2022 সালের প্রথম দিকে যখন গ্রীষ্মকাল শুরু হয়েছিল৷ সেই বছরের মার্চ মাসেই রেকর্ড গরম পড়েছিল৷ ফলে গোটা দেশেই বিদ্যুতের ব্যবহারে একটি বিশাল চাহিদার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গরম থেকে বাঁচতে মানুষজন তাদের এসি এবং কুলারের উপর নির্ভর করা বাড়িয়ে দেয়। এর অর্থ ভারতের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে খাওয়ানোর জন্য কয়লার চাহিদাও বেড়ে যায়। যা দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৭০ শতাংশের বেশি চাহিদা তৈরি করে। কয়লার চাহিদা বাড়ার ফলে রেল ট্র্যাফিকও বেড়ে যায়। এর ফলে ট্রেনগুলি লেট করতে শুরু করে। প্রকৃতপক্ষে, সে বছর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে তাপবিদ্যুতকেন্দ্রগুলিতে কয়লা দ্রুত সরবরাহের সুবিধার্থে ভারতীয় রেলকে হাজারের বেশি যাত্রীবাহী ট্রেন বাতিল করতে হয়েছিল। এই তথ্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে ভারতীয় রেলে পণ্য পরিবহণের গুরুত্ব কতটা অপরিসীম।
অনেক ক্ষেত্রেই কয়লা, লৌহ আকরিক বা খনিজ তেল পরিবহণের জন্য যাত্রীবাহী ট্রেন দাঁড় করিয়ে রাখার অভিযোগ ওঠে। আসলে ভারতীয় রেলে বর্তমানে যাত্রীবাহী ট্রেনের থেকে পণ্য পরিবহণে বেশি রাজস্ব আসে। সেই কারণেই নরেন্দ্র মোদি সরকার পণ্যবাহী ট্রেন বা মালগাড়ির জন্য আলাদা রেললাইন পাতার প্রকল্প শুরু করেছিল। যার পোশাকি নাম, ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডর। অর্থাৎ পণ্য পরিবহণের জন্য আলাদা করিডর। এই লাইনে শুধুই মালগাড়ি চলাচল করবে। ফলে মেইন লাইনে যাত্রীবাহী ট্রেনের পথ সুগম হবে। বিলম্ব হবে না। ভারতীয় রেলের এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ ভারতের জিডিপি বৃদ্ধি করতে একটা বড় ভূমিকা গ্রহন করতে চলেছে। এমন তথ্যই উঠে এল অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায়। যেখানে বলা হয়েছে, ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডর বা ডিএফসি-র ফলে ভারতের জিডিপিতে বছরে ১৬ হাজার কোটি টাকা যোগ হবে। ভারতের ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড বা ডিএফসিসিআইএল সম্প্রতি এই গবেষণার রিপোর্টটি সামনে এনেছে। ওই রিপোর্টে বিশেষ করে উল্লেখ করা হয়েছে ওয়েস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের ( WDFC) কথা।
ওয়েস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরে মালগাড়ি পরিষেবা চালু হওয়ার পর পণ্য পরিবহণের খরচ অনেকটাই কমেছে। পাশাপাশি পরিবহণের সময়ও কমেছে। এর ফলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ০.৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে বলে দাবি করেছে ডিএফসিসিআইএল। ওই গবেষণায় উঠে এসেছে ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষ পর্যন্ত ভারতীয় রেলের রাজস্ব বৃদ্ধির ২.৯৪ শতাংশ হয়েছে এই ডেডিকেটেড পণ্য করিডরের জন্য। উত্তরপ্রদেশের দাদরি থেক মহারাষ্ট্রের মুম্বই পর্যন্ত ১৫০৬ কিমি বিস্তৃত ওয়েস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের কাজ ৯৩.২ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে। অপরদিকে পঞ্জাবের লুধিয়ানা থেকে বিহারের সোননগর পর্যন্ত ১৩৩৭ কিমি বিস্তৃত ইস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরে সম্পূর্ণরূপে মালগাড়ি ছুটছে, অপরদিকে দাদরি থেক মুম্বই পর্যন্ত ১৫০৬ কিমি বিস্তৃত ওয়েস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের কাজ ৯৩.২ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে। হয়েছে। কয়লাখনি, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সিমেন্ট কারখানা, লৌহ আকরিক, অন্যান্য খনিজ, স্টিল প্ল্যান্ট ও বন্দরগুলির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকছে এই ফ্রেট করিডর দুটির।
যেহেতু সম্পূর্ণ আলাদা লাইনে মালগাড়ি ছুটছে, সেহেতু এই ফ্রেট করিডরে মালগাড়ির গতিও অনেকটা বেশি। অত্যাধুনিক ও উন্নত মানের লাইন হওয়ায় এখানে মালগাড়ির গতি ঘন্টায় ১০০-১১০ কিমি। পাশাপাশি দুটি বা তিনটি মালগাড়ি একসাথে জুড়ে কয়েক কিমি লম্বা ট্রেন চালানো হয় ফ্রেট করিডরে। ফলে সময় ও টাকা দুই সশ্রয় হয় ফ্রেট করিডরে। বর্তমানে এই ডেডিকেটেড পণ্য করিডর দিয়ে দিনে গড়ে ৩২৫টি ট্রেন যাতায়াত করে। গত বছরের থেকে যা ৬০ শতাংশ বেশি, এবং তা ক্রমশ বাড়ছে। সেই কারণেই আগামীদিনে আরও দুটি ডেডিকেটেড পণ্য করিডর তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকার।
Discussion about this post