আরও একটা ঘূর্ণিঝড় আসতে চলেছে। ইতিমধ্যেই বঙ্গোপসাগরে সেই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়ে গিয়েছে। নিয়ম অনুসারে এই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হয়েছে ডানা। আবহাওয়া দফতরের উপগ্রহগুলি প্রতিমুহূর্তে ঘূর্ণিঝড়ের উপর নজর রাখছে। আপাতত অনুমান, ঘূর্ণিঝড় ডানা ওড়িশার ভিতরকণিকা এবং ধামারা বন্দরের মধ্যবর্তী কোনও এলাকায় ল্যান্ডফল করবে। এও অনুমান করা হচ্ছে. ভয়ানক চেহারা নিয়ে ধেয়ে আসছে ডানা। ফলে এই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সিঁদূরে মেঘ দেখছে ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের দুটি নির্বাচিত সরকার। তবে ওড়িশা আর ঘূর্ণিঝড় যেন সমার্থক শব্দ হয়ে গিয়েছে সাম্প্রতিক কালে। বিগত ২৫ বছরে এক ডজনের বেশি ঘূর্ণিঝড়ের ঝাপটা সামলেছে ওড়িশা। সেই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্ববঙ্গ বা বাংলাদেশও এই সময়কালে বেশ কয়েকটি বিধ্বংশী ঘূর্ণিঝড়ের সাক্ষী থেকেছে। এবার আসছে ঘূর্ণিঝড় ডানা। কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে এই ঘূর্ণিঝড়?
১৯৯৯ সালে ওড়িশার বুকে আছড়ে পড়েছিল সুপার সাইক্লোন। তখন ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়ার প্রচলন ছিল না। তাই সেই অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়কে সুপার সাইক্লোন বলেই চিহ্নিত করা হয়। ওড়িশার জগৎসিংহপুর জেলা সেই ঝড়ে কার্যত ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সমুদ্রের অদূরে অবস্থিত পদমপুর গ্রামটি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল সেই সুপার সাইক্লোনে। সেবার কত প্রাণহানী হয়েছিল তার হিসেবও পায়নি ওড়িশা সরকার। কারণ বহু গ্রামবাসীর দেহ সমুদ্রে ভেসে গিয়েছিল বলে অনুমান। তবে ১৯৯৯ সালের সুপার সাইক্লোনে শুধুমাত্র জগৎসিংহপুর জেলাতেই প্রাণ হারিয়েছিলেন ৮,১১৯ জন। কটকে মৃত্যু হয়েছিল ৪৭১ জনের এবং কেন্দ্রাপাড়ায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ৪৬৯ জন। এবারও ঘূর্ণিঝড় ডানার অভিমুখ এই জগৎসিংহপুর জেলায়। ফলে আতঙ্কে কাটা হয়ে রয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
ওড়িশায় ১৯৯৯ সালের সুপার সাইক্লোনের ল্যান্ডফলের সময় গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬৭ কিলোমিটার। ৩৬ ঘণ্টা ধরে ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল সুপার সাইক্লোন। মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছিল। এরপরই নাম আসে সুপার সাইক্লোন ফাইলিনের। যা ওড়িশার গঞ্জাম জেলায় আছড়ে পড়েছিল ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর। পুরী, গঞ্জাম এবং খুর্দা জেলায় ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় ফাইলিন। গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার। এরপর ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর ওড়িশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ। এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল ওড়িশার তিনটি জেলা।
এর পরবর্তী সময় ওড়িশার বুকে আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় দায়ে, তিতলি। কিন্তু ২০১৯ সালের ৩ মে ঘূর্ণিঝড় ফণী ঘণ্টায় ২০৫ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে আছড়ে পড়ে ওড়িশার পুরীর কাছে। এই ঝড়েও প্রচুর মানুষের প্রাণহানী হয়েছিল। এরপর ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার। ২০২০ সালে দিঘার কাছে ১৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগ নিয়ে আছড়ে ঘূর্ণিঝড় আমপান। এর প্রভাবে ওড়িশার জগৎসিংহপুর, কেন্দ্রাপাড়া, ভদ্রক, বালেশ্বার জেলা সহ পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, হাওড়া, কলকাতা জেলায় ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২০২১ সালের মে মাসে ওড়িশার ভিতরকণিকার কাছে ঘুর্ণিঝড় ইয়াস ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতি নিয়ে আছড়ে পড়েছিল। আগের এই সমস্ত ঘুর্ণিঝড়গুলির তুলনায় ডানা অনেকটাই দুর্বল বলে মনে হবে। কারণ ঘূর্ণিঝড় ডানার ল্যান্ডফলের সময় গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার।
Discussion about this post