২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ভিন্ন বক্তব্য মমতার। ইন্ডি জোটে আছেন কিনা পরে ধোঁয়াশা দুর করলেন নিজেই। তবে মমতার পাল্টি রাজনীতি নতুন কিছু নয়। বলছেন রাজনীতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান। প্রচারের মঞ্চ থেকে নিজের বয়ান বদলালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ইন্ডি জোটকে সব রকম সহায়তা করে বাইরে থেকে সরকার গড়ে দেওয়ার কথা দৃঢ়কণ্ঠে জানিয়ে ছিলেন প্রথমবার। যা নিয়ে তৎক্ষণাৎ শুরু হয়েছিল চুলচেরা বিশ্লেষণ। তাহলে কি ইণ্ডি জোট ক্ষমতায় এলে সরকারে থাকবেন না মমতা? এই প্রশ্ন ঘিরে এতটাই বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ছিল যে দলের নেতা ও অতি বড় সমর্থকদের মধ্যেও মুখ্যমন্ত্রীর কথা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল।
এরপর মমতা নিজেই সেই বিভ্রান্তি দুর করে জানান তিনি ইন্ডি জোটে রয়েছেন। তবে বাংলার সিপিআইএম ও কংগ্রেসের সঙ্গে কোন কম্প্রোমাইজ নয়, সেই কথাও মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি নেত্রী। দু-দিনে দুরকম কথা নিয়ে মমতাকে বিঁধতে ছাড়েননি বিরোধীরা। কখনও সেলিম কখনও দিলীপ। এক এক সময়ে এক এক কটাক্ষ ধেঁয়ে এসেছে।
মমতার সুর বদলের মধ্যে রাজনীতির অন্য ছক দেখছে বামেরা। আদতে বাইরে থেকে সমর্থনের কথা বলে বিজেপির সঙ্গে কিছুটা সদভাব বজায় রাখার চেষ্টা করছেন বাংলার মা-মাটি সরকারের প্রধান। আর সবটাই করছেন ভাইপো অভিষেককে জেলে যাওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য। তবে মমতার বাইরে থেকে কেন্দ্র সরকারকে সমর্থন নতুন কিছু নয়। তৃণমূলের পাশাপাশি অন্য দলকেও এই পথে হাঁটতে দেখা গিয়েছে অতীতে। ১৯৯৮ সালে বাজপেয়ীর ১৩ মাসের সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন জানিয়ে ছিলেন মমতা। সদ্য গঠন হওয়া তৃণমূল সেই সরকারকে ৭ জন এমপির সমর্থন দিতে পেরেছিল। বাজপেয়ীর সরকার ভেঙে যাওয়ার পর ফের ভোট হয় ১৯৯৯ সালে। তখন ফুল ফেজে কেন্দ্রের মসনদে বসে এনডিএ।
সেবার ৮ জন সাংসদের সমর্থন দিয়ে মমতা হয়েছিলেন দেশের রেল মন্ত্রী। অর্থাৎ মন্ত্রীসভায় গিয়েছিলেন তিনি ও তার দল। প্রথম ইউপিএ সরকারে বামেরা কংগ্রেসকে বাইরে থেকে সমর্থন করেন। এবং সেই সরকার গড়তে বামেদের অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এরপর ২০০৯। দ্বিতীয়বারের জন্য ফের ক্ষমতায় ফেরে ইউপিএ সরকার। ১৯ জন সাংসদ নিয়ে সেই সরকারকে সমর্থন করেন মমতা। আরও একবার দেশের রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। এরপর বাংলার মসনদে ২০১১ সালে ঘাসফুলের আগমণ। রেলমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন মমতা। ২০১২ সালে কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের সঙ্গে মমতার সম্পর্কের অবনতি হয়। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে কোন্দলের জেরে তাঁর দলের সাংসদরা ২০১২ সালে মনমোহনের মন্ত্রীসভা ত্যাগ করেন।
অর্থাৎ মমতার ‘পাল্টি’ রাজনীতি নতুন কিছু নয়। অতীতে অনেকবার অবস্থান বদলাতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সরকারের বিরোধিতা যার মূল লক্ষ্য সেই মমতাই একদিন জোট গড়েছিলেন এনডিএর সঙ্গে। ২০০১ সালে বাজপেয়ীর সরকার থেকে বেড়িয়ে গিয়ে ফের ফিরেছিলেন সেই সরকারেই। হয়েছিলেন কয়লা মন্ত্রী। তাই রাজনীতির অন্দরে ও বাইরে হামেশাই শোনা যায় আর যাকেই ভরসা করা যাক, দিদিকে অন্তত নয়।
Discussion about this post