গত ১৬ মার্চ আসন্ন লোকসভা ভোটের নির্ঘন্ট ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে সাত দফায় সম্পন্ন হবে দেশের সাধারণ নির্বাচন। রাজ্যের ৪২ আসনের মধ্যে ১৬টি আসনে পরিবর্তন হতে পারে জয়ের রঙ। বিজেপি না তৃণমূল, বাংলায় কারা এগিয়ে থাকবে তা নির্ভর করতে পারে এই ১৬ কেন্দ্রের ফলাফলের উপর। প্রথমে দেখে নেব
ঝাড়গ্রাম
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী কুনার হেমব্রম। ৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৮৩ ভোট পেয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় হয়েছিলেন তৃণমূলের বীরবাহা সোরেন। জোড়াফুল শিবিরের প্রার্থী ভোট পেয়েছিলেন ৬ লাখ ১৪ হাজার ৮১৬ ভোট। ১১ হাজার ৭৬৭ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন কুনার হেমব্রম। ৫ বছর আগের সেই পরিস্থিতি পালটে গিয়েছে বর্তমান সময়ে। জঙ্গলমহলের এই জেলায় সংগঠন শক্ত করেছে জোড়াফুল শিবির। তবে এই অঞ্চলের ৩৫ শতাংশ কুড়মি ভোট জনজাতি তালিকাভুক্তি-সহ নানান দাবিতে একাধিকবার রেল ও পথ অবরোধ করেছে। আসন্ন নির্বাচনে নিজেদের সমাজ থেকে প্রার্থীও দিয়েছেন কুড়মি নেতারা। ফলে তাদের ভোট বড় ফ্যাক্টর গড়ে দেবে।
আসন্ন ভোটে ঝাড়গ্রাম আসনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করেছে কালীপদ সোরেন, বিজেপির হয়ে লড়াই করছেন প্রণত টুডু। অন্যদিকে বামেরা প্রার্থী করেছে সোনামণি মুর্মুকে। প্রসঙ্গত সাঁওতালি সাহিত্যজগতের উজ্জ্বল নাম কালীপদ সোরেন ২০২২ সালে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান পান। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে জঙ্গলমহল সফরে গিয়ে তাঁকে বঙ্গবিভূষণ সম্মানে ভূষিত করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী প্রণত টুডু পেশায় চিকিৎসক। ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের চাকরি থেকে সদ্য ইস্তফা দেন তিনি। এরপর পদ্ম শিবির তাঁকে ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনে প্রার্থী করে। অন্যদিকে বামপ্রার্থী সোনামণি মুর্মু ইউনিসেফের হয়ে আদিবাসী গ্রামে ঋতুস্রাব নিয়ে কাজ করেছেন। কিশোরী থেকে সাধারণ মহিলাদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে কাজ করেছেন তিনি। শিখিয়েছেন স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার। তিন জনেই প্রার্থী হিসেবে যথেষ্ট যোগ্য। তবে এই কেন্দ্রে কুড়মি ভোট বড় ফ্যাক্টর। গত নির্বাচনে কুড়মি সমাজের ভোট বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে ভাগাভাগি হয়েছিল। তারপরেও গেরুয়া শিবির জয়ী হয়েছিল। আসন্ন নির্বাচনে কুড়মিরা যদি জোটবদ্ধ হয় তবে তৃণমূল ও বিজেপি দুই প্রার্থী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
মেদিনীপুর
গত লোকসভা ভোটে মেদিনীপুর কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৪৩৩ ভোট পেয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে তৃণমূলের মানস ভুইঞা পেয়েছিলেন ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৪৮১ ভোট। ৮৮ হাজার ৯৫২ ভোটে জয়ী হয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। কিন্তু এবারে দিলীপকে মেদিনীপুরে প্রার্থী করেনি গেরুয়া শিবির। এই আসনে দলের তরফে প্রার্থী করা হয়েছে অগ্নিমিত্রা পালকে। অন্যদিকে তৃণমূলের তরফে টিকিট দেওয়া হয়েছে জুন মালিয়াকে। অগ্নিমিত্রা পাল মেদিনীপুরে নতুন প্রার্থী হয়েছে। বামফ্রন্ট প্রার্থী করেছে সিপিআইএমের বিপ্লব ভট্টকে। তবে জোড়াফুল শিবিরের প্রার্থী জুন মালিয়া এর আগে মেদিনীপুর বিধানসভা থেকে জয়ী হয়ে বিধায়ক হন। অগ্নিমিত্রা পালের থেকে মেদিনীপুর অনেকটা বেশি রাজনৈতিকভাবে পরিচিত তৃণমূল প্রার্থীর কাছে। ফলে বিজেপি প্রার্থীর কাছে এই কেন্দ্র অনেকটা চ্যালেঞ্জের।
বাঁকুড়া
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকার। ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৩১৯ ভোট পেয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় হয়েছিলেন তৃণমূলের সুব্রত মুখোপাধ্যায়। জোড়াফুল শিবিরের প্রার্থী পেয়েছিলেন ৫ লাখ ৯৮৬ ভোট। ১ লাখ ৭৪ হাজার ৩৩৩ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন সুভাষ সরকার। বাঁকুড়া থেকে জয়ী হওয়ার পর সুভাষকে মন্ত্রিত্ব দিয়েছিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে গত বছর চাকরি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। আসন্ন লোকসভা ভোটে বিজেপির তরফে পুনরায় সুভাষ সরকারকে প্রার্থী করেছে গেরুয়া শিবির। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে টিকিট দেওয়া হয়েছে অরূপ চক্রবর্তীকে। অন্যদিকে বামফ্রন্ট এই কেন্দ্রে দাঁড় করিয়েছে নীলাঞ্জন দাশগুপ্তকে। পেশায় আইনজীবী নীলাঞ্জন এলাকায় বামপন্থী হিসেবে পরিচিত। মানুষের সুখে দুঃখে পাশে থাকেন। অন্যদিকে তৃণমূলের প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তীও পেশায় আইনজীবী। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই দলের সঙ্গে যুক্ত। ফলে মানুষের সঙ্গে তাঁরও নিবিড় যোগ রয়েছে। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ী হয়ে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি হয়েছিলেন অরূপ। গত বারের সাংসদ সুভাষ সরকারের সঙ্গে তাই তৃণমূল প্রার্থীর জোর টক্করের সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও অন্যান্য কেন্দ্র আপডেট আসছে…
Discussion about this post