র্ণিঝড় ডানা মোকাবিলায় নবান্ন থেকে কলকাতা পুরসভা, প্রস্তুতি ছিল তুঙ্গে। গত বৃহস্পতিবার সারারাত নবান্নে কাটিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইভাবে কলকাতা পুরনিগমের কন্ট্রোল রুমে রাতভর জেগে ছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কাঁদের বক্তব্য ছিল, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে যদি কলকাতা বা সংলগ্ন জেলায় যদি কোনও বিপর্যয় নেমে আসে, তাহলে দ্রুততার সঙ্গে তার মোকাবিলা করা। মুখ্যমন্ত্রী বা কলকাতার মেয়র, দুজনেই উচ্চকণ্ঠে দাবি করেছিলেন, কলকাতায় জল জমতে দেব না। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল, কলকাতায় পাম্পিং স্টেশনগুলি উন্নত হয়েছে, পাশাপাশি তাঁরা নিয়মিত ড্রেজিং করেন, তাই এখন কলকাতায় জল জমবে না। আর জমলেও তা দ্রুত নেমে যাবে।
কলকাতার মেয়রও একই দাবি করেছিলেন, কলকাতায় জল জমলেও একঘণ্টার মধ্যে তা নামিয়ে দেওয়া যাবে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ডানা কলকাতায় সেভাবে খেলা দেখাতে না পারলেও, শুক্রবার থেকে টানা বৃষ্টিতে মেয়রের দাবি ভুল প্রমাণিত হয়ে গেল। দেখা গেল, টানা বৃষ্টিতে কলকাতার অধিকাংশ রাস্তায় জলের ধারা বইছে। এমনকি এসএসকেএম, কলকাতা মেডিকেল কলেজ, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের বহু বিভাগও জলের তলায়। এরপরই ১৮০ ডিগ্রি ঙুরে গিয়ে মেয়র দাবি করলেন, নতুন করে বৃষ্টি না হলে, ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যেই জল বেরিয়ে যাবে।
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, শুক্রবার দিনভর সারা কলকাতা জলমগ্ন থাকল। এমনকি তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়কে দেখা গেল লেক গার্ডেন্সে তাঁর বাড়ির সামনে এক হাঁটু জল ডিঙিয়ে বের হচ্ছেন। এমনকি তাঁকে জমা জল নিয়ে বিরক্তি প্রকাশও করেছেন মিডিয়ার সামনে। আবার বিকেলের পর ভবানীপুর এলাকায় বাড়ির সামনেই বিদ্যুস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক যুবকের। কলকাতা পুরসভার কর্মীরা দিনভর চেষ্টা করেও জল কমাতে পারলেন না। বরং একজন জলজ্যান্ত যুবকের মৃত্যুও প্রত্যক্ষ করল শহর কলকাতা। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বারবার জল না জমার দাবি করলেও কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অধিক বৃষ্টি হলেই জলমগ্ন হয়ে পড়ছে কলকাতা। এমনকি একটানা বৃষ্টি হলে জমা জল নামছে না, বরং জল বাড়ছে। শনিবার সকালেও কলকাতার অনেক রাস্তায় জল নামেনি বলেই অভিযোগ। প্রশ্ন হচ্ছে কেন বারবার জলমগ্ন হচ্ছে কলকাতা?
মেয়রের দাবি শহর কলকাতায় মোট ৮৭টি পাম্পিং স্টেশন রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ডানা মোকাবিলায় মোট ৪৮৩টি বড় পাম্প চালানো হয়েছে। তবুও জল জমল, এবং সেই জলের ধারা কলকাতার ছোট, বড় রাস্তায় দিনভর নদীর ন্যায় বয়ে চলল। অথচ. ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কলকাতায় এবার একটাও গাছ উপড়ে যায়নি, একটাও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েনি। তবুও জল জমে দিনভর ভোগান্তির শিকার হলেন কলকাতাবাসী। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছিলেন মেডিকেল কলেজগুলিতে চিকিৎসা করাতে আসা সাধারণ মানুষ। এসএসকেএম হাসপাতালের রোনাল্ড রস ভবন, প্রসূতি ও সদ্যোজাত বিভাগ, ফার্মেসি বিভাগ, অক্সিজেন স্টোর, ক্যান্টিন পুরোপুরি জলমগ্ন হয়ে পড়ে শুক্রবার।
ফার্মেসি বিভাগের ভিতরে এতটাই জল জমে যায় যে ওষুধ বাঁচিয়ে রাখাই দায় হয়। পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনেও জমে রয়েছে জল। পাশাপাশি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে জল জমেছিল বহির্বিভাগের সামনেও। একই হয়রানির ছবি দেখা গেল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৬ নম্বর গেটের সামনে। সেখানে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ যেন বহমান নদী। ঘূর্ণিঝড় ডানার ল্যান্ডফলের পর থেকেই শুক্রবার সকাল থেকে আকাশ ঘন কালো করে বৃষ্টি শুরু হয়। দিনভর ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে। ফলে কলকাতা পুরসভার জল বের করার ব্যবস্থা যে কতটা কমজোরি, সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ঘূর্ণিঝড় ডানা। মেয়র বা মুখ্যমন্ত্রী যতই দাবি করুক, কলকাতা আছে কলকাতাতেই।
Discussion about this post