতেই আটকে ছিলেন। কিন্তু জরুরি কাজ থাকায় তাঁকে জল ডিঙিয়েই বেরোতে হচ্ছে।
সাংসদ সৌগত রায় যদিও কলকাতা পুরসভাকে সরাসরি দায়ি করেননি। কিন্তু তিনি প্রকাশ্যেই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, কলকাতায় সামান্য বৃষ্টি হলেই লেক গার্জেন্সে জল জমে যায়। আর এটা দীর্ঘদিনের রোগ সেটাও অকপটে স্বীকার করেছেন প্রবীন সাংসদ। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কলকাতার মেয়র পাল্টা বলেন, সৌগত রায়ের বাবা যখন ওই এলাকায় বাড়ি তৈরি করেছিলেন, সেই সময় থেকেই সেখানে জল জমে। তবে এবার বালিগঞ্জ পাম্পিং স্টেশন সমস্যার কারণে বন্ধ রাখতে হয়েছিল। তাই জল জমে গিয়েছে। শহর কলকাতায় জল জমার ইতিহাস অতি প্রাচীন। যদিও তৃণমূল সরকারের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়করা বরাবরই দাবি করে আসছেন তাঁদের আমলে কলকাতা অনেকটাই উন্নত হয়েছে। এখন জল জমার সমস্যাও নেই। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ডানা পরবর্তী বৃষ্টিপাতেই সেই দাবি নস্যাৎ হয়ে গেল। এমনকি সাংসদের বাড়ির ভিতরেও ঢুকে গেল জল। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, কলকাতার পরিস্থিতি বিগত ১৩ বছরে খুব একটা উন্নতি হয়নি।
Discussion about this post