মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ আইনের বিরোধী উগ্রপন্থীদের শিকার এলাকার হিন্দুরা। একদিকে রাজ্যের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ নিজের দেশে প্রাণ বাঁচাতে দিশাহারা ! অন্যদিকে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাকর্মীরা রয়েছেন খোঁজমেজাজে। এই দুটি চিত্রই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, আইনশৃঙ্খলার এই অবনতি ঘটতে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার দায়ী, বলছেন রাজ্যের বিরোধীদল গুলি।
সম্প্রতি রাজ্যের বিরোধীরা একটি পোষ্টের মাধ্যমে তুলে ধরেছে রাজ্যের ভিন্ন দুটি চিত্র। এই পোস্টের প্রথম ছবিতে দেখা যাচ্ছে মুর্শিদাবাদ এর হিংসাত্মক পরিস্থিতির কারণে এলাকাছাড়া হয়ে হিন্দুরা অন্য একটি হিন্দু এলাকায় এসে আশ্রয় নিয়েছে এবং সেই এলাকার মানুষজন তাদের সামর্থ্য মতো সামান্য কিছু খাবার জোগাড় করে দিয়েছে। যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আর দ্বিতীয় ছবিতে দেখা যাচ্ছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সংসদ ডেরেক ওব্রায়েন রবিবার তার মধ্যাহ্নভোজের ছবি তুলে ধরেছেন। যেখানে ভাত মাছ ও অন্যান্য পদ রয়েছে। অর্থাৎ শাসক দল বিরোধীদের এই পোস্টে বোঝানোর চেষ্টা করা যেখানে মালদা ও মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের উগ্রপন্থীদের দাপটে হিন্দুরা ঘর ছাড়া এবং অনাহারে দিন কাটাচ্ছে সেখানে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা ফুর্তিতে ব্যস্ত।
উল্লেখ্য,ওয়াকফ বিরোধী আন্দোলনের নামে মুর্শিদাবাদে হিন্দু নিধন যজ্ঞ চলছে বলে দাবি করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। একই সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য তিনি দায়ী করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর তোষণ রাজনীতিকে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যখন ব্যর্থ রাজ্য পুলিশ তখন ঘটনাস্থলে নেমেছে বিএসএফ । তারইমধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবি তোলেন শুভেন্দু অধিকারী। বিরোধী দলনেতার আর্জিতে এবার সাড়া দিয়ে কেন্দ্র বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের স্পেশাল বেঞ্চের।
শনিবার হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি রাজা বসুচৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, অপ্রীতিকর হিংসার অভিযোগ এলে আদালত চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না। শান্তিরক্ষা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে রাজ্য পুলিশকে কাজ করতে হবে। যারা প্রকৃত দোষী, তাদের চিহ্নিত করারও নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি রাজ্যের অন্যান্য এলাকাতেও এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর মোতায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে হাইকোর্টের স্পেশাল বেঞ্চের তরফ থেকে।
সূত্র বলছে নতুন সংশোধনী ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় বিক্ষোভ মিছিলে পথে নেমেছিলেন বেশ কিছু সংগঠন। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হওয়ায় এই আন্দোলন বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে মুর্শিদাবাদ থেকে মালদার বিভিন্ন এলাকায়। এরপর দেখা গিয়েছে বিক্ষোভকারীরা রেলপথ অবরোধ করে এবং ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ার অভিযোগ ওঠার পর ভারতীয় রেল ট্রেন বাতিল করে এবং কিছু ট্রেনের যাত্রাপথ পরিবর্তন করে। এমনকি বিক্ষোভকারীরা সমসেরগঞ্জে মহাসড়ক অবরোধ করে, যার ফলে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। তারা পুলিশ কর্মীদেরও লক্ষ্য করে হামলা চালাতে থাকে। হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে আর এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা মন্ত্রী থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী সকলেই নির্বিকার অভিযোগ বিরোধীদের।
Discussion about this post